রমজানে পরিশুদ্ধ জীবন পেয়েছে রোজাদার মুমিন মুসলমান। রমজানের শিক্ষায় বছরের বাকি ১১ মাস গুনাহমুক্ত জীবন অতিবাহিত করবে তারা। রমজানের গুণগুলো নিজেরে মধ্যে বাস্তবায়ন করবে। শান্তি ও নিরাপত্তার জীবন কাটাবে। ১০টি অভ্যাস ধরে রাখতে পারলে সৌভাগ্যবান হবে মুমিন মুসলমান। সেই ১০ অভ্যাস কী?
রমজান পরবর্তী জীবনে রোজাদার পাপমুক্ত জীবন গঠনে নিয়োজিত হবেন। এ রমজান থেকে মুমিন বান্দা মহান প্রভুর অনন্য ৩টি বিশেষ গুণসহ ১০টি অভ্যাস শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। মাহে রমজান মানুষকে মহান প্রভুর যে তিনটি গুণের শিক্ষা দিয়েছে, তাহলো-
১. কথা কম বলা।
২. অল্প ঘুমের অভ্যাস আর
৩. কম খাবার খাওয়ার অভ্যাস।
রোজাদারের ১০ অভ্যাস: রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাতের মাস রমজানে রোজাদার বান্দা গরিব-অসহায় মানুষের ক্ষুধার যন্ত্রণা অনুভব করেছেন। আল্লাহ তাআলা যে উদ্দেশ্যে বান্দার প্রতি রোজা ফরজ করেছেন, সে মোতাবেক রমজানে রোজাদার যে প্রশিক্ষণ পেয়ে ধন্য হয়েছেন, নিজেদের জীবন করেছেন আলোকিত, তাহলো-
১. আল্লাহর ভয় অর্জন: রোজা হচ্ছে আত্মিক ইবাদত যাকে বাহ্যিক দৃষ্টিতে দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। তাই রোজাদার মনে প্রাণে আল্লাহকে ভয় করে এবং ভালোবেসেই আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নে রোজা রাখে। আল্লাহকে ভয় করেই রোজাদারের সারাদিন পানাহার ত্যাগ করেছেন। তাকওয়া অর্জনে ব্রতী হয়েছেন। এ ভয় বা তাকওয়ার ঘোষণাই আল্লাহ তাআলা এভাবে দিয়েছেন-
'হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছিল, যাতে তোমরা তাকওয়াবান হতে পার।' (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৩)
রোজাদারের এ ভয় এবং ভালোবাসা বছরের বাকি ১১ মাস বিরাজমান থাকা জরুরি। তবেই মুমিন বান্দার রমজানের রোজার প্রশিক্ষণের সফলতা লাভ করবে।
২. ধৈর্যের শিক্ষা: রমজান মাসকে সবরের মাস বলা হয়। রোজাকে সবরের অর্ধেক বলা হয়েছে। এ মাসেই বান্দা সবরের শিক্ষা লাভ করে। সবরকারীর জন্য রয়েছে অগণিত পুরস্কার। রোজা মানুষকে আল্লাহর হুকুম পালনে ধৈর্যশীল ও পরমসহিষ্ণু হতে শেখায়। আল্লাহ তাআলা বলেন-
'বলুন, হে আমার বিশ্বাসী বান্দাগণ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর। যারা এ দুনিয়াতে সৎকাজ করে, তাদের জন্যে রয়েছে পুণ্য। আল্লাহর পৃথিবী প্রশস্ত। যারা সবরকারী, তারাই তাদের পুরস্কার পায় অগণিত।' (সুরা যুমার : আয়াত ১০)
সারাদিনের প্রচণ্ড ক্লান্তি সত্বেও ক্ষুধা নিবারণে ইফতারের অপেক্ষায় সবর করে রোজাদার। মানুষ চাইলেই লুকিয়ে পানাহার করতে পারে; আল্লাহর ভয়ই মানুষকে লুকিয়ে খাওয়া বা পান করা থেকে বিরত রাখে।
৩. নিয়মানুবর্তিতার শিক্ষা: রোজা মানুষকে শৃংখলিত জীবনের দিকে পথ-নির্দেশ করে। রোজায় মানুষ যেমন সময় মতো সাহরি, সময় মতো জামাআতে নামাজ আদায় কিংবা সময় মতো মসজিদে উপস্থিতি; সময় মতো ইফতার; সময় মতো তারাবিহ; নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট কাজগুলো করতে শেখায় একজন মানুষ যদি রমজান মাসকে ফলো করে, তবে বাস্তবজীবনে একজন মানুষ নিয়ম-নিয়ন্ত্রিত সফল মানুষে পরিণত হতে পারে।
৪. পরিশ্রমী করে তোলে: রোজা মানুষকে অলসতা দূর করতে পরিশ্রমী হতে শেখায়। রোজাদার দিনের বেলায় পানাহার ত্যাগ করা সত্ত্বেও নামাজসহ অন্যান্য ইবাদাত-বন্দেগির পাশাপাশি সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করে। সারা দিন রোজা রেখে রাতের বেলায় তারাবিহ, তাহাজ্জুদ নামাজ আদয়, কুরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার করে। আবার শেষ রাতে ওঠে সাহরি খাওয়া ও ফজর আদায় করা অনেক কষ্টকর। এই রোজা থেকেই মানুষ পরিশ্রমী হতে শেখায়।
৫. সত্যবাদী হয়ে ওঠে রোজাদার: মানুষের সব খারাপ চরিত্র বা আচরণ ধুয়ে-মুছে সুন্দর জীবন-যাপনে অভ্যস্ত করে তোলে রোজাদার। যে ব্যক্তি রোজা রাখেন তিনি কখনও মিথ্যা কথা বলতে পারেন না। মিথ্যা বলতে গেলে নিজে থেকেই একটা খারাপ অনুভূতি জাগ্রত হয়। তাছাড়া একজন রোজাদার কখনও সজ্ঞানে কোনো অসত্য কিংবা মিথ্যা কথা বলতে পারেন না। কুরআন নাজিলের মাসে কুরআনের বরকতে আল্লাহর রহমতে রোজাদার হয়ে ওঠেন সত্যবাদী।
৬. দায়িত্বশীল হতে শেখায় রোজা: রমজানের রোজা একজন রোজাদারকে সব অন্যায়, জুলুম, অত্যাচার নির্যাতনমূলক কাজ-কর্ম করা থেকে বিরত রাখে। পরিবার ও সমাজে যাতে কোনো গর্হিত কাজ না হয় সে ব্যাপারেও সতর্ক দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকে। রোজাদার কাজ-কর্মে, অফিস-আদালতে, ব্যবসা-বাণিজ্যে সব জায়গায় নিজেকে যথাযথ দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট রাখে। যা রমজান ব্যতিত অন্য সময় সচারচর দেখা যায় না। এ জন্যই আল্লাহ বান্দার জন্য এক মাসের রোজা ফরজ করেছেন; যাতে বান্দাহ বাকি ১১ মাস রমজানের প্রশিক্ষণে আলোকিত জীবন-যাপন করতে পারে।
৭. নামাজের অভ্যাস গঠন: রমজানের আগে যে মানুষটি নামাজ পড়তেই অলসতা করত। রমজানে সেই মানুষটি নিজে নামাজ পড়ে এবং অপরকেও নামাজের আহ্বান করে। যা আল্লাহর একান্ত অনুগ্রহ। এ কারণেই রমজান আসলে মানুষ মসজিদমুখী হয়। মসজিদ ফিরে পায় প্রকৃত যৌবন। নামাজের প্রথম কাতারে দাঁড়ানোর প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে। এ সবই রমজানের রোজার আলোকিত শিক্ষা। যা পরেও মানুষের জীবনে বাস্তবায়িত থাকে।
৮. কোরআন অধ্যয়ন ও বাস্তবায়ন: রমজান আসলেই মানুষ আল্লাহর রাস্তায় বেশি বেশি দান-সাদকা করেন। সম্পদশারী ব্যক্তি জাকাত আদায় করেন। ব্যক্তি পরিবার ও সমাজরে লোকজন পরিবারের পক্ষ থেকে ফিতরা আদায়ে মনোযোগী হয়। কুরআন ও হাদিস অনুযায়ী সব বিধিবিধান বাস্তয়নে এগিয়ে আসে। সমাজ ফিরে পায় সোনালী জীবন। অপরাধ-কুসংস্কার দূরভীত হয় সমাজ থেকে। কুরআনের বিধান বাস্তবায়নের ফলে সমাজ জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে সুখ ও শান্তি বিরাজ করে। যা এক অতুলণীয় উপমা।
৯. গুনাহমুক্ত থাকার প্রশিক্ষণ: আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদেরকে বিগত বছরের সব গোনাহ থেকে মুক্ত করে নিষ্পাপ মাছুম করে দেয়া জন্য ঘোষণা দিয়েছেন। এ কারণেই মানুষ রমজানে আল্লাহর হুকুম পালন করে গোনাহ মাপের জন্য দিনের বেলায় পানাহার-যৌনাচার ত্যাগ করে এবং রাতের বেলায় তারাবি-তাহাজ্জুদ-সাহরির মতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত পালন করে। পক্ষান্তরে আল্লাহ তাআলাও প্রত্যেক বান্দাকে গোনাহ থেকে মুক্তি দিতে এগিয়ে আসেন। যার বাস্তবায়ন শুধুমাত্র রমজানেই সম্ভব। কেননা আল্লাহ তাআলা বান্দার বিগত জীবনের গোনাহ ক্ষমা করে দিতে হাজার মাসের চাইতেও উত্তম রাত পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর রেখেছেন।
১০. আল্লাহর নৈকট্য অর্জন: রোজাদারের জন্য সেরা প্রাপ্তি ও নেয়ামত হলো জান্নাতে মহান আল্লাহর দিদার বা সান্নিধ্য। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা দিয়েছেন।
'রোজা আমার জন্য রাখা হয় আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব। কেননা আল্লাহ তাআলা সব কাজের প্রতিদান দুনিয়াতে ঘোষণা করেছেন শুধুমাত্র রোজার প্রতিদান ব্যতিত। রোজাদারের প্রতিদানের চূড়ান্ত ঘোষণা দিবেন- মহান আল্লাহ তাআলা। যার সর্বোচ্চ পর্যায় হচ্ছে আল্লাহর দিদার।'
আল্লাহ তাআলা মুমিন মুসলমানকে রমজানের সব প্রশিক্ষণগুলো বছরের বাকি ১১ মাস নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। কুরআনের বিধানগুলো যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।