বাংলাদেশসহ উৎস দেশগুলো থেকে কলিং ভিসার আন্তর্জাতিক মানবপাচারের
সিন্ডিকেট এবং এজেন্সি প্রথা অনতিবিলম্বে বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছেন
মালয়েশিয়া প্রধানমন্ত্রী দাতু সেরী আনোয়ার ইব্রাহিম। পাশাপাশি এই দাসত্ব
প্রথা বাতিল করে ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ,
ইন্দোনেশিয়া থেকে অত্যন্ত কম খরচে কর্মী নিয়োগ করার কথা জানিয়েছেন
প্রধানমন্ত্রী।
গত বুধবার ইন্দোনেশিয়া সফরের সময় রাজধানীর জাকার্তায় এক সাক্ষাৎকারে এক
প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। মুহূর্তেই এই সাক্ষাৎকারের ভিডিওটি
ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ যেন আধুনিক দাস প্রথা! বাংলাদেশ থেকে কর্মী
নিয়োগে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ নিচ্ছে আন্তর্জাতিক মাফিয়া
মানবপাচার চক্র এবং তথাকথিত এজেন্সিগুলো। তারপর কর্মক্ষেত্রে এসে শ্রমিকরা
তাদের দেনা শোধ করতে পারছে না। তাদের বেতন খুবই কম। তাদের নির্যাতন করা
হচ্ছে জেলে যেতে হচ্ছে। আমি জানি জেল কত কষ্টের কারণ আমি নিজেই জেলে
নির্যাতনের শিকার। আমি জানি জেলের নির্যাতন কি। একই সাথে বাংলাদেশ,
ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়ায় এই দাস প্রথার সিস্টেম বাতিল করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম এই মানবপাচারের সিন্ডিকেট চক্র ও এজেন্সির
উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা যদি খুব বেশি মুনাফা করতে চান তাহলে অন্য কোন
ব্যবসা খুঁজে নিন, কিন্তু আপনারা মানুষ পাচার করে দাসের মতো ব্যবহার করে এত
মুনাফা করার চেষ্টা করবেন না। আমি রাষ্ট্রপতি জোকে কে জুন মাসে মালয়েশিয়া
সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। আশা করি আগামী জুন মাসের মধ্যেই এই ত্রুটিপূর্ণ
ব্যবস্থা বাতিল করতে পারবো।
আনোয়ার বলছিলেন, তার প্রশাসনের শুরু থেকেই তিনি অভিবাসী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে
সমস্ত নির্যাতনের ক্ষেত্রে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি
বলেন, আমি মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পুলিশ প্রধানকে বলেছি, গত কয়েক
মাসে আমরা কর্মীদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে স্পষ্ট ব্যবস্থা নেবো। যদি
অত্যাচার হয়, তা লুকিয়ে রাখবেন না প্রকাশ করুন। নির্যাতনকারী যেই হন
পূর্বপুরুষ শ্রী, তান শ্রী বা তুন (ক্ষমতাধর ব্যক্তি) তাতে আমাদের কিছু যায়
আসে না। এই দেশের নিরপেক্ষ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় এসব ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের
ছাড় দেয় না সেটাই মূলকথা।
আনোয়ার ইব্রাহিম এ সময় মালয়েশিয়ার স্বাধীনতার ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, ৭০ এবং
৮০ এর দশকে যখন আমরা ইংরেজদের কবল থেকে মালয়েতে রূপান্তরিত হচ্ছিলাম,
আমাদের যথেষ্ট ডাক্তার এবং লেকচারার অভাব ছিল, বিশেষ করে বিজ্ঞান বিভাগে।
সে সময় আমরা ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট গুহার্তোকে মালয়েশিয়ায় এসে ডাক্তার,
শিক্ষক, প্রভাষক এবং বিজ্ঞানী সরবরাহ করার অনুমতি দেয়ার জন্য রাজি
করিয়েছিলাম। তাই মালয়েশিয়ার ইতিহাসে একটা সময় ছিল যখন আমরা ইন্দোনেশিয়ার
কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম। ঠিক আছে, এখন তারা প্রভাষক এবং শিক্ষক নয়, তারা
(ইন্দোনেশিয়ানরা) শ্রমিক। তাই বলে তাদের কে অবহেলা করবেন না। তাই
মালয়েশিয়ার জনগণের এটা মনে রাখা উচিত।