দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে।
চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম সুড়ঙ্গ
পথ ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’ এখন দৃশ্যমান। উদ্বোধনের আগে আগামী মাসের মাঝামাঝি
সময়ে এই মেগা প্রকল্পের প্রি-কমিশনিং, কমিশনিং ও ট্রায়াল হবে। ট্রায়ালে ছোট
বড় খুঁটিনাটি সব কাজে সবুজ সংকেত পাওয়া গেলে এ টানেলে যান চলাচলের জন্য
উন্মুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। দুই টিউব ও চার লেনের এই টানেল দেশের জন্য
যেমন গৌরবের তেমনি বিস্ময়েরও। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে টানেল থাকলেও শুধু
দেশে নয়, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে এটিই প্রথম টানেল। দেশে বর্তমান সরকার যেসব
মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বঙ্গবন্ধু টানেল তার অন্যতম।
টানেল প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশীদ চৌধুরী জনকণ্ঠকে জানান, প্রায়
৯৭ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে। অবশিষ্ট ৩ শতাংশের কাজ দ্রুত এগিয়ে
যাচ্ছে। একেবারে শেষ পর্যায়ে ইলেক্ট্রো মেকানিক্যাল কার্যক্রমের। তিনি
জানান, সব ধরনের কনস্ট্রাকশন কাজও সম্পন্ন হয়েছে। টানেলের উত্তর ও
দক্ষিণাংশে এপ্রোচ রোড নির্মাণ কাজও ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
জোয়ার-ভাটার নদী কর্ণফুলী। অসমের লুসাই পাহাড় থেকে এ নদীর উৎপত্তি হয়ে বাংলাদেশ অংশে প্রবাহিত হয়েছে। মিলেছে বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে।
চট্টগ্রামের পতেঙ্গা পয়েন্ট উপকূলে সাগরের মোহনার অদূরে নদীর তলদেশ দিয়ে
ঝুঁকিপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জিং এই টানেল নির্মাণ কাজ শুরুর পর থেকে শুধু
এগিয়েছে। কোভিডকালীন একদিনের জন্যও এর কার্যক্রম বন্ধ হয়নি। তবে
দেশী-বিদেশী প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে
কাজের গতি সামান্য হ্রাস পেয়েছিল। পরবর্তীতে পূর্ণোদ্যমে কাজের গতির ছন্দ
ফিরে পায়। সে থেকে টানেলের কাজ শুধু এগিয়েছে। এখন একেবারে শেষ পর্যায়ে
এসেছে। এটি একটি অপার বিস্ময়ের ঘটনা হিসেবেও মনে করা হচ্ছে।
প্রকল্প দপ্তর সূত্রে আরও জানা গেছে, এ প্রকল্পের মেয়াদ আগামী ডিসেম্বর
পর্যন্ত থাকবে। এর আগেই সেতু বিভাগের উদ্যোগে এর উদ্বোধনের দিনক্ষণ ঠিক করা
হবে। এর আগে আগামী মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে প্রকল্প কাজের প্রি-কমিশনিং,
কমিশনিং ও ট্রায়ালের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে সব ধরনের
ইলেক্ট্রো মেকানিক্যাল কাজের পাশাপাশি ভেন্টিলেশন, পাওয়ার কমিউনিকেশন
ইত্যাদি যাবতীয় কাজের শেষ পর্ব চলছে। প্রি-কমিশনিং, কমিশনিং এবং ট্রায়ালে
সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে সব ধরনের সিস্টেম সুচারুরূপে কাজ করছে
কিনা।
বিশেষজ্ঞগণ এতে সন্তুষ্ট হলে টানেল খুলে দেওয়ার গ্রিন সিগন্যাল প্রদান
করা হবে। এরপর বিষয়টি সরকারে উচ্চ পর্যায়ে অবহিত করা হবে। এরপরই উদ্বোধনের
দিনক্ষণ ঠিক করা হবে। সূত্রে জানানো হয়, উদ্বোধন পরবর্তী নিশ্চিতভাবে
জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে। প্রকল্প সূত্রে আরও জানানো হয়,
কর্ণফুলী নদীর মাঝ বরাবর তলদেশ থেকে সর্বোচ্চ ৩৬ মিটার থেকে ১৮ মিটার
পর্যন্ত গভীরতায় এ টানেল নির্মিত হয়েছে।
দেশের আপামর জনতা স্বপ্নের এই টানেল চালু হলে বৃহত্তর চট্টগ্রামে সার্বিক
চিত্র পাল্টে যাবে বলে আশা রয়েছে। এর ফলে প্রসারিত হবে চট্টগ্রাম শহর।
ব্যবসা-বাণিজ্যে আসবে নতুন গতি। সক্ষমতা বাড়বে চট্টগ্রাম বন্দরে। নগরীর
অভ্যন্তরে যানজট অনেকাংশে হ্রাস পাবে। চীনের সাংহাই সিটির আদলে চট্টগ্রাম
হবে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’। ফলশ্রুতিতে পর্যটন খাতেরও অভূতপূর্ব বিকাশ ঘটবে।
বৈশি^ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মিয়ানমার হয়ে চীনের কুনমিং
শহর পর্যন্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
মহানগরীর পতেঙ্গা পয়েন্ট ও দক্ষিণ পাড়ের আনোয়ারা সরাসরি সংযুক্ত হচ্ছে এই
টানেলের মাধ্যমে।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে সংসদ নির্বাচনের পূর্বে চট্টগ্রামে লালদীঘি মাঠে
সমাবেশে এই টানেল নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই টানেল নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে।