২৮ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৫:০৪:৩৩ অপরাহ্ন


নতুন আশা জাগাচ্ছে: নবায়নযোগ্য জ্বালানি
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-০৪-২০২৩
নতুন আশা জাগাচ্ছে: নবায়নযোগ্য জ্বালানি ফাইল ফটো


নতুন বছরের শুরুতে বিদ্যুতে নানামুখী সুখবর দেয় সরকার। ইতোমধ্যে ভারতের আদানি গ্রুপের উৎপাদিত বিদ্যুৎ আসা শুরু করেছে। জাতীয় গ্রিডে যোগ হয়েছে রামপাল ও পায়রার বিদ্যুৎও। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদনে যাওয়ার তারিখ পিছানো হলেও আশা করা হচ্ছে আগামী বছরের শুরু থেকেই পাওয়া যাবে রূপপুরের বিদ্যুৎও। এতসবের মাঝে নতুন করে আশা জাগাচ্ছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি। বছরের শুরুতেই স্বাক্ষরিত হয়েছে সিরাজগঞ্জ ৬৮ মেগাওয়াট সোলার পার্কের। পাশাপাশি আরও অন্তত পাঁচটি প্রকল্পের কাজ শুরু হচ্ছে এ বছরই। এর মধ্যে রয়েছে বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পও। এসব প্রকল্প থেকে বছরে অন্তত ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে। ন্যূনতম মূল্যে এসব বিদ্যুৎ পাবেন গ্রাহকরা। ফলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির যে বৈশ্বিক সংকট তা অনেকটাই কাটবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।
যত পরিকল্পনা ॥ বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সঙ্গে ৬৮ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সিরাজগঞ্জ সোলার পার্ক প্রকল্পের পাওয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্ট (পিপিএ) এবং ইমপ্লিমেন্টেশন এগ্রিমেন্ট (আইএ) সই হয় চলতি বছরের জানুয়ারিতে। এ সময় জানানো হয়, এই প্রকল্প থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাণিজ্যিকভাবে জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে চলতি বছরের ডিসেম্বরে। এর কিছুদিন পর সৌর বিদ্যুতের সম্প্রসারণে ইন্টারন্যাশনাল সোলার এলায়েন্স (আইএসএ) এর সঙ্গে কান্ট্রি পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট সই করে বাংলাদেশ। এ চুক্তির আওতায় সৌর বিদ্যুতের সহযোগিতার ক্ষেত্র সৃষ্টি হবে। এর মাধ্যমে একটি সোলার রোডম্যাপ (২০২০-২০৪১) তৈরি হবে।

বাংলাদেশ রাইস রিসার্চ ইনিস্টিউট (ইজজও)’কে ২ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১২টি ট্রলি মাউন্টেড সোলার ইরিগেশন সিস্টেম, ২ কিলোওয়াট ক্ষমতার ১২টি পোর্টেবল সোলার ধান মাড়াই যন্ত্র এবং ১.৫ কিলোওয়াট ক্ষমতার সোলার ড্রিংকিং ওয়াটার প্লান্ট সরবরাহ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এছাড়াও পরিকল্পনায় রয়েছে, ২২ কিলোওয়াট ক্ষমতার দুইটি রুফটপ সোলার স্থাপন এবং যে কোনো একটি রেলওয়ে প্ল্যাটফর্মে রুফটপ সোলার প্রকল্প স্থাপন। চুক্তি স্বাক্ষরের সময় বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, ফ্লোটিং সোলার প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি সম্পাদন ও ফ্লোটিং সোলার প্রকল্প স্থাপনে সহায়তা।

পানি বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন দুটি ম্যানুয়াল স্লুইচ গেটকে ফ্লোটিং সোলারের মাধ্যমে অটো স্লুইচ গেটে রূপান্তর করা। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং দক্ষতা বৃদ্ধি, তথ্য বিনিময় এবং সর্বোত্তম অনুশীলনকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এছাড়া, সোলার পাওয়ারড কোল্ড স্টোরেজ স্থাপনও এ চুক্তির আওতায় সহায়তার ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে বলেও জানানো হয়। এর বাইরেও পাবনা ৬৪ মেগাওয়াট সোলার প্রকল্পের কাজ চলছে। যা থেকে আগামী বছরের জুন মাস নাগাদ জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে ৬৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। 
এর বাইরে বিদ্যুৎ বিভাগের পরিকল্পনা মোতাবেক জানা যায়, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়িতে একটি ৪০ মেগাওয়াট সোলার পার্ক প্রকল্পের পাশাপাশি পায়রা ৫০ মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পাবনার হেমায়েতপুরে ৩৫ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং ২৪৩ মেগাওয়াট সৌর অথবা বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য জমি খোঁজা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৯১০.৮২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হলেও সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চলমান রয়েছে আরও অন্তত ৩২টি প্রকল্পের কাজ। যা থেকে পাওয়া যাবে এক হাজার ৪৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। শুধু তাই নয়, প্রক্রিয়াধীন থাকা আরও ৭৬টি প্রকল্পের মাধ্যমে উৎপাদন হবে প্রায় ৪ হাজার ৬৩২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এর পাশাপাশি আমদানি প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়েছে নেপালের জলবিদ্যুতেরও। ফলে দেশে চলমান বিদ্যুৎ সংকট কাটতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। 
সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতা ॥ পাওয়ার সেলের তথ্যমতে, সরকারিভাবে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটের কথা বলা হলেও বর্তমানে সর্বোচ্চ উৎপাদন হচ্ছে ১৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এর বাইরে ভারতের আদানি থেকে আমদানি হচ্ছে প্রতিদিন অন্তত ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। রামপাল থেকে জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে আরও এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট। নেপাল থেকে ৫০০ মেগাওয়াটের জলবিদ্যুতের পাশাপাশি জিটুজি ভিত্তিতে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের আমদানি প্রক্রিয়া চূড়ান্ত। এসব মাধ্যমে দেশে বিদ্যুতের সরবরাহ ছাড়াবে ২১ হাজার ৩৬৬ মেগাওয়াটের বেশি। 
পাওয়ার সেলের সর্বশেষ তথ্যমতে, গত ১৭ এপ্রিল উৎপাদিত হয়েছে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ৬০৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। তবে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন জনকণ্ঠের কাছে বলেছেন, দেশে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে ১৮ হাজার মেগাওয়াট। এর প্রেক্ষিতে চাহিদা সর্বোচ্চ ১৫ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু এই চাহিদা পূরণে ডিজেলচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর ওপরও অনেকাংশে নির্ভরশীল হতে হচ্ছে। তাই নবায়নযোগ্য জ্বালানির এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে উচ্চমূল্যে ডিজেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন তো করতেই হবে না বরং চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের সরবরাহ থাকবে আরও বেশি। 
এগিয়ে চলছে বর্জ্য বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ ॥ বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, জ্বালানি সংকটে দেশে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। তাই নতুন করে জোর দেওয়া হচ্ছে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে। বাংলাদেশও জ্বালানি সংকটের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে জোর দেওয়া হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় কিছুদিন আগে স্বাক্ষরিত হয়েছে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের আরেকটি চুক্তি। নারায়ণগঞ্জের জালকুড়িতে বাস্তবায়িত হতে যাওয়া ৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এই বিদ্যুৎ  কেন্দ্রটি স্থাপন হলে এই কেন্দ্র থেকে ইউনিট প্রতি প্রায় ২০ টাকায় বিদ্যুৎ কেনা হলেও মাত্র ৫ থেকে ৬ টাকায় বিক্রি করা যাবে জানিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছেন, এই ঘাটতির সংস্থান করবে বিদ্যুৎ বিভাগ।


জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, এর মূল কারণ হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী চেয়েছেন দেশের সব বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটি নির্দিষ্ট কাজ হোক। তার এই আগ্রহের কারণেই এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। তিনি বলেন, শুধু তাই নয়, এই কেন্দ্রটি স্থাপন হলে নারায়ণগঞ্জের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অনেক ভালো অবস্থানে আসবে। এই কেন্দ্র থেকে নো পেমেন্ট নো-ইলেকট্রিসিটি অনুযায়ী বিদ্যুৎ নেওয়া হবে। এখান থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ২০ দশমিক ৯১ সেন্টে কিনবে পিডিবি। এই চুক্তি সইয়ের পর ৪৫৫ দিনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে বলেও জানান তিনি। 
স্থাপিত হচ্ছে বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্রও ॥ শুধু বর্জ্য বিদ্যুৎ নয়, জোর দেওয়া হচ্ছে বায়ু বিদ্যুতেও। এ লক্ষ্যে মোংলায় ৫৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করতে যাচ্ছে সরকার। এজন্য বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-বিপিডিবি গত রবিবার সন্ধ্যায় চীনের একটি কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে একটি চুক্তি সই করে। এই চুক্তির আওতায় কনসোর্টিয়াম অব ইনভিশন এনার্জি, জিয়াংসু কোম্পানি লিমিটেড, চায়না, এসকিউ ট্রেডিং অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, বাংলাদেশ ইনভিশন রিনিউয়েবল এনার্জি লিমিটেড, হংকংয়ের যৌথ উদ্যোগে এই মোংলা গ্রিন পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণ করবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে যদিও বায়ু থেকে মাত্র ২৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় কিন্তু তিনটি প্রকল্পের মাধ্যমে ১৪৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজ চলমান, ৫টি প্রকল্পের অধীনে আরও ২৩০ মেগাওয়াট বায়ুবিদ্যুত প্রক্রিয়াধীন, তবুও বায়ুভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আকার আরও বড় হবে।


আমেরিকার ন্যাশনাল রিনিউয়েবল এনার্জি ল্যাবরেটরি প্রদত্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা বিশেষত খুলনার দাকোপ, চট্টগ্রামের আনোয়ারা এবং চাঁদপুরের নদী মোহনার এলাকায় ১০০ মিটার উচ্চতায় বাতাসের গড়বেগ প্রতি সেকেন্ডে ৬ মিটারের বেশি, যা বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনে অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। পিডিবি জানায়, ২০ বছর মেয়াদি এই কেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কেনা হবে ১৩ টাকায়। প্রকল্পটির আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৬.৫৯৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। চুক্তি সইয়ের দুই বছরের মধ্য কেন্দ্রটি উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে।
বায়ুবিদ্যুতের আকার বড় করার বিষয়ে নসরুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির অন্যতম উৎস হিসেবে বায়ুবিদ্যুতের আকার দিনে দিনে আরও বড় হবে। উপকূলীয় অঞ্চলসহ দেশের ৯টি স্থানে বায়ুবিদ্যুতের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে বায়ুপ্রবাহের তথ্য-উপাত্ত (ডেটা) সংগ্রহ করে ওয়াইন্ড ম্যাপিং কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। সার্বিক উপযুক্ততা যাচাই করে বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। 
সৌর বিদ্যুতে সাফল্য ॥ এতসব নবায়নযোগ্য জ্বালানির মধ্যে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনে। সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনে ইতোমধ্যে সরকারি কোম্পানিগুলোকে লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। বেসরকারি উদ্যোক্তারাও সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে দৌড়ঝাঁপ করছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, ভারত তাদের দেশের ফসিল ফুয়েল বা জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে তার ১০ ভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে। এই নীতিতে দেশটিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অগ্রসর হয়েছে। যদিও বাংলাদেশে এ ধরনের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, কিন্তু তবুও পিছিয়ে নেই সরকার। পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী দেশে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় তিন হাজার ৬৬৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।
আরও যত পরিকল্পনা ॥ পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, সোলার পার্ক থেকে এক হাজার ৪০০ মেগাওয়াট, সোলার রুফটপ থেকে ৬৩৫ মেগাওয়াট, সোলার হোম সিস্টেম থেকে ১০০ মেগাওয়াট, সোলার সেচ প্রকল্প থেকে ৬৩৭ মেগাওয়াট, বায়ুবিদ্যুৎ থেকে ৬৩৭ মেগাওয়াট, বায়োমাস, বিশেষ করে ধানের তুষ থেকে ২৭৫ মেগাওয়াট, অ্যানিম্যাল ওয়েস্ট থেকে ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে। আরও ৬০ মেগাওয়াটের জলবিদ্যুৎ এবং ৩ মেগাওয়াটের হাইব্রিড বিদ্যুৎ কেন্দ্রও নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
হচ্ছে পৃথক নীতিমালা ॥ এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সরকারি অফিসের ছাদে সৌর বা সোলার প্যানেল স্থাপন করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পৃথক একটি নীতিমালা হচ্ছে বলেও জানা গেছে। নেট মিটারিংয়ের আদলে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, নেট মিটারিংয়ে গ্রাহক সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। সেখানে নিজস্ব ব্যবহারের অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির কাছে বিক্রি করার বা অফপিকে বিতরণ কোম্পানির কাছ থেকে সমপরিমাণ বিদ্যুৎ গ্রহণের সুযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেইন জনকণ্ঠকে বলেন, সাম্প্রতিক সংকটে আমরা ভালো করেই বুঝতে পেরেছি যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে আমাদের নিজেদের স্বয়ংসম্পূর্ণতা জরুরি। আর নিজেদের স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্জনে নবায়নযোগ্য জ্বালানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাদের জমি সংকট আছে। এই সংকট কাটাতেই নেট মিটারিংয়ের চিন্তা করা হয়েছিল। এখন দেশের ব্যক্তিগত মালিকানাধীন বাড়িগুলোর ছাদ নানা কাজে ব্যবহার হয়। কিন্তু সরকারি ভবনগুলোর ছাদে এমন কিছুই হয় না। সেগুলো অবহেলায় পড়েই থাকে। এই অবস্থায় আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে সরকারি ভবনের ছাদকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে সোলার প্যানেল স্থাপন করা যায়। আশা করি এই বিষয়ে দ্রুত একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সৌর বিদ্যুতের জন্য খসড়া রোডম্যাপ-২০৪১ নিয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে জানিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জনকণ্ঠকে বলেন, সোলার হোম সিস্টেমের মাধ্যমে ২ কোটির বেশি গ্রামীণ অফগ্রিডের জনগণ বিদ্যুতায়নের আওতায় এসেছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অন্যান্য নবায়নযোগ্য জ্বালানির মধ্যে সৌর বিদ্যুতের সম্ভাবনাই বেশি। কিন্তু জমি বেশি লাগে বিধায় সৌর বিদ্যুতের জন্য উদ্ভাবনী সমাধান প্রয়োজন। যদিও আমরা ছাদে সৌর এবং ভাসমান সৌর প্রযুক্তির দিকে এগুচ্ছি। এছাড়াও ছাদ সৌর বিদ্যুৎকে জনপ্রিয় করার জন্য নেট মিটারিং সিস্টেমও প্রবর্তন করা হয়েছে। আশা করছি এসব পদক্ষেপ সফল হবে।
শুধু সৌর বিদ্যুৎ নয় বাংলাদেশে বায়ুবিদ্যুৎ নিয়েও কাজ করার সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে নসরুল হামিদ বলেন, বায়ুর ম্যাপিং নয়টি সাইটে করা হয়েছে এবং খুব শীঘ্রই অফশোর বায়ুর সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা করা হবে। ২০৫০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদনের মিশ্রণের ৪০ শতাংশ করতে চাই। এজন্য বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনা হালনাগাদ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।