পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, আমেরিকা যেটা চায় সেটা হলো ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন। আমরাও সেটা চাই। এখানে আমাদের কোনো দ্বিমত নাই। আমেরিকা বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কটা আরও বাড়াতে চায়। তার জন্য তারা একজন রাষ্ট্রদূতকে পাঠিয়েছে, যার তিরিশ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে ইকোনমির ওপরে। উনি ইকোনমি ইস্যুর ওপর এক্সপার্ট। আমরা আশা করব আমাদের ইকোনমি ও ট্রেড ডেভেলপমেন্ট যাতে তরান্বিত হয় তার ওপর জোর দেবেন। আরও কিছু ছোটখাটো ইস্যু ছিল যেগুলোর উত্তর আমরা দিয়েছি।
ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে আলোচনার বিষয়ে রোববার দুপুরে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় গত ১০ এপ্রিল আব্দুল মোমেন বৈঠক করেন ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে।
তিনি আরও বলেন, অর্থনীতি, ট্রেড ও ইনভেস্টমন্ট নিয়ে আলাপ হয়েছে অনেক।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সব দল যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে সেজন্য সবাইকে উৎসাহ সৃষ্টি করতে বলেছে যুক্তরাষ্ট্র। কেউ কেউ তাদের বলেছে আমাদের অপজিশন কোনো মিটিং-মিছিল ও আন্দোলন করতে পারে না। এসব করতে গেলে তাদের জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। আমরা তো কাউকে রাজনৈতিক কারণে জেলে নেই না। কেউ ক্রিমিনাল কাজ করলে জেলে নিই, আগুন দিয়ে কিছু পোড়ালে। ওদের তো কোথাও আমরা আটকাই না।
বিরোধীদের উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, মিটিং করতে চাইলে কর। টিভিতে বক্তব্য দিতে চাইলে দাও। এগুলো তো আমরা কখনো আটকাই না। কেউ যদি কখনো রাস্তা বন্ধ করে দিতে চায়, তোমার দেশেও রাস্তা বন্ধ করলে অ্যালাউ করবে না। দে আর ফ্রি টু মিটিং।
মোমেন বলেন, কয়েকটি বিষয়ে তাদের (আমেরিকা) প্রশ্ন আছে। সেগুলোতে আমরা উত্তর দিয়েছি। ডিএসএ (ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন) সম্পর্কে একটা প্রশ্ন হয়েছে। আমরা বলেছি যে আমরা মনে করি, ডিএসএতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রয়োগটা ঠিকমতো হয়নি। সেগুলো আমরা বিচার করছি। আর এখানে যদি কোনো দুর্বলতা থাকে উই উইল টেক কেয়ার অফ ইট (আমরা সেগুলোর সুরাহা করব)।
তাদের দেশেও সাইবার স্পেসের আইন আছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আমাদের আইনটার কোথাও যদি কোনো দুর্বলতা থাকে উই উইল ফিক্সড ইট আপ (আমরা এটা ঠিক করব)।’
ডিএসএ মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করার জন্য করা হয়নি বলে দাবি করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, দুই কারণে এটি করা হয়েছে। একটি হচ্ছে- কেউ যাতে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে দাঙ্গা-টাঙ্গা করতে না পারে। আরেকটি হলো, কোনো ব্যক্তিবিশেষকে কোনো কারণ ছাড়াই, মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রচারণার মাধ্যমে যাতে অসম্মান করা না হয়। কখনো কখনো প্রয়োগের ক্ষেত্রে (ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন) একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে, সেটা আমরা শুধরে নেব।
আব্দুল মোমেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলেছে। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে সরকার যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে, তা জানানো হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে।
ভুয়া ভোট যাতে না হয়, সেজন্য ফটো আইডি করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রাতের অন্ধকারে যাতে ভোট না হয়, সেজন্য স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স তৈরি করা হয়েছে। একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী কমিশন গঠন করা হয়েছে। এটা করা হয়েছে একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, প্রধানমন্ত্রী এই কমিশন গঠন করেননি।
অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সরকারের ব্যাখ্যায় যুক্তরাষ্ট্র সন্তুষ্ট কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা সন্তুষ্ট বলেই মনে হয়েছে। একমাত্র যেটা তারা চায় তা হলো, কাউকে যাতে হয়রানি করা না হয়। তোমরা তো মিরাকল। নির্বাচন এমন ভালো করবা যে গোটা দুনিয়ার কাছে বলতে পারি দেখ ম্যাজিক দেখাব। লুক এট বাংলাদেশ।
সুষ্ঠু নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সহযোগিতা চেয়েছি। তারা বলুক। সুষ্ঠু নির্বাচন শুধু সরকার ও নির্বাচন কমিশন একা চেষ্টা করলে হবে না। সব দল ও মতের লোকের ঐকান্তিকতা, আন্তরিকতা ও অঙ্গীকার থাকতে হবে। তোমরা এসব ব্যাপারে সাহায্য করো। আমি বলেছি, সব দল ঐকান্তিক না থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না।