০৫ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ১০:২১:৩৮ অপরাহ্ন


আওয়ামী লীগ শাসনামলেই গণতন্ত্র চর্চা হয়
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০৪-২০২৩
আওয়ামী লীগ শাসনামলেই গণতন্ত্র চর্চা হয় ফাইল ফটো


আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে একমাত্র আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র চর্চা করে। আর আওয়মী লীগের শাসনামলেই সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সমুন্নত থাকে। বৃহস্পতিবার জাপানে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় টোকিওর ওয়েস্টিন হোটেলে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

দেশে গণতন্ত্র নেই-এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা (বিএনপি) বলছে গণতন্ত্র নেই, তো মিলিটারি ডিকটেটর থাকলে কি গণতন্ত্র থাকে? ভোট চুরি করলে কি গণতন্ত্র থাকে? হ্যাঁ-না ভোট কি গণতন্ত্র? কারচুপি করা কি গণতন্ত্র?’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আমলে ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরি, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, আইডি কার্ড ও ভোটের একটা সুস্থ ব্যবস্থা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় যতগুলো উপ-নির্বাচন হয়েছে, যতগুলো স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়েছে-প্রত্যেকটি সুষ্ঠুভাবে করতে পেরেছি। কিন্তু তাদের সময়ের নির্বাচনগুলোতে কী হয়েছে?’

নতুন রাষ্ট্রপতির কাছে বিদায়ি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ দুই টার্ম রাষ্ট্রপতি ছিলেন। এটা একটি ইতিহাস। বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো রাষ্ট্রপতি এতদিন ক্ষমতায় থাকতে পারেননি, সুষ্ঠুভাবে বিদায় নিতে পারেননি। জাতির পিতাকে তো হত্যা করেই ফেলল। এরপর যারা এলো তাদের একে একে অস্বাভাবিকভাবেই বিদায় নিতে হয়েছিল।’

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সময় সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থাকে বলেই মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে আমরা একেবারে রাজকীয় সম্মান দিয়ে বিদায় দিয়েছি। নতুন রাষ্ট্রপতিকেও আগে আমরা নির্বাচন করিয়েছি। তারপর ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছে। এটাই গণতান্ত্রিক চর্চা, এটাই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। এটাকে গণতন্ত্র বলে। পোঁটলা দিয়ে বের করে দেওয়াটা গণতন্ত্র নয়।’

শেখ হাসিনা প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি বলে কি দেশে গণতন্ত্র নেই? ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট মাত্র ৩০টি সিট পেয়েছিল। বাকি সিটগুলো আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট পেয়েছিল বলে কি দেশে গণতন্ত্র নেই?’

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দেশের উন্নয়ন করেছে। আর ওরা আগুন সন্ত্রাস করেছে। ওরা কোন মুখে নির্বাচন করবে, কোন মুখে মানুষের কাছে ভোট চাইবে। তাই ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

৪ জাপানি নাগরিককে ‘ফ্রেন্ডস অব লিবারেশন ওয়ার’ অনার প্রদান : এর আগে বিকালে টোকিওর রাজকীয় অতিথি ভবন আকাসাকা প্যালেসে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা চার জাপানি নাগরিককে ‘ফ্রেন্ডস অব লিবারেশন ওয়ার অনার’ প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী।

এ সময় তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ কখনো দুঃসময়ের বন্ধুদের ভোলে না। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা আমাদের পাশে ছিলেন, যারা সহযোগিতা করেছেন, আমি সরকারে আসার পর তাদের খোঁজ করেছি, খুঁজে বের করেছি এবং সাধ্যমতো সবাইকে আমরা সম্মান করার চেষ্টা করেছি। সম্মান দিয়েছি।’

মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা ব্যক্তিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বাঙালি। আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি অনেক রক্তের বিনিময়ে। কিন্তু আমাদের পাশে থেকে যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। তাদের এবং তাদের অবদানের কথা আমরা ভুলতে পারি না।

অনুষ্ঠানে সম্মাননাপত্র পাঠ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা। সম্মাননা পাওয়া চারজন হলেন-তাদাতেরু কোনোই, পেমা গ্যালপো, হিদাও তাকানা ও তাইঝো ইচিনোসে। তাদের মধ্যে তাদাতেরু কোনোই ও পেমা গ্যালপো জীবিত আছেন। তাদাতেরু কোনোই ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রসের প্রেসিডেন্ট ছিলেন এবং পেমা গ্যালপো একজন শিক্ষাবিদ। অপর দিকে প্রয়াত হিদাও তাকানা ছিলেন জাপানের রাজনীতিক এবং তাইঝো ইচিনোসি ছিলেন সাংবাদিক। চারজনের প্রত্যেককে একটি প্রশংসা সনদ, কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ মানপত্র ও সোনার একটি ক্রেস্ট উপহার দেওয়া হয়। এছাড়া জাপানিজ ভাষায় অনূদিত বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত জীবনীসহ আরও কয়েকটি বই ও কিছু উপহার দেওয়া হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আজকে আরও চারজন মহান বন্ধুকে সম্মান জানিয়েছে, যারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তারা আমাদের অসহায় মানুষের জন্য মানবিক ত্রাণ, চিকিৎসা সুবিধা পাঠিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখায় ইতোপূর্বে সম্মাননা পাওয়া আটজন জাপানি নাগরিকের কথাও স্মরণ করেন তিনি। আটজনকে বিভিন্ন দফায় ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন-তাকাশি হায়াকাওয়া, তায়োশি নারা, নায়োকি উসি, তাকাশি সুজুকি, তোমিও মিজোকামি, হেগি নাকামোরাও, কেন আরিমিতসু ওয়াসেদা ও ইউইচি ফুজিওয়ারা।

শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধের ওই সংকটময় মুহূর্তে, জাপানি বন্ধুরা আমাদের দুর্দশা বুঝতে পেরেছিলেন এবং মানবতার সেবায় এগিয়ে গিয়েছিলেন। এজন্য তারা (জাপানিরা) অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলেন, কিন্তু পিছিয়ে যাননি। তাদের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা আমাদের আত্মাকে পুনরুজ্জীবিত করেছিল। সবচেয়ে অবিস্মরণীয় বিষয় হলো জাপানি স্কুলের বাচ্চাদের কথা, যারা আমাদের সাহায্য করার জন্য তাদের টিফিনের অর্থ দান করেছিল।

জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাপান-বাংলাদেশ বন্ধুত্ব অটুট থাকুক। আমরা শুধু আমাদের বন্ধুদের সম্মান করি না, জাপানের সঙ্গে বন্ধুত্বের বন্ধনও উদযাপন করি। জাপানের সঙ্গে গত ৫০ বছর ধরে চলে আসা বন্ধুত্ব আগামী প্রজন্ম আরও এগিয়ে নেবে-এই প্রত্যাশাই করি।’

ঢাকায় বিশ্বমানের শিশু লাইব্রেরি নির্মাণ করবে জাপান : তাদাও অ্যান্দো আর্কিটেক্ট অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের মাধ্যমে ঢাকায় একটি বিশ্বমানের শিশু লাইব্রেরি নির্মাণ করবেন বিশ্ববিখ্যাত স্থপতি তাদাও অ্যান্দো। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বিকালে টোকিওতে জাপানের রাজকীয় অতিথি ভবন আকাসাকা প্যালেসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাদাও অ্যান্দোর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সৌজন্য সাক্ষাৎ করে।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ঢাকায় বিশ্বমানের একটি শিশু লাইব্রেরি স্থাপনে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর এবং তাদাও অ্যান্দো আর্কিটেক্ট অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। এতে সই করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান ও স্থপতি তাদাও অ্যান্দো। শিশু লাইব্রেরি নির্মাণে বাংলাদেশকে অনুদান দেবে জাপান। পরে এ বিষয়ে ব্রিফ করেন প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার নজরুল ইসলাম।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন, প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিরক্ষা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত : দুই প্রধানমন্ত্রী আগামী ৫০ বছর এবং তার পরেও দুই দেশের যাত্রায় নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য একটি ‘কৌশলগত অংশীদারত্ব’ হিসাবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও উন্নত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার এক যৌথ বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়।

এতে বলা হয়, উভয় নেতা সহযোগিতা, বিশেষ করে এই অঞ্চলে এবং এর বাইরে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য সহযোগিতা, পারস্পরিক সুবিধা এবং আঞ্চলিক সমৃদ্ধির জন্য অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে আরও গভীরতর করার এবং সাংস্কৃতিক সহযোগিতার সম্প্রসারণ এবং জনগণের মধ্যে আদান-প্রদানের দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করেছেন।

বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাপানের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে বৈঠক হয়। দুই প্রধানমন্ত্রী জাপান মেরিটাইম সেলফ-ডিফেন্স ফোর্সের (জেএমএসডিএফ) কয়েকটি জাহাজের চট্টগ্রামে সাম্প্রতিক সফর এবং জাপান সেলফ-ডিফেন্স ফোর্স ও বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের পারস্পরিক সফরকে স্বাগত জানান।

দুই নেতা বিভিন্ন জাহাজ ও বিমানের পারস্পরিক সফর, ইউনিট-টু-ইউনিট বিনিময়, প্রশিক্ষণ কর্মসূচি এবং শুভেচ্ছা অনুশীলনের মতো নিরাপত্তা সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে সম্মত হয়েছেন। এ ছাড়া অদূরভবিষ্যতে টোকিওতে দূতাবাসে প্রতিরক্ষা শাখা এবং ঢাকায় দূতাবাসে জাতীয় নিরাপত্তা শাখা খোলার বিষয়টি বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।

অধিকন্তু, তারা নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদার করার সম্ভাব্য উপায় চিহ্নিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক ও প্রতিরক্ষা কর্তৃপক্ষের মধ্যে সংলাপ বাড়ানোর বিষয়ে একমত হয়েছেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা নতুন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল, জাতীয় প্রতিরক্ষা কৌশল এবং প্রতিরক্ষা বিল্ডআপ প্রোগ্রাম অনুযায়ী প্রতিরক্ষা সক্ষমতা শক্তিশালীকরণ এবং কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করার জন্য জাপানের প্রচেষ্টা তুলে ধরেন। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফোর্সেস গোল ২০৩০ এর অধীনে সশস্ত্র বাহিনীকে আরও আধুনিক করার জন্য বাংলাদেশের পরিকল্পনা ও উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। এ ছাড়া দুই প্রধানমন্ত্রী আঞ্চলিক নিরাপত্তায় অবদান রাখার জন্য দুই দেশের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন।