০৫ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ১০:৩৮:৪৪ অপরাহ্ন


ঈদে দুই লাখ কোটি টাকার বাণিজ্য
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০৪-২০২৩
ঈদে দুই লাখ কোটি টাকার বাণিজ্য ফাইল ফটো


মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বড় দুটি উৎসবের একটি হলো ঈদুল ফিতর। ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সঠিক কোনো পরিসংখ্যান না

থাকলেও এ বছর দুই লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি লেনদেন হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, অতিরিক্ত গরম ও বিভিন্ন বাজারে অগ্নিকান্ডের কারণে আশানুরূপ বেচাকেনা হয়নি।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি বলছে, সারা দেশে মুদিখানা থেকে শুরু করে বড় শপিংমলগুলোতে এক লাখ ২৫ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। অতিরিক্ত গরম ও বিভিন্ন বাজারে অগ্নিকান্ডের নেতিবাচক প্রভাব না থাকলে এক লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হতে পারত।

এর বাইরেও যাতায়াত বা যোগাযোগ খাতে ১০ হাজার কোটি, ভ্রমণ খাতে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি, ইলেকট্রনিক্স চার হাজার কোটি, স্থায়ী সম্পদ ক্রয় এক হাজার কোটি, পবিত্র ওমরাহ পালন তিন হাজার কোটি ও অন্যান্য খাতে আরও এক হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে ঈদ কেন্দ্রিক অর্থনীতির আকার অন্তত ২ লাখ কোটি টাকা।

অর্থনীতিবিদদের মতে, ১৭ কোটি মানুষের জন্য ঈদে পোশাক, জুতা, ভোগ্যপণ্য ও ইলেক্ট্রনিক্সের মতো শীর্ষ ১০ পণ্যের কেনাকাটায় বাণিজ্য হয় দেড় লাখ কোটি টাকার ওপরে। এর বাইরে আরও অনেক রকম পণ্যের কেনাকাটা ও লেনদেন হয় প্রায় আরও ৫০ হাজার কোটি টাকা।

এবার পহেলা বৈশাখ ও ঈদুল ফিতর মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। ফলে চাকরিজীবীরা দুটি বোনাস পেয়েছেন। এতে আনন্দের মাত্রাও বেড়ে গেছে দ্বিগুণ। এই ঈদে মূলত পোশাক, প্রসাধনী, গেরস্থালি পণ্য ও নানা প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী কেনা হয়ে থাকে। নিজের পরিবার ছাড়াও আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের জন্যও কিনেছেন সবাই। করোনার প্রভাব কাটিয়ে এ বছরই প্রথম কোনো বিধিনিষেধ ছাড়া মার্কেট-মল চলেছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে অভিজাত শপিংমল পর্যন্ত বেচাকেনা হয়েছে নির্বিঘ্নে।

ঈদ উপলক্ষে বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্সও এসেছে। ঈদ ও বৈশাখ উপলক্ষে সাড়ে ১২ লাখ সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী পেয়েছেন দুইটি বোনাস। তাই ঈদের আগে বেতন-বোনাস, নতুন মাত্রা যোগ করেছে। জাকাত-ফিতরা থেকে বড় অঙ্কের অর্থ অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে ঈদ ঘিরে জমজমাট ছিল। শহর থেকে নাড়ির টানে সবাই গিয়েছেন গ্রামে। ফলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে প্রাণ ফিরেছে। ব্যবসায়ীরাও গত দুই বছরের ক্ষতি কাটিয়ে উঠেছেন।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির তথ্যমতে, মুদিখানা থেকে শুরু করে কাপড়ের দোকান, শো-রুম ও ফ্যাশন হাউস সবখানেই ছিল ঈদের আমেজ।

এসব দোকানে বছরের অন্য সময় গড়ে যে লেনদেন হয়, রমজানে সেটি বেড়ে তিনগুণ হয়। ঈদুল ফিতরে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয় পোশাকের বাজারে।

এদিকে শুধু মোবাইলেই দৈনিক এক লাখ কোটি টাকা আদান-প্রদান

হয়েছে। প্রবাসীরাও দেশে পাঠিয়েছেন, সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা। ফলে খাদ্যপণ্য, পোশাক, বিনোদন-পর্যটন ও পরিবহণ খাতে সরাসরি প্রভাব পড়ে ঈদের। প্রবাসীরা তাদের স্বজনদের কাছে যে অতিরিক্ত অর্থ পাঠিয়েছেন, এর বড় অংশই গেছে গ্রামে। রোজার শুরু থেকেই বেশি

বেশি রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা, যার পরিমাণ সাড়ে ১৩ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া মার্চ মাসেও

দুই হাজার কোটি টাকা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

সেন্টার ফর জাকাত ম্যানেজমেন্টের তথ্য অনুযায়ী, মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবেই এখন জাকাত দিচ্ছে। এবার জাকাত আদায় প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। পাশাপাশি ফিতরার পরিমাণও। কম হলেও ৫ কোটি মানুষ ফিতরা দিচ্ছে, যা এ বছর দেশের অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা এনেছে।

ঈদ কেনাকাটার সবার শীর্ষে ছিল পোশাক। এর পরই পাদুকা সামগ্রী, লুঙ্গি-পায়জামা। খাদ্যপণ্যের মধ্যে সেমাই-চিনি, মাংস, মিষ্টি ও মুদিপণ্য রয়েছে। প্রসাধনী, ইলেক্ট্রনিক্স টিভি, মোবাইলসহ নানা ধরনের পণ্যও কেনা হয় ঈদ উপলক্ষে। অনেকে আবার সোনার গহনা, ঘরের আসবাবপত্রও কেনেন। এবার গরম থাকায় অনেকেই এসি কিনেছেন। এর বাইরে ঈদের ছুটিতে পর্যটন খাতেও মানুষ অর্থ ব্যয় করেছেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন যায়যায়দিনকে বলেন, সব মিলিয়ে এক লাখ ২৫ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। আমরা আশা করেছিলাম এক লাখ ৮০ হাজার টাকা লেনদেন হবে। অতিরিক্ত গরম ও বিভিন্ন মার্কেটে অগ্নিকান্ডের কারণে কেনাবেচা কম হয়েছে।

অর্থনীতিবিদ ডক্টর মোহম্মদ মাহবুব আলী যায়যায়দিনকে বলেন, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে এটি এবারের ঈদে প্রমাণ হয়েছে। শুধু পোশাক সামগ্রী কিনতেই এক লাখ কোটি টাকা খরচ হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এর ফলে গত দুই বছরের সব লোকসান কাটিয়ে ওঠতে পারবেন ব্যবসায়ীরা। তবে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ার কারণে এত কেনাকাটার সুফল সাধারণ মানুষ পায়নি। ফুটপাত থেকে শুরু করে সবখানেই ছিল বাড়তি দাম