বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) আওতায় বিভিন্ন গ্যাস নেটওয়ার্কের লিকেজ কমিয়ে আনার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। বায়ুমণ্ডলের মিথেন ও কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যে নেয়া প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২৪ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফডি) গ্যাস সাশ্রয় হবে। একই সঙ্গে কার্বন নিঃসরণ কমবে ৪৩ লাখ ৭৮ হাজার টন। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সাম্প্রতিক এক বৈঠকে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে এ তথ্য দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ওয়াসিকা আয়শা খান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘গ্যাসের উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ পাইপলাইন থেকে বায়ুমণ্ডলে গ্যাস নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলে গ্রিনহাউজ গ্যাসের ক্ষতিকর প্রভাব কমানো সম্ভব হবে। এ বিষয়ে কমিটির বৈঠকে জ্বালানি বিভাগ থেকে মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যান-২০৩০ অর্জন প্রসঙ্গে বিভিন্ন প্রকল্পের প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। কমিটির পক্ষ থেকে ইতিবাচক এসব প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছে।’
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, আওতাধীন কোম্পানিগুলোর বিদ্যমান গ্যাস উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ পাইপলাইন থেকে মিথেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ হ্রাসে পরিকল্পনা নিয়েছে পেট্রোবাংলা। ‘টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স ফর দ্য ডিকার্বনাইজেশন অব দ্য অয়েল অ্যান্ড গ্যাস ভ্যালু চেইন’ শীর্ষক একটি কারিগরি প্রকল্প গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউজ গ্যাসের ক্ষতিকর প্রভাব কমানোই হবে এ প্রকল্পের লক্ষ্য। এছাড়া গ্যাস লিকেজের মাধ্যমে মিথেন নিঃসরণ হয় বিধায় সব বিপণন কোম্পানির অধিভুক্ত এলাকায় তা মেরামতের জন্য প্রধান ও আঞ্চলিক বিপণন কার্যালয়গুলোয় কারিগরি দল নিয়োজিত আছে। লাইন লিকেজের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের মাধ্যমে মেরামতসহ গ্যাস অপচয় রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হয়। অন্যদিকে ক্যাপটিভ পাওয়ার শ্রেণীতে গ্যাস সরবরাহের ক্ষেত্রে কো-জেনারেশন বা ট্রাই-জেনারেশনের মাধ্যমে জ্বালানি দক্ষতা নিশ্চিত করেও কার্বন নিঃসরণ কমানো হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে পেট্রোবাংলার আওতাধীন কোম্পানিগুলোও বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে।
প্রকল্পের আওতায় ঢাকার দনিয়া টিবিএস থেকে সিটি সেন্ট্রাল ডিআরএসের ইনলেট পর্যন্ত আট কিলোমিটার, সিটি সেন্ট্রাল ডিআরএসের প্রস্তাবিত ধানমন্ডি ডিআরএস পর্যন্ত সাত কিলোমিটার প্রধান বিতরণ লাইন স্থাপন করা হবে। এছাড়া ঢাকা শহরে ৬০টি এলাকায় ২-১২ ইঞ্চি ব্যাসের প্রায় ৫৮৫ কিলোমিটার বিতরণ লাইন ও ৯৯ হাজারটি সার্ভিস সংযোগ স্থানান্তরের জন্য ৩-৪ ইঞ্চি থেকে ২ ইঞ্চি ব্যাসের ২৯৭ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ, ধানমন্ডি এলাকায় ৫০ এমএমসিএফডি সক্ষমতার একটি নতুন ডিআরএস নির্মাণ ও ১৪টি ডিআরএস/টিবিএস মডিফিকেশন করা হবে। পাশাপাশি গ্যাস নেটওয়ার্ক আধুনিকায়নের জন্য প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত গ্যাস নেটওয়ার্কসহ সমগ্র ঢাকা শহরের বিদ্যমান পাইপলাইন নেটওয়ার্কের সমন্বিত জিআইএস নকশা প্রস্তুত ও অপারেশন মেইনটেন্যান্স কাজ রিয়েলটাইম ও লোড ব্যালান্সিং সহজীকরণের জন্য গ্যাস নেটওয়ার্কে স্থাপন করা হবে এসসিএডিএ সিস্টেম।
তিতাসের মোট পাইপলাইন রয়েছে ১৩ হাজার ১৩৮ কিলোমিটার। কোম্পানিটির গ্রাহক সংখ্যা ২৮ লাখেরও বেশি। মোট পাইপলাইনের মধ্যে ঢাকায় রয়েছে সাত হাজার কিলোমিটার। এছাড়া ঢাকার আশপাশে অর্থাৎ নরসিংদী, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর, জামালপুর ও কিশোরগঞ্জেও তিতাসের পাইপলাইন আছে। ঢাকা শহরে গ্যাস লাইন প্রতিস্থাপন ছাড়াও আশপাশ এলাকার বিতরণ ব্যবস্থা নিরাপদ ও আধুনিকায়নে আরো কয়েকটি উদ্যোগ নিয়েছে কোম্পানিটি। ভূমির উপরিভাগে স্থাপিত স্থাপনা থেকে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসে ডেনমার্কের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এটির কাজ শেষ হবে ২০২৭ সালের জানুয়ারিতে। এছাড়া পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড (জেজিটিডিএসএল), সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (এসজিসিএল). কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) ও বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডও (বিজিডিসিএল) পাইপলাইনের লিকেজ কমিয়ে কার্বণ নিঃসরণের পরিমাণ কমাতে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।