বরকতময় রমজানে আল্লাহর অসন্তুষ্টিমূলক কাজে লিপ্ত হওয়ার সুযোগ নেই। রমজান ও রোজা মহান আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার সুবর্ণ সুযোগ। এ জন্য রমজান ও রোজা হওয়া চাই হারাম, কবিরা গুনাহ ও নাফরমানি কাজ থেকে মুক্ত। রমজানে মিথ্যা, প্রতারণা, অন্যায়, অত্যাচার, পাপাচার, সুদ, ঘুষ ও দুর্নীতি মুক্ত হতে পারলেই রোজার পূর্ণাঙ্গ পুরস্কার গ্রহণ করতে পারবে রোজাদার। রমজানের সময়কে কাজে লাগিয়ে রোজার পুরস্কার পেতে রোজাদারের রয়েছে কিছু করণীয় ও বর্জনীয়।
আল্লাহ তাআলাকে সন্তুষ্ট করার জন্য, মুত্তাকি হওয়ার লক্ষ্য অর্জন করার জন্য রমজানের রোজা সবচেয়ে কার্যকরী। কেননা তাকওয়া অর্জনের জন্যই রোজার বিধান দেওয়া হয়েছে।। এ লক্ষে রমজান মাসে কিছু বিষয়ের প্রতি বিশেষভাবে খেয়াল রাখা দরকার। তাহলো-
সময়ের অপচয় থেকে বিরত থাকা: সেকেন্ড, মিনিট, ঘণ্টা, দিন-রাতের সমষ্টি মানুষের জীবন। জীবনের এই মুহূর্তগুলো বেখেয়াল ও অবহেলায় কাটিয়ে দেওয়ার মানেই হলো সময়টা নষ্ট করে ফেলা। এ সময় আর কখনও ফেরত আসবে না। প্রতিটি মুহূর্ত ও ক্ষণ জীবনে একবারই আসে। প্রত্যেকটি দিন আগমন করে আমাকে আহবান করে তাকে ভালোভাবে ব্যবহার করার জন্য। সে এও বলে দেয়, হিসাবের দিনেই কেবল সে আবার আমার সামনে হাজির হবে। রমজানের প্রতিটি সেকেন্ড, প্রতিটি মুহূর্তকে গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ রমজান যদি ৩০ দিনের হয় তবে তা ২৫,৯২,০০০ (পঁচিশ লাখ বিরান্নব্বই হাজার) সেকেন্ডের সমষ্টি। যা রমজানের চাঁদ উদিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কমতে শুরু করে। তাই রমজানের প্রতিটি মুহূর্তকে আমল-ইবাদত-বন্দেগিতে কাজে লাগানো জরুরি। কোনোভাবেই সময়ের অপচয় করা যাবে না।
রমজানের মূল্যবান সময় যেন গল্পগুজব, আড্ডা, টিভি দেখা, ফেসবুক ও অনলাইনে না কাটে। অবসরে শুধু ঘুমানো, এখানে সেখানে ঘুরাফেরা করা ইত্যাদি কাজগুলোকেও বর্জন করি। তবেই রমজান হবে প্রাণবন্ত। মিলবে রোজার পুরস্কার।
কথা বলা থেকে বিরত থাকা: বরকতময় রমজানে রোজা রেখে বেহুদা কথাবার্তায় সময় কাটানো থেকে বিরত থাকা জরুরি। কথা কম বললে অনর্থক এমন কি ফাহেশা কথা থেকে বেঁচে থাকা যাবে। জীবনের অনেক সময়ও বেঁচে যাবে। বেশি কথা বললে, গীবত, পরনিন্দা, মিথ্যা এ ধরণের অনেক কথা মুখ ফঁসকে বেরিয়ে যেতে পারে। এ সময় অযথা গল্প কথায় লিপ্ত না হয়ে কোরআন তেলাওয়াত, তাফসির অধ্যয়ন, হাদিস পাঠ, বিভিন্ন মাসনুন দোয়া, ইস্তেগফার, দরুদ শরিফ পাঠে সময় কাটাতে পারলেই মিলবে রোজার পুরস্কার। আর তাতেই বরকতময় রমজানে অনায়াসে অনেক বরকতের ভাগিদার হওয়া সম্ভব।
অযথা কাজ থেকে বিরত থাকা: কাজ বা আমল ছাড়া জীবন অচল। রোজাদার মুমিন মুসলমানের প্রতিটি কাজ, চাকরি, ব্যবসা ও কৃষিকাজ; সবই হবে আমল পরিপূর্ণ। কাজের সময় তাসহিব তাহলিল ও আল্লাহর স্মরণই এনে দেবে রোজার আমলের পরিপূর্ণতা। আবার এই রমজানে দুনিয়াদারির কাজের সময়কে কমিয়ে আনাও জরুরি। এ জন্য প্রয়োজন কাজের গতি বাড়িয়ে দেওয়া। কাজের গতি বাড়িয়ে কাজের সময়কে কমিয়ে আনা সহজ। এই বেঁচে যাওয়া সময়টি ইবাদত-বন্দেগি, কোরআন তেলাওয়াত, দরুদ, ইস্তেগফার পাঠে ব্যয় করার মাধ্যমে আমলে মনোযোগী হওয়া যায়। তাহলে দেখা যাবে কাজের এই গতিময়তা পুরো বছর রোজাদারকে দেবে বরকত ও কল্যাণ। আর রমজান মাসে রোজাদার পাবে মহান আল্লাহর বিশেষ পুরস্কার।
সোশ্যাল নেটওয়ার্ক থেকে বিরত থাকা: রমজান মাস মহান রবের এক মহা উপহার। এই মাস সওয়াব অর্জনের মাস। রমজান সোশ্যাল নেটওয়ার্কে যুক্ত থাকার মাস নয়। বিশেষ প্রয়োজনে সীমিত সময়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত থাো যায়। কিন্তু ঘণ্টার ঘণ্টা ফেসবুক, টুইটার, ইনস্ট্রাগ্রাম, ইউটিউব ইত্যাদি মাধ্যমগুলোতে জড়িত থাকার সুযোগ নেই। যথাসম্ভব তা এড়িয়ে চলা আবশ্যক। এ সময়টি ইবাদত-বন্দেগি, কোরআন তেলাওয়াত, দরুদ, ইস্তেগফার পাঠে ব্যয় করার মাধ্যমে আমলে মনোযোগী হওয়া যায়। এসব ইবাদতের মাধ্যমেই মিলবে রোজার বিশেষ পুরস্কার।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে এসব বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার তাওফিক দান করুন। রমজানের রোজা রেখে আমলি জিন্দেগি যাপন করার তাওফিক দান করুন। সময়ের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।