‘পাসপোর্ট বাতায়ন’ কল সেন্টার চালু হওয়ার কারণে এখন থেকে ঘরে বসেই
পাসপোর্টের সব তথ্য জানতে পারছেন সবাই। হয়রানি ও ভোগান্তি এবং দালালের
দৌরাত্ম্যরোধসহ নানা ধরনের বিড়ম্বনায় পড়া সেবাপ্রার্থীদের জন্যই মূলত বিশেষ
কল সেন্টার চালু করেছে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর (ডিআইপি)। অনেকেই
বলছেন, কর্তৃপক্ষ আরো আগে এই কল সেন্টার চালু করলে তাদের ভোগান্তি কম হতো।
গত শুক্রবার ‘পাসপোর্ট বাতায়ন’ কল সেন্টারের যাত্রা শুরু হয়। সম্পূর্ণ
বিনামূল্যে এর সেবা মিলছে। পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে,
সেবাপ্রার্থীরা কল সেন্টারে ফোন করে পাসপোর্ট ও ভিসা সংক্রান্ত সব তথ্য
পাবেন। বাংলাদেশের নাগরিকরা দেশের অভ্যন্তর থেকে ১৬৪৪৫ এবং প্রবাস কিংবা
বিদেশ থেকে ০৯৬৬৬৭১৬৪৪৫ হটলাইন নম্বরে কল করে পাসপোর্ট সংক্রান্ত তথ্য ও
পরামর্শ পাবেন। বিদেশি নাগরিকরাও একই নম্বরে কল করে ভিসা সংক্রান্ত তথ্য ও
পরামর্শ পাবেন।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, এ কল সেন্টারে সপ্তাহে ৭ দিন এবং ২৪ ঘণ্টাব্যাপী
পাসপোর্ট সম্পর্কিত তথ্যসেবা পাওয়া যাবে। বাংলাদেশ টেলিফোন রেগুলেটরি কমিশন
(বিটিআরসি) থেকে বরাদ্দকৃত নম্বরের মাধ্যমে ঢাকার কারওয়ান বাজারের
বিডিবিএল ভবনে, প্রতি শিফটে ১৬ জন করে কল সেন্টারে এজেন্ট প্রতিনিধি কাজ
করবেন। প্রতিদিন ৩ শিফটে ৪৮ জন প্রতিনিধি ২৪ ঘণ্টা সেবা দেবেন।
বাংলাদেশ পাসপোর্ট অধিদপ্তর থেকে সবাইকে প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজের জন্য
প্রস্তুত করা হয়েছে। সেবাপ্রার্থীরা পাসপোর্ট সম্পর্কিত সঠিক হালনাগাদ তথ্য
বা নতুন কোনো আপডেট এলে কল করে জানতে পারবেন। পাসপোর্ট অধিদপ্তর মনে করছে,
এর ফলে দালালদের দৌরাত্ম্য কিছুটা হলেও কমবে।
কর্মকর্তাদের ভাষ্য, পাসপোর্টের সর্বশেষ তথ্য জানতে দেশের সব পাসপোর্ট
অফিসের মোবাইল নম্বর দেয়া আছে। বর্তমানে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে কাজের চাপ
বেড়ে যাওয়ায় সব নাগরিকের সেবা এক জায়গা থেকে দেয়ার জন্য আলাদা এই কল
সেন্টার চালু করা হলো। এর ফলে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে চাপ কমবে ও এক জায়গা
থেকে সব সেবা পাওয়া যাবে।
মূলত পাসপোর্ট বাতায়নের মাধ্যমে ই-পাসপোর্ট, এমআরপি পাসপোর্ট ও ভিসা
সম্পর্কিত তথ্যসেবা পাওয়া যাবে। এই কল সেন্টারের মাধ্যমে ই-পাসপোর্টের
বর্তমান অবস্থা ই-পাসপোর্ট ডেলিভারি সম্পর্কিত তথ্য জানা যাবে।
আবার অনলাইনে আবেদন করতে কোনো সমস্যা হলে এর সমাধান সম্পর্কে বুঝিয়ে দেবেন।
কেউ আবেদন করতে না পারলেও তা বুঝিয়ে দেয়া হবে। আবেদনকারী যে কোনো অভিযোগও
জানাতে পারবেন। একদিকে কল সেন্টার থেকে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস সম্পর্কে
তথ্য জানা যাবে, আবার এমআরপি পাসপোর্টের অবস্থা (প্রবাসীদের জন্য), এমআরপি
পাসপোর্টের ডেলিভারি ও ভিসার ক্ষেত্রে এমআরভি সংক্রান্ত তথ্য জানা যাবে।
পাসপোর্ট হেল্পলাইনের সেবা নিতে ফি দিতে হবে না। শুধু যে ফোন অপারেটরের
মাধ্যমে সেবাগ্রহীতা কথা বলবেন সেই অপারেটর বা কোম্পানি প্রতি মিনিটে যে
চার্জ কাটে সেটাই কেটে নেবে। সরাসরি কল ছাড়াও হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো,
মেসেঞ্জারসহ সব ধরনের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে চ্যাটিংয়ের মাধ্যমেও তথ্য
পাওয়া যাবে।
জানতে চাইলে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল নুরুল আনোয়ার
গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, গত ৩১ মার্চ থেকে চালু হওয়া কল সেন্টারে এ
পর্যন্ত মোট কল এসেছে ১৭ হাজার ৯৮২টি। এর মধ্য থেকে জবাব দেয়া হয়েছে ১৬
হাজার ৫৯৩টির। তিনি বলেন, বর্তমান বাস্তবতায় কল সেন্টারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে
নতুন করে বলার কিছু নেই। এরই মধ্যে বিভিন্ন জায়গা থেকে ইতিবাচক সাড়া
পাচ্ছি। পাসপোর্ট সেবা জনবান্ধব করতে আমরা আরো কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। অচিরেই
সেবাগ্রহীতারা সুফল পাবে বলে আমার বিশ্বাস।
পাসপোর্ট কল সেন্টারের ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা ও অধিদপ্তরের সিস্টেম
অ্যানালিস্ট মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ভূঞা ভোরের কাগজকে বলেন, কল সেন্টার চালু
হওয়ায় পাসপোর্ট সেবায় পরিবর্তন আসছে। এর কারণ হলো- পাসপোর্ট সংক্রান্ত সব
তথ্য ঘরে বসেই মিলছে। ফলে পাসপোর্ট ঘিরে দালালচক্রের যে দৌরাত্ম্য রয়েছে তা
অনেকাংশেই কমবে। এতে জনভোগান্তিও কমবে।