২৮ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৯:৫৬:২৯ পূর্বাহ্ন


সংসদে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ, যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা
অনলাইন ডেস্ক :
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-০৪-২০২৩
সংসদে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ, যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা সংসদে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ, যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা


আওয়ামী লীগ, গণতন্ত্র ও দেশের মানুষের শত্রু প্রথম আলো: যুক্তরাষ্ট্র চাইলে যে কোনো দেশের ক্ষমতা ওলটাতেপালটাতে পারে, গণতন্ত্রকে বাদ দিয়ে তারা এখানে এমন একটা সরকার আনতে চাচ্ছে, যেখানে গণতন্ত্রের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। এখন তারা গণতন্ত্রের জ্ঞান দিচ্ছে, মানবাধিকারের কথা বলছে, তাদের দেশের অবস্থাটা কী? * সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সরকারকে স্থিতিশীলতা দেয় * গণতন্ত্র স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলেই উন্নয়নটা সম্ভব হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুক্তরাষ্ট্র চাইলে যে কোনো দেশের ক্ষমতা ওলটাতেপালটাতে পারে-এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে বাদ দিয়ে তারা এখানে এমন একটা সরকার আনতে চাচ্ছে, এতে করে গণতন্ত্রের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। আর সেক্ষেত্রে আমাদের কিছু বুদ্ধিজীবী, সামান্য কিছু পয়সার লোভে এদের তাঁবেদারি করে। পদলেহন করে।

সোমবার জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে বিশেষ অধিবেশনে ১৪৭ বিধির সাধারণ প্রস্তাব ও সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা আমাদের এখন গণতন্ত্রের জ্ঞান দিচ্ছে। কথায় কথায় ডেমোক্রেসি আর হিউম্যান রাইটসের (মানবাধিকার) কথা বলছে। তাদের দেশের অবস্থাটা কী? কয়েকদিন আগের কথা, আমেরিকার টেনেসিস রাজ্যে তিনজন কংগ্রেসম্যান, এই তিনজনের অপরাধ হচ্ছে তারা অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের জন্য আবেদন করেছিল। তারা ডেমোনেস্ট্রেশন দিয়েছিল যে, এভাবে যারতার হাতে অস্ত্র থাকা, আর এভাবে গুলি করে শিশুহত্যা বন্ধ করতে হবে। এটাই ছিল তাদের অপরাধ। আর এই অপরাধে দুজনকে কংগ্রেস থেকে এক্সপেলড করা হয়। তারা হলেন-জাস্টিস জন ও জাস্টিস পিয়ারসন। একজন সাদা চামড়া ছিল বলে বেঁচে যান। তাদের অপরাধ হলো-তারা কালো চামড়া। সেই কারণে তাদের সিট আনসিট হয়ে যায়। তো এখানে মানবাধিকার কোথায়? এখানে গণতন্ত্র কোথায়? এটা আমার প্রশ্ন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে, আবার দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্তদের পক্ষ হয়েই তারা ওকালতি করে যাচ্ছে। একই সঙ্গে ‘গণতন্ত্র ও উন্নয়ন’ প্রসঙ্গ নিয়ে কারও কারও সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অভিজ্ঞতা খুবই বিচিত্র। আমরা আইয়ুব আমল দেখেছি। ইয়াহিয়া আমল দেখেছি। জিয়ার আমল দেখেছি। জেনারেল এরশাদের আমল দেখেছি। খালেদা জিয়ার আমলও দেখেছি।

এ সময় যুক্তরাষ্ট্র সফরে একটি বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমেরিকায় যখন প্রথমবার যাই, সেখানকার আন্ডার সেক্রেটারির সঙ্গে আমার মিটিং হয়েছিল। বলেছিলাম আমি একটি মনুমেন্ট দেখে এসেছি। সেখানে লেখা আছে গভর্নমেন্ট অব দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল। আমি এমন একটি দেশ থেকে এসেছি, সেদেশটি হচ্ছে গভর্নমেন্ট অব দ্য আর্মি, বাই দ্য আর্মি, ফর দ্য জেনারেল। বলেছিলাম, আমেরিকা গণতন্ত্র চর্চা করে তাদের আটলান্টিকের পাড় পর্যন্ত। এটা যখন পার হয়ে যায়, তখন কি আপনাদের গণতন্ত্রের সংজ্ঞাটা বদলে যায়? কেন আপনারা একটা মিলিটারি ডিক্টেটরকে সমর্থন দিচ্ছেন? আমি এই প্রশ্নটি করেছিলাম।

শেখ হাসিনা বলেন, আমেরিকায় প্রায় প্রতিদিনই দেখা যায়, অস্ত্র নিয়ে স্কুলে ঢুকে যায়। বাচ্চাদের গুলি করে হত্যা করছে। শিক্ষকদের হত্যা করছে। শপিংমলে ঢুকে যাচ্ছে। হত্যা করছে। ক্লাবে যাচ্ছে সেখানে হত্যা করছে। এটা প্রতিনিয়ত, প্রতিদিনেরই ব্যাপার। কোনো না কোনো রাজ্যে অনবরত এই ঘটনা ঘটছে।

বিভিন্ন দেশের বিষয়ে বর্তমানে মার্কিন অবস্থানের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আজকেও আমি বলি, যে দেশটা আমাদের কথায় কথায় গণতন্ত্রের সবক দেয়। আর আমাদের বিরোধী দল থেকে শুরু করে কিছু কিছু লোক তাদের কথায় খুব নাচনকোদন করছেন, উঠবস করছেন, উৎফুল্ল হচ্ছেন। হ্যাঁ, তারা যে কোনো দেশের ক্ষমতা ওলটাতে পারেন, পালটাতে পারেন। বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলো তো আরও বেশি কঠিন অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আরব স্প্রিং (আরব বসন্ত), ডেমোক্রেসি বলে বলে যেসব ঘটনা ঘটাতে ঘটাতে এখন নিজেরা নিজেদের মধ্যে একটা প্যাঁচে পড়ে গেছে। যতদিন ইসলামিক কান্ট্রিগুলোর ওপর চলছিল, ততদিন কিছু হয়নি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরে এখন সারা বিশ্বই আজকে অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়ে গেছে। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৫ আগস্টে যারা হত্যা করেছে, সেই খুনি রাশেদ (রাশেদ চৌধুরী) আমেরিকায় আশ্রয় নিয়ে আছে। সেখানে যত প্রেসিডেন্ট এসেছেন, সবার কাছে আমি আবেদন করেছি। আইনগতভাবে আমরা প্রচেষ্টা চালিয়েছি। আমরা ডিপ্লোমেসির মাধ্যমে প্রচেষ্টা চালিয়েছি। প্রেসিডেন্টের কাছে আবেদন করেছি যে, এই খুনি সাজাপ্রাপ্ত আসামি, তাকে আপনারা আশ্রয় দেবেন না। শিশু হত্যাকারী, নারী হত্যাকারী, রাষ্ট্রপতির হত্যাকারী, মন্ত্রীর হত্যাকারী। এরা মানবতা লঙ্ঘনকারী। এদের আপনারা আশ্রয় দিয়েন না। ফেরত দিন। কই তারা তো তাকে ফেরত দিচ্ছে না। খুনিদের লালন-পালন করেই রেখে দিচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘একটি শিশুর মুখ দিয়ে মিথ্যা বলানো হলো, বলানো হলো ভাত-মাংসের স্বাধীনতা চাই। একটি সাত বছরের শিশুকে দিয়ে এসব বলানো হলো। তার হাতে দশটা টাকা তুলে দেওয়া এবং তার কথা রেকর্ড করে সেটি প্রচার করে স্বনামধন্য এক পত্রিকা, যার নাম প্রথম আলো। কিন্তু বাস করে অন্ধকারে। প্রথম আলো আওয়ামী লীগের শত্রু, গণতন্ত্রের শত্রু, দেশের মানুষের শত্র।’

তিনি বলেন, আমি এটা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলি যে, এরা এ দেশ কখনো স্থিতিশীল থাকুক তা চায় না। ২০০৭ সালে যখন ইমার্জেন্সি হয় তখন তারা উৎফুল্ল। দুটি পত্রিকা আদাজল খেয়ে নেমে গেল। তার সঙ্গে আছে একজন সুদখোর (ড. মুহাম্মদ ইউনূস)। যে বিনিয়োগ করে আমেরিকায়। আমেরিকা একবারও জিজ্ঞেস করে না যে গ্রামীণ ব্যাংক, এটা তো একটি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান। সরকারের বেতন তুলত যে এমডি, সে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার কোথা থেকে পেল, যে আমেরিকার মতো জায়গায় সামাজিক ব্যবসা করে, বিনিয়োগ করে। দেশে-বিদেশে করা এই বিনিয়োগের অর্থ কোথা থেকে আসে? এটা কি তাকে কখনো জিজ্ঞেস করেছে? জিজ্ঞেস করেনি। তাদের কাছ থেকে দুর্নীতির কথা শুনতে হয়। এদের কাছে মানবতার কথা শুনতে হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা গরিবের রক্ত চোষা, যারা গরিবের টাকা পাচার করে শত কোটি টাকার মালিক হয়ে আবার আন্তর্জাতিক পুরস্কারও পেয়ে যায়, আর এসব লোক এ দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার চেষ্টা করে, মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে নাকি কিছুই করেনি। এ সময় তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এবং বিএনপির আমলে কী কী উন্নয়ন হয়েছে, তার তুলনামূলক চিত্র সংসদে তুলে ধরেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দেশের ইতিহাস বিকৃতি করা হয়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস যেমনভাবে বিতর্কিত করা হয়েছিল, দেশের অনেক প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস জানতে পারেনি। মুক্তিযুদ্ধ ও লাখো শহিদের আত্মত্যাগের ইতিহাস বদলানো হয়েছিল। অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনি। আজকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলেই উন্নয়নটা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া যারা সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছে, তারা দেশ ও জাতিকে কী দিতে পেরেছে? কিছুই দিতে পারেনি। নিজেদের ভাগ্য গড়তে পেরেছে। দুর্ভাগ্য হচ্ছে আজকে তাদের কাছ থেকেও আমাদের গণতন্ত্রের কথা শুনতে হয়। তাদের থেকে আমাদের গণতন্ত্রের শিক্ষা নিতে হয়।

এ সময় বিএনপি ও বর্তমান সরকারের আমলে উন্নয়নের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির আমলে ডিজিটালসেবা সেন্টার ছিল ৮টি, আর এখন এক হাজার ১৭৮টি। ওয়ান স্টপ সেন্টার আগে ২টি ছিল, এখন ৮ হাজার ৮২৫টি। বিএনপির আমলে সরকারি ওয়েবসাইট ছিল ৯৮টি। আর আওয়ামী লীগ আমলে ৫১ হাজার ৬৭৮টি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৪ বছরে বাংলাদেশে বিরাট পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে। এরপরও যদি কেউ উন্নয়ন না দেখে, আর সরকার কিছুই করেনি বলে, এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছুই নেই। তবে যা কিছু করি, তেলা মাথায় তেল দেওয়া নয়। জনগণের জন্য করি। সাধারণ মানুষের জন্য করি, গ্রামের মানুষের জন্য করি। দেশের মানুষ ভালো আছে, এটা সব থেকে বড় কথা।

শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ কী করেছে, আর তার আগে কী ছিল তার কয়েকটি হিসাব তুলে ধরতে চাই, আমি বিশ্বাস করি, দেশের মানুষও বিশ্বাস করে, ১৪ বছর একটানা ক্ষমতায় আছি বলেই দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পেরেছি। হ্যাঁ, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। তারপরও আমাদের উৎপাদন বৃদ্ধি করে, দেশের মানুষের জন্য অতিরিক্ত দামে জিনিস কিনে এনেও আমরা খাদ্য নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছি। নিম্নআয়, মধ্যম আয় সবার দিকে আমাদের দৃষ্টি আছে। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি মানুষের ভাগ্য গড়তে। এখন গ্রাম আর শহরের পার্থক্য কমে গেছে। শহরের মাঝখানে আরেকটা শহর গড়ে উঠছে। প্রত্যেকটি গ্রামে আমরা নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দিচ্ছি।

বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন নির্বাচন নিয়ে অনেক কথা বলছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে তো কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। যে বিরোধী দলকে বড় বিরোধী দল বলা হয়, তারা ২০০৮ সালে ২৯টি সিট পেয়েছিল। তারা যদি এত বড়ই বিরোধী দল হয়ে থাকে, তাহলে ২৯টি সিট পেল কেন? তারা এতবড় দল কোত্থেকে হয়ে গেল। আর সাজাপ্রাপ্ত আসামি হচ্ছে সেই দলের চেয়ারপারসন। হত্যা-গুম-খুন-দুর্নীতি-জঙ্গিবাদ-সবকিছুতেই যারা পারদর্শী ছিল। তাদের জন্য দেশের মানুষ আতঙ্কে থাকত। এখন তাদের নিয়ে এত উৎফুল্লতা শুরু করছে। এটাই হচ্ছে দুর্ভাগ্য।

শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সমান পদক্ষেপে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। এটাই আমাদের কথা। যখন ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলেছিলাম, অনেকেই নাক সিটকিয়েছিল। বলেছিল, এটা আবার কী ডিজিটাল বাংলাদেশ। এখন সে ডিজিটাল ব্যবস্থা ব্যবহার করে আমাদের বিরুদ্ধে নানারকম কুৎসাও রটায়। সুফল-কুফল দুটোই আছে। মানুষ সুবিধা পাচ্ছে।

সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন সংক্রান্ত জিএম কাদেরের প্রস্তাবের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে অনেকেরই আপত্তি। যারা এই আপত্তির কথা তুলছেন, তাদের বোধহয় অভিজ্ঞতার অভাব আছে। এই ৭০ অনুচ্ছেদটাই কিন্তু আমাদের দেশে সরকারের একটা স্থায়িত্বের সুযোগ এনে দিয়েছে। যার ফলে দেশটা উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছে। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ফ্লোর ক্রস করার কারণে ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট সরকার টিকতে পারেনি। এর আগে ১৯৪৬ সালেও একই খেলা হয়েছিল। যার কারণে আমাদের পূর্ববাংলাটা যেভাবে গঠন হওয়ার কথা, সেভাবে হয়নি। এটা ১৯৫৬ সালের নির্বাচনেও হয়েছিল। পরে মার্শাল ল’ এসে ক্ষমতা দখল করে। কাজেই এই ৭০ অনুচ্ছেদটাই একটি সুরক্ষা দেয় গণতন্ত্রকে সুসমুন্নত করতে, সংহত করতে। আর এর সুফল জনগণ পেতে পারে। জানি না, কেন কিছু কিছু সদস্য এর ওপর এত রাগ। কারণ হচ্ছে, সরকার ভাঙতে-গড়তে বা খেলাটা খেলতে তারা সক্ষম হচ্ছে না। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছেন প্রধানমন্ত্রী-মতিয়া চৌধুরী : সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের অপর নাম শেখ মুজিবুর রহমান। এটি একটি কঠিন সত্য, যে সত্য বারবার অন্ধকারকে ভেদ করে বাঙালির হৃদয়ে সূর্যালোক পৌঁছে দেয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতির উন্নয়নে বিপুল ত্যাগ স্বীকার করায় সংসদের অভ্যুদয় এবং জাতির অস্তিত্ব একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। দেশের উন্নয়নের প্রশংসা করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করেছিলেন এবং তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন।

মতিয়া চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বে কৃষি ও কৃষকের সাফল্য আজ দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখছে। যার কারণে হেনরি কিসিঞ্জাররা বাংলাদেশকে আর ‘বটমলেস বাস্কেট’ বলতে পারে না। বিএনপির ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করে উপনেতা বলেন, রাজনীতিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও অভিযোগ থাকতে পারে। কিন্তু বিএনপি সাধারণত অনৈতিক পথ অনুসরণ করে রাজনীতিতে মিথ্যাচার করছে। এ সময় তিনি ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার কথা উল্লেখ করেন।

বর্তমান সরকার সংসদে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করেছে-চিফ হুইপ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার জাতীয় সংসদে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করেছে উল্লেখ করে চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী বলেন, এই সংসদে জাতির পিতার হত্যার বিচারের পথ বন্ধ করতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ পাশসহ অনেক কালো আইন পাশ হয়েছে। সংসদে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী, যুদ্ধাপরাধী, খুনি, সন্ত্রাসী, কালোবাজারিদের সদস্য করে আনা হয়েছে। সংসদের বিভিন্ন অবকাঠামো ধ্বংস করার পাশাপাশি স্বাভাবিক কার্যপ্রণালি বিঘ্নিত করা হয়েছে। সংসদকে অকার্যকর করার সব প্রক্রিয়া চালানো হয়েছে। জাতির পিতার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদকে কার্যকর করতে সংসদীয় কমিটিগুলোকে সক্রিয় করেছেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্ব চালু করাসহ সংসদকে কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি সংসদীয় গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন।  

সংসদের অধিবেশন সমাপ্ত : জাতীয় সংসদের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে বিশেষ ও ২২তম অধিবেশন সমাপ্ত হয়েছে। অধিবেশন সমাপ্তি সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ঘোষণা পাঠ করার মাধ্যমে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সোমবার এ অধিবেশন সমাপ্তির ঘোষণা দেন। 

এর আগে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) দেওয়া ভাষণের অডিও-ভিডিও প্রদর্শন করা হয়। 

গত ৬ এপ্রিল বেলা ১১টায় অধিবেশন শুরু হয়। পরদিন ৭ এপ্রিল বিকাল ৩টায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সংসদে স্মারক বক্তব্য দেন। পরে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা কার্যপ্রণালি-বিধির ১৪৭ বিধির আওতায় ধন্যবাদ প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এর ওপর ৬৩ জন সংসদ-সদস্য মোট ১০ ঘণ্টা ২৭ মিনিট আলোচনায় অংশ নেন। 

অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে স্পিকার বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনন্য উপহার। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনের পাশাপাশি অল্প সময়ের মধ্যে বিশ্বনন্দিত ও অনন্য সংবিধান প্রণয়ন ও সফলভাবে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে। দীর্ঘ রক্তাক্ত সংগ্রামের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতা লাভের সূচনালগ্নে ১৯৭২ সালের ১৪ এপ্রিল নির্বাচিত গণপরিষদে গৃহীত হয় বাংলাদেশের সংবিধান আর ’৭২ সালের সাময়িক সাংবিধানিক আদেশবলে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয় সংসদীয় গণতন্ত্র। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর স্বাধীনতা লাভের সূচনাতেই সংবিধান ও সংসদীয় গণতন্ত্র লাভের এরূপ দৃষ্টান্ত পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। বাংলাদেশের ’৭২-এর সংবিধানকে অত্যন্ত যুগোপযোগী এবং শ্রেষ্ঠ সংবিধানগুলোর একটি বলে আখ্যায়িত করা হয়। গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ও মহান সংবিধানের আলোকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র চর্চার ইতিহাসকে আরও সমৃদ্ধ ও বেগবান করতে আমাদের সক্রিয় হতে হবে। সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত, দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত স্মার্ট বাংলাদেশ, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

স্পিকার জানান, এবারের অধিবেশনে মোট কার্যদিবস ছিল ৫। এ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য ২০টি ও অন্যান্য মন্ত্রীর জন্য ৪৪৯টি প্রশ্নসহ মোট ৪৬৯টি প্রশ্ন পাওয়া গেছে। বিধি-৭১ এ মনোযোগ আকর্ষণের নোটিশ পাওয়া গেছে ৩৬টি। অধিবেশনে উত্থাপনের জন্য ৮টি সরকারি বিলের নোটিশ পাওয়া গেছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ৩টি রিপোর্ট উপস্থাপন করা হয়।

স্পিকার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ সফলভাবে বাস্তবায়নের পর আমরা একটি কল্যাণকামী, উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে রূপকল্প-২০৪১ এবং ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আজকের বাংলাদেশ তরুণদের অপার সম্ভাবনার বাংলাদেশ। আসুন, আমাদের মাতৃভূমিকে এমনভাবে গড়ে তুলি যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এর সুফল ভোগ করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ২০৪১ সাল নাগাদ সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিদীপ্ত, উদ্ভাবনী, উচ্চ অর্থনীতির স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে মাননীয় সদস্যরা অগ্রণী ভূমিকা রাখবেন বলে আমি আশা করি।