১৮ মে ২০২৪, শনিবার, ১২:৫৫:১২ অপরাহ্ন


শালবাগানেই কেনাবেচা হয় ৫০ কোটি টাকার তরমুজ
ইব্রাহিম হোসেন সম্রাট:
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-০৪-২০২৩
শালবাগানেই কেনাবেচা হয় ৫০ কোটি টাকার তরমুজ ছবি- পারভেজ ইসলাম


দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে তরমুজ আসে রাজশাহীতে। মৌসুমি ফল তরমুজ কেনাবেচার জন্য নগরীর শালবাগানে গড়ে উঠেছে বড় বড় সব ফলের আড়ত। আড়তগুলোতে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে তরমুজ কেনাবেচা। তরমুজকে কেন্দ্র করে আড়তগুলোতে প্রতিদিন লেনদেন হয় প্রায় ৫০ লাখ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, তরমুজের মৌসুমে সেখানে মাত্র সাড়ে তিন মাসেই কেনাবেচা হয় ৫০ কোটি টাকার বেশি।

এছাড়াও তরমুজকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা আড়তগুলোর কারণে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে হাজারো মানুষের। ফলে এটাকে ইতিবাচক বলছেন রাজশাহীর ব্যবসায়ী নেতারা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজশাহীর শালবাগান মোড় মূলত ফলের বাজার। এখানে মৌসুমি ফল কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে অনেকগুলো আড়ত। এ বছর শালবাগানের আটটি আড়তে নামছে তরমুজ। তরমুজগুলো দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রাকে করে নিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা। এরপর তা আড়তে নামিয়ে পাইকারি বিক্রি করা হয়। পরবর্তীতে এই আড়ত থেকে তরমুজ কিনে জেলার গোদাগাড়ী, তানোর, বাগমারা, মোহনপুর ও দুর্গাপুর উপজেলায় নিয়ে যান দোকানি ও ব্যবসায়ীরা। এমন কর্মযজ্ঞে সকাল থেকে রাতভর হাঁকডাকে ব্যস্ত থাকে শালবাগানের ফলের আড়তগুলো।

চলতি মৌসুমের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ট্রাকে করে তরমুজ আসা শুরু হয় রাজশাহীর শালবাগানে। প্রতিদিন গড়ে ২০টি ট্রাকে তরমুজ আসে এখানে। একেকটি ট্রাকে তরমুজ থাকে গড়ে ২ হাজার ৫০০টি থেকে ৩ হাজারটি। প্রতি ট্রাক তরমুজের দাম ওঠে তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত বলে জানান ব্যবসায়ীরা। সব কিছু ঠিক থাকলে এই ধারা অব্যাহত থাকবে আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত।

পটুয়াখালীর খেতুপাড়ার তরমুজ চাষি জয়নাল হাওলাদার। এ বছর তিনি ৩২ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। পটুয়াখালীতে কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে ট্রাকে করে তরমুজ নিয়ে এসেছেন রাজশাহীতে। তরমুজ চাষি জয়নাল হাওলাদার বলেন, তরমুজ বিক্রির জন্য গত রাতে ট্রাকে করে রাজশাহীতে এসেছি। ট্রাক থেকে তরমুজ নামানো হয়েছে। কিছু বিক্রিও হয়েছে। আরও কিছু বাকি রয়েছে। পটুয়াখালীতে প্রচুর তরমুজ চাষ হয়। সেখানে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন অনেক বেশি হওয়ায় দাম কম পাওয়া যায়। পটুয়াখালী থেকে সারাদেশেই তরমুজ সরবরাহ হয়ে থাকে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের পটুয়াখালীতে তরমুজ বিক্রি হয় পিস হিসেবে। সেখানে তরমুজের অনেক কম দাম। চলতি বছরের মতো বিগত বছরগুলোতে তরমুজের দাম এতো কম যায়নি। সেখান থেকে ট্রাকযোগে রাজশাহীতে তরমুজ নিয়ে এসেছি। এখানেও বেচা-বিক্রির অবস্থা ততটা ভালো না। এখানেও আমদানি বেশি। তবে পটুয়াখালীর চেয়ে এখানে দাম ভালো আছে।

পটুয়াখালীর গলাচিপার অপর তরমুজ চাষি নজরুল ইসলাম বলেন, ২০০ বিঘা জমিতে তরমুজ রয়েছে তার। স্থানীয় বাজারে তেমন দাম নেই। সেখানে একটি তরমুজের দাম ১২০ থেকে ১৬০ টাকা। এতে করে আমাদের লোকসান হচ্ছে। তরমুজ বিক্রির জন্য বেশ কিছু দিন ধরে রাজশাহীর শালবাগান আড়তে থাকছি। একদিকে মালের দাম কম, অন্যদিকে নিজের খরচ তো আছেই। সব মিলিয়ে অবস্থা ততটা ভালো না।

ট্রাকচালক মো. হেলাল বলেন, পটুয়াখালী থেকে ট্রাকে তরমুজ লোড দিয়েছি। পথে কোথাও থামিনি। এক টানা রাজশাহীতে এসে থেমেছি। পথে কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি।

আড়তদার ও ব্যবসায়ী মো. মানিক জানান, প্রতি মণ তরমুজ বিক্রি হচ্ছে প্রকারভেদে ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা। এমন দাম গত তিন দিন থেকে রয়েছে। এছাড়া খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা দরে।

ভ্যানে করে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় তরমুজ বিক্রি করেন মৌসুমি ফল বিক্রেতা লালন ইসলাম। তিনি বলেন, আমার বাবারও পেশা ছিল তরমুজ বিক্রি। এখন আমি বিক্রি করি। আমি সাধারণত মাছ বিক্রি করতাম। কিন্তু বছরের এই সময়ে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ভ্যানে করে তরজুম বিক্রি করি। আমাদের এখানে (আড়তে) ওজনে তরমুজ কিনতে হয়। ওজনে তরমুজ বিক্রি করতে হয়। আগের থেকে তরমুজের দাম কমেছে।

রাজশাহী ফল ব্যবসায়ী উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি শাহিন হোসেন কালু জানান, রাজশাহীর শালবাগানে প্রতিদিন গড়ে ২০ থেকে ২২ ট্রাক তরমুজ আসে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে। একেকটি ট্রাকে গড়ে ২ হাজার ৫০০টির বেশি তরমুজ থাকে। একেক ট্রাক তরমুজের দাম ধরা হয় তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত। শালবাগানের আটটি আড়তে তরমুজ বিক্রি হয়। প্রতিদিন মধ্যরাত পর্যন্ত চলে তরমুজ বিক্রির কর্মযজ্ঞ।

তিনি আরও বলেন, সাধারণত বরিশাল, খুলনা, দিনাজপুর, চুয়াডাঙ্গা ও পটুয়াখালী থেকে তরমুজ নিয়ে আসেন ব্যবসায়ী ও চাষিরা। তরমুজগুলো জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যান।

এ বিষয়ে রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু বলেন, যে কোনো কিছুর চাকা ঘুরলে অটোমেটিক অর্থনীতির চাকা ঘোরে। যেমন বাস, ট্রাক ও রিকশা। এই চাকাগুলো ঘুরলে তো মানুষের টাকা উপার্জন হয়। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে তরমুজ রাজশাহীতে নিয়ে আসা হয়। এখানকার আড়তে রেখে আবার বিক্রি করা হয়। এই সমস্ত কাজের সঙ্গে হাজারও মানুষ জড়িত থাকায় তাদের কমবেশি টাকা উপার্জন হচ্ছে, সংসারও চলছে।