২৮ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১২:৩৪:৫৯ অপরাহ্ন


অগ্নিসন্ত্রাসীরা ভিন্নপথ ধরল কি না দেখতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
অনলাইন ডেস্ক :
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-০৪-২০২৩
অগ্নিসন্ত্রাসীরা ভিন্নপথ ধরল কি না দেখতে হবে: প্রধানমন্ত্রী অগ্নিসন্ত্রাসীরা ভিন্নপথ ধরল কি না দেখতে হবে: প্রধানমন্ত্রী


আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসের কথা কেউ যেন ভুলে না যায়। তাদের অগ্নিসন্ত্রাস ভিন্নরূপে বিরাজমান কি না, ভিন্নরূপে তারা এ ধরনের কিছু করছে কি না- এটা সবাইকে একটু নজরদারিতে রাখতে হবে। সেই অগ্নিসন্ত্রাসীরা এখন ভিন্নপথ ধরল কি না, এটাই আমাদের এখন দেখতে হবে। আগে তারা সাধারণ মানুষকে পুড়িয়েছে, এখন তারা অর্থনীতিকে পঙ্গু করার পথে পা দিচ্ছে কি না, এর রহস্যটা বের করতে হবে। 

শনিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঠিক ৬টার পর আগুনটা লাগছে। এটার ওপর নজরদারিটা বাড়াতে হবে। অন্য মার্কেটগুলোকে সতর্ক থাকতে হবে। আগামীতে কেউ যাতে এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে না পারে। আমি শুধু ঢাকা শহরে নয়, সারা দেশের সবাইকে সতর্ক করছি-সবাই যেন একটু সতর্ক থাকেন। 

প্রধানমন্ত্রী সন্দেহ প্রকাশের পাশাপাশি বিএনপির আন্দোলনের সঙ্গে এই অগ্নিকাণ্ডের যোগসূত্রের ইঙ্গিতও দেন। তিনি বলেন, আমরা তো জানি, আমাদের সেই কিছু রাজনৈতিক দল ঈদের পর আন্দোলন করবে, অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেবে, অর্থনীতি পঙ্গু করে দিয়ে সরকারকে উৎখাত করবে। কিন্তু এই সাধারণ মানুষগুলো কী অপরাধ করল? সাধারণ ব্যবসায়ীরা কী অপরাধ করল? সাধারণ ক্রেতারা কী অপরাধ করল? সাধারণ মানুষ যেখানে ক্রয়-বিক্রয় করে সেই জায়গাগুলো পুড়িয়ে দেওয়া। সাধারণ মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হচ্ছে। সাধারণ ব্যবসায়ীরা সারা বছর আকাঙ্ক্ষা করে বসে থাকে এই সময়ে একটা ব্যবসা করবে; এগুলো আমার মনে হয় সহজে ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নিজের সন্দেহ প্রকাশের পক্ষে ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপির সহিংস আন্দোলনের বিষয়টিও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বিএনপির সেই একটানা অগ্নিসন্ত্রাস, প্রায় সাড়ে তিন হাজার গাড়ি, ২৯টা ট্রেন, আট-নয়টা লঞ্চ, ৫০০ স্কুল, ৭০টা সরকারি অফিস, ছয়টা ভূমি অফিস তো তারা পুড়িয়ে দিয়েছিল। ৩ হাজার ২০০ মানুষকে তারা পুড়িয়েছে, ৫০০-এর ওপরে মৃত্যুবরণ করেছে, এখনো সেই পোড়া অবস্থায় মানুষগুলো কী রকম মানবেতর জীবনযাপন করছে। 

পাহারা ও আগুন নেভাতে নিজস্ব ব্যবস্থার তাগিদ : অগ্নিকাণ্ডের মতো ঘটনা ঠেকাতে পাহারা বসাতে বিভিন্ন বিপণিবিতানের ব্যবসায়ী সমিতিগুলোকে পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে অগ্নিনির্বাপণ সামগ্রীর বন্দোবস্তও করতে বলেন। তিনি বলেন, প্রত্যেকটা মার্কেটে যারা দোকান মালিক এবং মালিক সমিতি, তাদের আমি বলব, একটা সময় আগুন লাগছে; ওই সময়টা তাদের পাহারার ব্যবস্থা করা উচিত। তাদের প্রত্যেকের দোকানে নিজস্ব লোক রাখা দরকার, তাদের সতর্ক থাকা দরকার। আগুন লাগলে সঙ্গে সঙ্গে আগুন নেভানোর জন্য ফায়ার সার্ভিস যায়। তবে তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনাও থাকতে হবে।

অহেতুক ভিড় না করার অনুরোধ : কোথাও আগুন লাগলে সেখানে ভিড় না করার পাশাপাশি ভিডিও ধারণের যে প্রবণতা, তা নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। অহেতুক ভিড় করে কাজে বাধা সৃষ্টি না করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, আগুন লাগলে দেখার জন্য মানুষের ভিড়, এটা কমাতে হবে। সবাই যদি এক বালতি করে পানি নিয়ে আসে, তাও তো আগুনটা নেভাতে সাহায্য করা যায়। সেটা না করে সবাই দেখতে আসে, সেলফি তোলে, ফটো তোলে, এটা কী ধরনের কথা? ফায়ার সার্ভিসের কাজে বাধা দিলে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজে যেন কেউ বাধা দিতে না পারে। আর যারা বাধা দেবে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। বঙ্গবাজারের আগুনের পর যারা ফায়ার সার্ভিসে হামলা চালিয়েছিল, ভিডিও দেখে তাদের শনাক্ত করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, শাস্তি দেওয়া হবে।

ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান : এদিকে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভায় গাজীপুর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়। এছাড়া কয়েকটি উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাই করে দলটির স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড। সূত্র জানায়, সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, যাদের মনোনয়ন দেওয়া হলো প্রত্যেকেই যোগ্য। ’৭৫-র শহিদ পরিবারের সন্তান, ’৭৫-পরবর্তী অনেকের রাজনৈতিক অবদান, বিতর্কমুক্ত, সবকিছু বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের দলের যোগ্য নেতাকর্মীর সংখ্যা অনেক। আরও যোগ্য প্রার্থী ছিল। কিন্তু একজনকে নৌকা দিতে হবে। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

আগুন নিয়ে নেতাকর্মীদের সজাগ থাকার নিদের্শনা : শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে না এলেও ভিন্নভাবে মাঠে থাকবে। আর সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, সে কারণে বিজয়ের কোনো বিকল্প নেই। এ সময় সারা দেশে আগুন সম্পর্কে নেতাকর্মীদের সজাগ থাকার নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, আবার আগুন নিয়ে খেলা শুরু হয়েছে। ’৭৩-৭৪ সালেও এমন খেলা শুরু হয়েছিল। ’৭৪ সালে কুড়িগ্রামের চিলমারীতে বাসন্তীকে জাল পরিয়ে দেশের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করা হয়েছে। সেই চক্র আবার সক্রিয়। এজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। 

সভায় বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, কাজী জাফর উল্লাহ, ড. আব্দুর রাজ্জাক, রমেশ চন্দ্র সেন, রশিদুল আলম, লে. কর্নেল (অব.) মুহম্মদ ফারুক খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ডা. দিপু মনি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া দলের প্রচার সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ বৈঠকে অংশ নেন। 

এর আগে নববর্ষ এবং ‘আশ্রয়ণ : অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে শেখ হাসিনা মডেল’ শিরোনামে সৃজনশীল কর্ম কপিরাইট অফিস কর্তৃক স্বীকৃতি দেওয়ায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান দলটির নেতারা। যুগান্তর পত্রিকা।