২৯ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ১০:৩৬:৫৭ পূর্বাহ্ন


‘পৃথিবীর ফুসফুসে’ বাসা বাঁধছে গভীর, গভীরতর অসুখ
তুরজিন তানজিম :
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০৫-২০২৩
‘পৃথিবীর ফুসফুসে’ বাসা বাঁধছে গভীর, গভীরতর অসুখ ‘পৃথিবীর ফুসফুসে’ বাসা বাঁধছে গভীর, গভীরতর অসুখ


ধীরে ধীরে ব্রাজিলে অ্যামাজন অববাহিকা থেকে লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে জঙ্গল। ঘটে চলেছে সবুজের অবক্ষয়। ‘পৃথিবীর ফুসফুসে’ বাসা বাঁধছে গভীর, গভীরতর অসুখ।

অ্যামাজন রেইন ফরেস্ট। লাতিন আমেরিকার অন্যতম প্রধান নদী অ্যামাজনের অববাহিকায় ব্রাজিলের মানাউস শহরকে কেন্দ্র করে সাড়ে ৫ লক্ষ বর্গকিলোমিটার জুড়ে অবস্থিত নিবিড় এই বনাঞ্চল। ঘটনাচক্রে এই রেইন ফরেস্টের ৬০%-ই ব্রাজিলের অন্তর্গত। কিন্তু আক্ষেপের বিষয়, বহু বিচিত্র উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের আশ্রয় এই অ্যামাজন রেইন ফরেস্ট ক্রমেই ক্ষয়ের মুখে। 

পাঁচ দশক আগে ব্রাজিল সরকারের পক্ষ থেকে অ্যামাজন অববাহিকায় জনবসতি গড়ে তোলায় উৎসাহ দেওয়া হয়। ধ্বংসের সূত্রপাত সেখান থেকেই। ১৯৬৪ সালে ব্রাজিলের সামরিক সরকার ক্ষমতায় এসে গড়ে তোলে। 

অ্যামাজন রেনফরেস্টের ভূগর্ভে গচ্ছিত আকরিক সংগ্রহ ও উন্নতমানের শিল্প গড়ে তোলার লক্ষ্যে সারা দেশ থেকে মানুষজন গিয়ে অ্যামাজন অববাহিকায় ঘাঁটি গাড়ে। শুরু হয় অবাধ বৃক্ষচ্ছেদন। জঙ্গল সাফ করে মানুষ গড়ে তোলে বসতি, জমি, আবাদ। যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসা আদিবাসীদের উৎখাত করা হয়। 

১৯৭০-এর দশকের গোড়া থেকে সরকারি তরফে নানারকম আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে অ্যামাজন অঞ্চলে সস্তা জমি কিনতে মানুষজনকে প্রলুব্ধ করে। ফলে সবুজের অবক্ষয় ঘটে চলে দ্রুত হারে। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার কথা বলে জঙ্গল কেটে তৈরি হয় হাইওয়ে। 

২০১৯ সালে ব্রাজিলের সাধারণ নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী হন অতি দক্ষিণপন্থী জাইর বোলসোনারো। নির্বাচনে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, ক্ষমতায় এসে প্রথমেই অ্যামাজন রেইন ফরেস্ট অঞ্চলে গাছ কেটে উন্নত মানের পরিকাঠামো তৈরি করবেন। বোলসোনারো জমানায় সেই বছরেই ভয়াবহ দাবানলের কবলে পড়ে অ্যামাজন রেনফরেস্ট। উপগ্রহ চিত্র থেকে জানা যায় এই সময়ে বনাঞ্চলের বিপুল অংশ সম্পূর্ণত ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। উপগ্রহ চিত্র থেকে আরও জানা যায়, ওই এক বছরেই (অর্থাৎ ২০১৯ সালে) অ্যামাজন রেইনফরেস্ট ৪৬ হাজার দাবানলের ঘটনা ঘটে যা আগের বছরের তুলনায় ১১১% বেশি।

পরিবেশবিদদের বক্তব্য, এইভাবে অ্যামাজন রেনফরেস্ট অঞ্চলে লাগাতার দাবানল ও নির্বিচারে গাছ কাটা হলে এলাকায় বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য প্রবলভাবে বিঘ্নিত হতে পারে। ‘পৃথিবীর ফুসফুসের’ ভবিষ্যতের কথা ভেবেই আশঙ্কার প্রহর গুনছেন তাঁরা।