২৪ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ০৪:৩৮:১৫ অপরাহ্ন


বান্দার যে ৪ অভ্যাস আল্লাহর পছন্দ নয়
ধর্ম ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-০৪-২০২৩
বান্দার যে ৪ অভ্যাস আল্লাহর পছন্দ নয় ফাইল ফটো


মানুষ এমন অনেক কাজ করে, যা তার অন্তরকে পরকাল থেকে বিমুখ করে দেয়। অন্যায়ের দিকে ধাবিত করে। আর তাতে আল্লাহ তাআলা অসন্তুষ্ট হন। তারা আল্লাহর কাছে ঘৃণিত। আল্লাহ তাআলা এ সব মানুষকে পছন্দ করেন না, কারণ তারা তার অপছন্দনীয় কাজ করে থাকে। যে কাজগুলো মহান আল্লাহর কাছে ঘৃণিত সে কাজগুলো সম্পর্কে মানুষকে বারবার সতর্ক করা হয়েছে। সে কাজগুলো কী?

১. নামাজে অবহেলা করা: নামাজ পড়ে কিন্তু অবহেলা করে। এ অভ্যাস আল্লাহ পছন্দ করেন না। যেহেতু নামাজ ফরজ ইবাদত। তাই সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নামাজ পড়ে নেওয়া জরুরি। যে ব্যক্তি নামাজের ওয়াক্ত হওয়া সত্ত্বেও ইচ্ছাকৃতভাবে দেরি করে তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনা। আল্লাহ তাআলা এ সব নামাজিদের জন্য শাস্তির ভয় দেখিয়েছেন।

হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নামাজ নষ্ট করার অর্থ এই নয় যে, নামাজ সম্পূর্ণভাবে তরক করেছে। এর অর্থ হলো- সময় চলে যাওযার পর আদায় করা।

হজরত সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এর অর্থ পরবর্তী নামাজের সময় এসে পড়া পর্যন্ত বিলম্বিত করা।

যে লোক নামাজকে এভাবে বিলম্বিত করে বা অবহেলা করে তওবা না করেই মারা যায়, আল্লাহ তাকে জাহান্নামের‘গায়’নামক কূপে নিক্ষেপের হুমকি দিয়েছেন। এটা জাহান্নামের অত্যন্ত নীচ ও নোংরা একটি গহব্বরেরনাম।

২. কোরআন তেলাওয়াতের সময় কথা বলা: কোরআন তেলাওয়াত শুনে আবার এর মাঝে কথাও বলে। এটি আল্লাহর অপছন্দনীয় কাজ। তাই কোরআন তেলাওয়াত শোনা কিংবা তেলাওয়াত করার সময় কথা বলা যাবে না। বরং আল্লাহ তাআলার নির্দেশ হলো যখন কোরআন তেলাওয়াত করা হয় তখন চুপ থেকে তা মনোযোগ সহকারে শোনা। সুতরাং কোরআন তেলাওয়াতের সময় অযথা কথা বলা আল্লাহর অপছন্দনীয় কাজ।

হজরত আবু মুসা আশআরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কোরআন তেলাওয়াতকারী ঈমানদারের দৃষ্টান্ত কমলালেবুর মতো। এর স্বাদও উৎকৃষ্ট এবং সুগন্ধও উৎকৃষ্ট। আর যে মুমিন কোরআন তেলাওয়াত করে না তার দৃষ্টান্ত যেন খেজুরের মত। এটি খেতে সুস্বাদু বটে, তবে তার কোনো সুঘ্রাণ নেই। কোরআন তেলাওয়াতকারী পাপী ব্যক্তিটি সুগন্ধি ফুলের মতো। এর সুগন্ধ আছে বটে, তবে স্বাদে তিক্ত। আর যে অতি পাপী হয়ে আবার কোরআনও তেলাওয়াত করে না সে মাকাল ফলের মত। এ ফল স্বাদেও তিক্ত আর এর কোন সুগন্ধ নেই।’ (বুখারি ৭৫৬০)

৩. রোজা রেখে সহবাস করা: রোজাদার সেহরি খেয়ে রোজা রেখেছে। আবার এ অবস্থায় স্বামী-স্ত্রী একত্রে মিলিত হয়েছে। এটি আল্লাহর কাছে খুবই অপছন্দীয় কাজ। রমজানের রোজা ফরজ ইবাদত। আল্লাহ তাআলা মানুষের জন্য রমজান মাসজুড়ে রোজা রাখাকে ফরজ করেছেন। আবার এ ফরজ রোজা পালনে অন্য সময়ের বৈধ কাজ পানাহার ও হালাল স্ত্রীর সঙ্গে যৌন মিলন নিষিদ্ধ করেছেন। তাই রোজা রেখে স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করলে রোজা ভেঙে যায়। আর রমজানের রোজাসহ যে কোনো রোজা রেখে স্ত্রী সহবাস করা আল্লাহর কাছে অপছন্দনীয় কাজ।

রোজা থাকা অবস্থায় এমনটা হলে সহবাসকারী দুজনেরই কাজা-কাফফারা আদায় করতে হবে। প্রতিজনের জন্য ৬০ জন করে মোট ১২০ জন মিসকিনকে এক বেলা খাওয়াতে হবে। দুজনের পক্ষ থেকেই খাওয়াতে হবে। একজন খাওয়ালে হবে না। সেই সঙ্গে দুজনকেই আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে। এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

৪. গোরস্থানে হাসাহাসি করা: মুমিন, মুসলমান। আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে। কিন্তু কবরস্থানে বসে হাসাহাসি করে। আল্লাহ এসব বান্দার এ আচরণ অপছন্দ করেন। কেননা কবরস্থান মানুষকে পরকালের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। কবরস্থান এমন এক জায়গা, এটি মানুষকে মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়; অন্যায় থেকে বেঁচে থাকতে উদ্বুদ্ধ করে। সুতরাং কবরস্থানে বসে খোশ-গল্প, হাসি-ঠাট্টা নয়; আল্লাহ তাআলা হাসি-ঠাট্টাকারীদের পছন্দ করেন না।

সুতরাং মানুষের উচিত, নামাজের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নামাজ পড়া; কোরআন তেলাওয়াত করতে শুনলে তা মনোযোগের সঙ্গে শোনা এবং চুপ থাকা; রোজা অবস্থায় স্ত্রী সহবাসসহ যাবতীয় নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকা এবং কবরস্থানে বসে আড্ডা না দিয়ে পরকালের স্মরণে ইবাদত-বন্দেগিতে সময় অতিবাহিত করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক জীবন পরিচালনার তাওফিক দান করুন। আল্লাহ ও তার রাসুলের অপছন্দনীয় কাজ থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।