২৮ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৯:৪৪:৫৯ পূর্বাহ্ন


৭৫ ঘণ্টা পর নিভল আগুন পুনর্বাসনের প্রস্তুতি শুরু
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০৪-২০২৩
৭৫ ঘণ্টা পর নিভল আগুন পুনর্বাসনের প্রস্তুতি শুরু ফাইল ফটো


রাজধানীর গুলিস্তানে পুড়ে যাওয়া বঙ্গবাজার মার্কেট কমপ্লেক্সের ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। টানা ৭৫ ঘণ্টা পর গতকাল শুক্রবার সকালে আগুন পুরোপুরি নেভার পর ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ শুরু হয়। এর পর থেকে পুনর্বাসন নিয়ে ব্যবসায়ীদের বেশ তোড়জোড় চলছে। তাঁরা ব্যবসায়ী সমিতির নেতাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে দেন-দরবার করছেন।

গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আগুন নেভানোর কাজ শেষ বলে ঘোষণা দেয় ফায়ার সার্ভিস। তারা বলছে, লাগাতার চেষ্টা চালিয়ে এতটা সময় পর আগুন নেভানোর ঘটনা রাজধানীতে এটাই প্রথম।

ধ্বংসস্তূপ সরানোর পর দুর্ঘটনাস্থলে সাময়িকভাবে ব্যবসা চালু করার জন্য উত্সুক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। এ ব্যাপারে  বেশ তোড়জোড়ও দেখা যায় তাঁদের।

মোহাম্মদ আলী নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘অবশেষে দোকানের আগুন নিভেছে। তবে মনের আগুন এখনো নেভেনি। কারণ আগুনে যে ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ হওয়ার নয়। তাই ঈদের আগে কর্তৃপক্ষের কাছে পুনর্বাসনের সুযোগ চাই। বেচাবিক্রি করতে পারলে পরিবারকে কিছু দিতে পারব।’ 

এই আগুনে মোহাম্মদ আলীর প্রায় এক কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানান। তিনি বলেন, তাঁর সাতটি দোকানে ১৫ জন কর্মচারী কাজ করতেন। তারাও আজ অসহায়।

কর্মচারী সুজন বলেন, ‘মালিকের একটা ব্যবস্থা করে দিলে আমরা আবার কাজ করতে পারব।’

এ সময় তাঁর আশপাশে কয়েক শ ব্যবসায়ী ঘোরাঘুরি করছিলেন। তাঁদের বিমর্ষ চেহারায় বারবার চোখ মুছতে দেখা যায়।

ফিরে গেছে ফায়ার সার্ভিস : বঙ্গবাজারে টানা ৭৫ ঘণ্টা পর আগুন নিভিয়ে নিজ ব্যারাকে ফিরেছেন ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা। কাজের সমাপ্তি ঘোষণার পর ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে যান ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তাঁদের ভাষ্য, সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর আর কোথাও আগুন নেভাতে এত সময় লাগেনি। এত ক্ষতিও হয়নি।

ফায়ার সার্ভিস চলে যাওয়ার পর গতকাল অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় প্রবেশ করেন ব্যবসায়ীরা। সকাল ১০টার দিকে সেখান থেকে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়।

সরেজমিন : সকালে বঙ্গবাজারে গিয়ে দেখা যায়, আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত পুরো এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, প্রতিবছর সবচেয়ে বেশি বেচাকেনা হয় ঈদুল ফিতরের সময়। তাই ঈদের আগে নিজ নিজ জায়গায় সাময়িকভাবে ব্যবসা যাতে চালানো যায়, এটাই তাঁদের প্রত্যাশা।

এরই মধ্যে সে ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। গত বৃহস্পতিবার সকালে বঙ্গবাজার পরিদর্শনের পর সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

ঘটনাস্থলের পাশে ফুটপাতের চায়ের দোকানে কড়া রোদে বসে দুই তরুণ ব্যবসায়ী কথা বলছিলেন। একজন সালাম, অন্যজন মাহফুজ। আগুনে দুই তরুণ তাঁদের সর্বস্ব হারিয়েছেন বলে জানালেন। মাহফুজকে সালাম বললেন, ‘একটা চৌকি ম্যানেজ কর, মালের ব্যবস্থা হইয়া যাইব। দোকান খুলতে পারলেই একটু উইঠা দাঁড়াইতে পারমু। আল্লাহ চাইলে আবার শূন্য থিকা শুরু করমু।’

বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ধ্বংসস্তূপের দেখভাল করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। তাদের অনুমতি নিয়ে মেসার্স বুশরা ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ দেওয়া হয়েছে। এসব স্তূপের মালপত্র ৪০ লাখ টাকায় কিনে নিয়েছে তারা।

বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. নাজমুল হুদা বলেন, ‘ধ্বংসস্তূপ সরানোর পর ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের চিন্তা-ভাবনা করা হবে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর অনেক মালপত্র চুরি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, চুরি ঠেকানো যায়নি। তবে এখনো অনেক পোড়া জিনিস পড়ে রয়েছে। সেগুলো দরপত্রের মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠানকে আমরা বিক্রি করে দিয়েছি। তারা এখন এগুলো সরাচ্ছে।’

সব ব্যবসায়ীকে অস্থায়ীভাবে বসার সুযোগ করে দেওয়া সম্ভব হবে কি না—জানতে চাইলে নাজমুল হুদা বলেন, ‘পুড়ে যাওয়া মার্কেটটি দুই থেকে তিনতলা ছিল। এখন সেটি নাই। খোলা জায়গায় সব ব্যবসায়ীকে তো বসার সুযোগ করে দেওয়া সম্ভব নয়। এর পরও আমরা একটি দোকানে দুজন করে বসার সুযোগ করে দেওয়ার চেষ্টা করব।’

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও মালিকদের তালিকার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও মালিকদের তালিকা করার কাজ চলছে। রবিবার আমাদের ব্যবসায়ীদের বৈঠক আছে। সেখানে আমরা চূড়ান্ত তালিকাটি উপস্থাপন করব।’

বঙ্গবাজার ইউনিটের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলে পরিচয় দেওয়া জহিরুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবাজারে দুই হাজার ৯৬১টি দোকান ছিল। সব পুড়ে ছাই। এখন ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ চলছে। এগুলো সরানোর পরই অস্থায়ী ভিত্তিতে ব্যবসায়ীদের বসার ব্যবস্থা করা হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা ধরে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।

ব্যবসায়ী সমিতি জানায়, ক্ষতিগ্রস্তদের বেশির ভাগ বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ী। এর বাইরে মহানগর মার্কেট, আদর্শ মার্কেট ও গুলিস্তান মার্কেটের ব্যবসায়ী রয়েছেন।

তদন্ত ও ভিডিও ফুটেজ যাচাই : বঙ্গবাজার মার্কেট কমপ্লেক্সে কিভাবে আগুন লেগেছিল, তা এখনো জানা যায়নি। ফায়ার সার্ভিসও এ নিয়ে এখন পর্যন্ত কিছু জানায়নি। তবে আগুনের ঘটনা নিয়ে নানা সন্দেহ রয়েছে। গুজব রয়েছে, পরিকল্পিতভাবে সেখানে আগুন দেওয়া হয়। এটা নাশকতা হতে পারে বলে সন্দেহ অনেকের।

এসব মাথায় রেখে আগুনের ঘটনায় পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থা তদন্ত শুরু করেছে। এর মধ্যে ঘটনাস্থল থেকে ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে যাচাই-বাছাই চলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজের বর্ণনা দিয়ে এরই মধ্যে বলা হচ্ছে, আগুন লাগার দিন ভোরের দিকে কিছু যুবক বঙ্গবাজারের ভেতরে ঢোকে। তবে এর সপক্ষে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 

হামলার দুই মামলায় রিমান্ডে ৫ জন : বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের সময় ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তর ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় বংশাল থানায় করা দুই মামলায় পাঁচজনকে এক দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। ঢাকা মহানগর হাকিম মইনুল ইসলাম গতকাল শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। রিমান্ডে পাঠানো পাঁচ আসামি হলেন শওকত হোসেন, ইদ্রিস, খলিল, জাহাঙ্গীর ও আল-আমিন। এ ছাড়া দুই আসামির রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। তাঁরা হলেন বেলায়েত হোসেন ও জসিম।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আজাদ রহমান জানান, বংশাল থানায় পুলিশের করা মামলায় এদিন বেলায়েত হোসেন, জসিম, জাহাঙ্গীর ও আল-আমিনের তিন দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। ফায়ার সার্ভিসের করা মামলায় শওকত হোসেন, ইদ্রিস ও খলিলেরও তিন দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়।