২৮ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৪:৪৬:৫১ অপরাহ্ন


আনোয়ারায় ৫৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে চলছে বেড়িবাঁধের কাজ
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০৪-২০২৩
আনোয়ারায় ৫৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে চলছে বেড়িবাঁধের কাজ ফাইল ফটো


আজ ভয়াল ২৯ এপ্রিল। আনোয়ারাবাসী তথা উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জন্য এক প্রলয়ংকারী রাত। ১৯৯১ সালের এই রাতে ঘূর্ণিঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে শুধু আনোয়ারায় ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারায়। সে দিনের স্বজন হারানো মানুষের আর্তচিৎকার যেন এখনো বাতাসে ভাসে। ২৯ এপ্রিল উপকূলবাসীর জন্য ভয়াল একটি কালো রাত। স্থানীয় ইউনিয়নের বাসিন্দা হাফেজ নুরুল আনোয়ার জানান, ২৯ এপ্রিলের কালো রাত যেন কারো জীবনে না আসে, সেই রাতে চোখের সামনে থেকে পানির স্রোত আমার মাকে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। আমি আমার মাকে হারিয়েছি। সেই শোক কোনও দিন ভুলতে পারবো না। সেই ভয়াল স্মৃতি আজো উপকূলবাসীকে কাঁদায়।

১৯৯১ থেকে ২০২৩ মাঝখানে পেরিয়ে গেছে ৩২টি বছর। ওই রাতে উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হেনেছিল স্মরণকালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস। রাতের অন্ধকারে মুহূর্তের মধ্যে আনোয়ারার উপকূলীয় ইউনিয়ন রায়পুর, জুঁইদন্ডী, বরুমচড়া, বারশত, বারখাইন, হাইলধরসহ পুরো উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ছোবলে বসতবাড়ি গাছপালা উপড়ে বিরাণভূমিতে পরিণত হয়েছিল। মানুষের লাশের সারি, স্বজনের চিৎকার এখনো কানে ভাসে।

মাঠের ফসল, পুকুরের মাছ, গবাদি পশুরাও রক্ষা পায়নি সেই তাণ্ডবে। আনোয়ারায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ। ১৯৯১ সালের পর থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত আনোয়ারাবাসী একপ্রকার অরক্ষিত ছিল। প্রতিবছর জোয়ারের পানিতে আনোয়ারার রায়পুর, জুঁইদন্ডী, বারশত, হাইলধর, পরৈকোড়া, চাতরী ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ ঝুঁকিতে বসবাস করতো। শত শত উপকূলবাসীর বসতঘর, দোকানপাট, মসজিদ মাদ্রাসা, ফসলি জমি নদী গর্ভে তলিয়ে গেছে। বছরের পর বছর অপেক্ষা করেও উপকূলবাসীর জন্য হয়নি সুরক্ষিত বেড়িবাঁধ।

এ অবস্থায় উপকূলবাসীকে রক্ষায় এগিয়ে আসেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি। তাঁর প্রচেষ্টায় বেড়িবাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। বিগত ২০১৮ সালে বেড়িবাঁধের উন্নয়নে ৫শ ৭৭ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এটি বাস্তবায়ন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। পরবর্তীতে আরো ১ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে বেড়িবাঁধ নির্মাণে নানান অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের।

সরেজমিনে আনোয়ারার উপকূলীয় এলাকাগুলো ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের বাইন্নার দীঘি, ফকির হাট, ঘাটকূল, বার আউলিয়া, উত্তর গহিরা, দক্ষিণ গহিরা, মধ্যম গহিরা, পরুয়াপাড়া ফুলতলী এলাকাসহ উপকূল জুড়ে চলছে বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ। বেড়িবাঁধের ব্লক নির্মাণ কাজ শেষ হলে পাল্টে যাবে উপকূলীয় মানুষের জীবনযাপনের চিত্র।

রায়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিন শরীফ জানান, ভূমিমন্ত্রীর উদ্যোগে উপকূল রক্ষায় বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। গত ৩ বছরের বেশি সময় ধরে এলাকায় জোয়ারের পানি ঢুকতে পারেনি।

আনোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী বলেন, ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল দিনটি ছিল আনোয়ারা তথা চট্টগ্রামের উপকূলবাসীর জন্য ভয়াল একটি দিন। ওই রাতে আনোয়ারার উপকূলীয় ইউনিয়ন রায়পুর, জুঁইদন্ডী, বারশত, বরুমচড়া, বারখাইন, হাইলধরসহ পুরো উপজেলায় পানিতে ভাসতে দেখা গেছে লাশ আর লাশ। আনোয়ারা হয় মৃত্যুপুরী। স্বজন হারানো মানুষের কান্না থামানোর কেউ ছিল না। যা স্মৃতিপট এখনো ভুলবার নয়।

তখন মরহুম আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ত্রাণ নিয়ে উপকূলে ছুটে গেছেন। শত শত মানুষের লাশ দাফন করেছেন। আজ তাঁরই সন্তান ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের প্রচেষ্টায় বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। এটি আনোয়ারার উন্নয়নের একটি বড় মাইলফলক।