২৮ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০২:৪৯:৫৪ অপরাহ্ন


পাঠ্য বইয়ে ৪২৮ ভুল সংশোধন আরো হচ্ছে
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০৪-২০২৩
পাঠ্য বইয়ে ৪২৮ ভুল সংশোধন আরো হচ্ছে ফাইল ফটো


চলতি শিক্ষাবর্ষের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাঠ্য বইয়ে ৪২৮টি ভুলের সংশোধন করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ২০২টি এবং সপ্তম শ্রেণিতে ২২৬টি ভুল সংশোধন করা হয়। দুই শ্রেণির ইংরেজি সংস্করণের (ভার্সন) বিভিন্ন বইয়ে ৮৫টি ভুল সংশোধন করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের জন্য বিশদ আকারে সংশোধনের কাজ চলছে।

গতকাল শুক্রবার এনসিটিবির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি থেকে এসব তথ্য জানা যায়।

বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, দুটি শ্রেণিতেই ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ অনুশীলন বইয়ে সবচেয়ে বেশি ভুল ছিল। এর আগে বইটি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার কারণে দুটি শ্রেণি থেকেই বইটির অনুসন্ধানী পাঠ প্রত্যাহার করে এনসিটিবি।

ওই দুই শ্রেণির বিভিন্ন বইয়ে বাক্য শেষ না হওয়া, কোথাও একটি লাইন না থাকা, ভুল শব্দ, বানান, বাক্য, ব্যাকরণ ও ক্রম ভুল থাকা, এ ছাড়া কোথাও কোথাও নতুন লাইন যুক্ত করা, এক পৃষ্ঠা থেকে ছক অন্য পৃষ্ঠায় নেওয়া, ছবির ব্যবহার, পুনরাবৃত্তি থাকায় লাইন বাদ দেওয়াসহ বিভিন্ন ত্রুটির সংশোধন করা হয়।

সংশোধনে দেখা যায়, ষষ্ঠ শ্রেণির বিভিন্ন বইয়ে শব্দ ও বানানগত ভুলসহ নানা কারণে মোট ২০২টি পরিবর্তন আনা হয়েছে। ডিজিটাল প্রযুক্তি বইয়ে বাংলাদেশের মানচিত্রে ময়মনসিংহ বিভাগটি ভুলক্রমে বাদ পড়েছিল। তা সংশোধন করা হয়েছে। এ ছাড়া ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ৭১টি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ে ৩৬টি, ইংরেজি বইয়ে ৩৫টি, জীবন ও জীবিকা বইয়ে ১৫টি, বিজ্ঞানে সাতটি, গণিতে পাঁচটি, বাংলা বইয়ে চারটি, শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ে পাঁচটি, ইসলাম শিক্ষা বিষয়ে সাতটি ও হিন্দু ধর্ম শিক্ষা বইয়ে ১৬টি ভুল সংশোধন করা হয়েছে।

একইভাবে সপ্তম শ্রেণির বিভিন্ন বইয়ে মোট ২২৬টি ভুল সংশোধন করা হয়েছে। এর মধ্যে ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞানে ৬৫টি, জীবন ও জীবিকা বিষয়ে ২৮টি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ে ২৪টি, বাংলা বইয়ে ২১টি, ইংরেজি বইয়ে ১১টি, গণিতে ২২টি, বিজ্ঞানে চারটি, ডিজিটাল প্রযুক্তি বিষয়ে পাঁচটি, শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ে ১৮টি, ইসলাম শিক্ষায় ৯টি, হিন্দুধর্ম শিক্ষায় ১২টি, খ্রিস্ট ধর্ম শিক্ষায় সাতটি সংশোধনী আনা হয়েছে।

এ বিষয়ে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা দুটি পর্যায়ে পাঠ্যপুস্তক সংশোধনের কাজ করছি। চলতি বছরের চার মাস চলে যাওয়ায় যেসব বিষয়ে সংশোধন আনা একান্ত প্রয়োজন, তা সংশোধন করা হয়েছে। এগুলো বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানো হচ্ছে। শিক্ষকরা সংশোধনী দেখে শিক্ষার্থীদের পড়াবেন। এ ছাড়া ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের জন্য বিশদ আকারে সংশোধনের কাজ চলছে।’

ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির প্রত্যাহার করা ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বইয়ের অনুসন্ধানী পাঠ নিয়ে ফরহাদুল ইসলাম বলেন, এ বছরের জন্য বইটি সংশোধন করা সম্ভব হয়নি। বইটির অনুশীলন পাঠে অনুসন্ধানী বইয়ের অনেক সংযোগ রাখা হয়েছিল। অনুসন্ধানী পাঠের এসব বিষয় সংশোধন করে অনুশীলন পাঠে যুক্ত করে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের জন্য নতুন আঙ্গিকে বই ছাপানো হবে।

ষষ্ঠ শ্রেণিতে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ অনুশীলন বইয়ের ‘ভালুক’ গল্প নিয়ে। গল্পে দাড়ি কাটা নিয়ে বারবার উক্তি থাকায় প্রশ্নবিদ্ধ হয় গল্পটি। সংশোধনে দাড়ির স্থলে চুল দেওয়া হয়েছে। আবার অনেক স্থান থেকে দাড়ি নিয়ে উক্তিগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে। বইটির ১৭ নম্বর পৃষ্ঠায় ১৬ ও ১৭ নম্বর লাইনে ছিল—‘তুই মোটেও ভালুক না। একটা বোকা হাদারাম মানুষ, যার দরকার দাড়ি চাছা আর উদ্ভট পশমের কোট খোলা আছে।’

সংশোধনে দেওয়া হয়েছে—‘তুই মোটেও ভালুক না বরং এমন বোকা মানুষ যার পোশাকের ঠিক নেই, চুলও ছাঁঁটেনি অনেক দিন।’

১৮ ও ১৯ নম্বর লাইনে ছিল—‘ভালুকটা একটা গবেট যার দরকার ভালো করে শেভ করা আর সে পরে আছে একটা পশমের কোট।’ এর স্থলে ‘ভালুকটা একটা গবেট, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে পোশাক পাল্টে আসো’ করা হয়েছে। ২০, ২৮ ও ২৯ পৃষ্ঠায় একাধিকবার দাড়ি চাছা ও শেভ করার কথা উল্লেখ ছিল, যা বাদ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে শিক্ষাক্রম কোর কমিটির সদস্য (ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণি) অধ্যাপক আবুল মোমেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ষষ্ঠ শ্রেণির ভালুক গল্পটি একটি বিদেশি গল্পের অনুবাদ। দাড়ি কাটলে যদি আমাদের গায়ে লাগে, তবে সেটা মুশকিল। আমরা তো ভাবি না এভাবে কেউ ভাবে। সরকারও মনে করেছে এখানে একটু তাদের কথা শুনি। এ জন্য সংশোধন করা হয়েছে। একটা পরিণত বুদ্ধির সমাজে এ রকমটা হবে না।’

হুবহু নকল করে বইয়ে লেখা সংযুক্ত করার বিষয়ে তিনি বলেন, পাঠ্য বই বিভিন্ন জায়গা থেকে নিয়ে রচনা করা যেতে পারে। এটা ব্যক্তিগত প্রবন্ধ না যে নিজের লেখা হতে হবে। তথ্য-উপাত্ত নানা জায়গা থেকে নেওয়া যেতে পারে।

শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ আবুল মোমেন বলেন, ‘এই শিক্ষাক্রমে নতুন পদ্ধতিতে বই লিখতে হয়েছে। যাঁরা লিখেছেন, তাঁদের বুঝতে সময় লেগেছে। এনসিটিবি থেকেও হয়তো দক্ষতার ঘাটতি ছিল। আমি যা দেখেছি, সময়ের ঘাটতি ছিল। এ কারণে বইগুলো ভালোভাবে এডিট করা হয়নি। যাঁরা লিখেছেন তাঁরাও সময়ের কারণে দেখার সময় পাননি।’

ষষ্ঠ শ্রেণির বিভিন্ন বইয়ে থাকা ভুলের মধ্যে দেখা যায়, বিজ্ঞান বইয়ের ২০ নম্বর পৃষ্ঠায় আছে ‘নাইট্রোজেন গ্যাস আগুন নেভানোর কাজে ব্যবহার করা হয়।’ এর পরিবর্তে হবে ‘কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস আগুন নেভানোর কাজে ব্যবহার করা হয়।’ ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞানের ৮ নম্বর পৃষ্ঠার ১৩ নম্বর লাইনে আছে ‘পরের জন্য খাটায় উৎসাহ পেয়ে গেছে।’ সংশোধনের পর করা হয়েছে ‘মানুষের জন্য কাজ করার উৎসাহ পেয়ে গেছে।’ ১৩ নম্বর পৃষ্ঠার ২৪ নম্বর লাইনে ‘তত্তোর’-এর স্থলে করা হয়েছে ‘তত্ত্ব’।

বাংলা বইয়ের ১১৫ নম্বর পৃষ্ঠার ৫ নম্বর লাইনে ‘হড়াহড়ি’ পরিবর্তন করে ‘কোলাহল’ করা হয়েছে। ইংরেজি বইয়ের ১৭ নম্বর পৃষ্ঠার ৮ নম্বর লাইনে ‘এজেস’ বানান ঠিক করা হয়েছে। ৮২ পৃষ্ঠার ১৭ নম্বর লাইনে ‘কনভারসেশন’-এর স্থলে ‘কনভার্সান’ লেখা হয়েছিল।  ১০৪ নম্বর পৃষ্ঠার ১০ নম্বর লাইনে ‘মনে পড়ে’-এর স্থলে ছিল ‘মনে পরে’। ইসলাম শিক্ষা বইয়ের ২১ পৃষ্ঠার ১৪ নম্বর লাইনে জান্নাতের স্তরে ‘জান্নাতুন নাঈম’-এর পরিবর্তে ‘দারুন নাঈম’ লেখা ছিল। ৪৫ পৃষ্ঠার ১১ নম্বর লাইনে ‘কিছুক্ষণ’-এর জায়গায় ‘কছুক্ষণ’ লিখা ছিল।