০৫ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ০১:৫৫:০৩ অপরাহ্ন


ম্যাপের আগে নতুন চর বন্দোবস্ত নয়
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০৪-২০২৩
ম্যাপের আগে নতুন চর বন্দোবস্ত নয় ফাইল ফটো


জরিপকাজ সম্পাদন ও মৌজা ম্যাপ চূড়ান্ত না করে নদ-নদীতে জেগে ওঠা নতুন চরের বন্দোবস্ত দেওয়া যাবে না। এর ব্যত্যয় হলে সংশ্লিষ্ট জেলার প্রশাসকসহ এসব অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি বিদ্যমান আইন এবং আদালতের রায়ের আলোকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 

গত বছর ডিসেম্বরে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে ‘আন্তঃজেলা সীমানা বিরোধের নিষ্পত্তির ভিত্তি হবে সিএস রেকর্ডের সীমানা ও বাউন্ডারি’ শীর্ষক গবেষণার সুপারিশের আলোকে ভবিষ্যৎ করণীয় বিষয়ে অনুষ্ঠিত সভায় এমন সিদ্ধান্ত হয়। ওই সভায় বলা হয়, প্রাকৃতিক নিয়মে নদীর অবস্থান পরিবর্তনের ফলে আন্তঃজেলা সীমানা বিষয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এসব পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আন্তঃজেলা সীমানা বিরোধের নিষ্পত্তির ভিত্তি হবে সিএস রেকর্ডে নির্ধারিত সীমানা বা বাউন্ডারি। বিদ্যমান আইন এবং আদালতের রায়ের আলোকে এসব জটিলতার নিরসন হওয়া প্রয়োজন।

সারা দেশে ছোট-বড় মিলিয়ে আড়াই শতাধিক নদী রয়েছে। প্রতিবছর দেশের ৩২ কিলোমিটার ভূমি নদী ভাঙনে ও সমুদ্রে হারিয়ে যাচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা ও পদ্মা দিয়ে ১০০ কোটি টন পলি বঙ্গোপসাগরে জমা পড়ছে। এসব পলিমাটি ভরাট হয়ে নতুন নতুন চর জেগে উঠছে। 

ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্রমতে, ১৯১৩ সালে নোয়াখালী উপকূলের তটরেখা ছিল বর্তমান জেলার সোনাপুরের কাছাকাছি। তবে পরের ১০০ বছরে তা ৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণে প্রসারিত হয়ে কেয়ারিংচরে এসে ঠেকে। মূলত মেঘনার ভাঙন থেকে নোয়াখালীকে রক্ষা করতে ১৯৫৭ ও ১৯৬৪ সালে দুটি ক্রসড্যাম নির্মাণ করা হয়। ফলে পলিমাটি জমে সেই অঞ্চল উঁচু হয়ে যায়, আশপাশে নতুন চর জেগে উঠতে শুরু করে। এ ছাড়া ১৯৮৬ সালে ফেনী নদীর মোহনায় মুহুরী বাঁধের কারণে বিশাল চরের বিকাশ ঘটে। ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত এ সীমানা আরও প্রায় ২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে প্রসারিত হয়েছে। মেঘনা নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় জেগে ওঠা ছোট চর ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। অচিরেই যা দেশের মূল ভূখণ্ডে যুক্ত হবে। 

বাংলাদেশ সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিসের (সিইজিআইএস) তথ্যমতে, বাংলাদেশে নতুন ভূখণ্ড জেগে ওঠার পেছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে ১৯৫০ সালের আসাম ভূমিকম্প। হিমালয় থেকে নদীগুলো বেয়ে বিপুল পরিমাণ পলি নেমে আসতে থাকে। ফলে ১৯৪৩ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের ভূখণ্ডে প্রতিবছর ৪৩ বর্গকিলোমিটার করে ভূমি জেগে ওঠে। ওই সময়ই নোয়াখালী ও ফেনী জেলার বেশিরভাগ ভূমি গড়ে ওঠে। 

ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের (আইডব্লিউএম) হিসাবে, ১৭৮০ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত ২০০ বছরে বাংলাদেশের দক্ষিণে ৬২৯ বর্গকিলোমিটার আয়তন বেড়েছে। পরের ৪১ বছরে ভূমি উদ্ধার প্রকল্প ও চর উন্নয়ন এবং বসতি স্থাপন প্রকল্পের আওতায় উন্নয়ন করা হয়েছে আরও ৮৩ হাজার ৭৯৮ একর জমি। গত ১০০ বছরে নতুন জেগে ওঠা চরের তালিকায় রয়েছে- নোয়াখালী উপকূলের নিঝুমদ্বীপ, নলেরচর ও কেয়ারিংচর; চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার উত্তর-পশ্চিমে উড়ির চর ও পাঁচ কিলোমিটার পশ্চিমে ভাসানচরসহ অনেক দ্বীপ। প্রায় দুই দশক আগে জেগে ওঠা ভাসানচরে ইতোমধ্যে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে কক্সবাজার থেকে স্থানান্তর করা হয়েছে। ভাসানচরের দেড় কিলোমিটার দক্ষিণে জেগেছে ১০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের গাঙ্গুরিয়ার চর। এখানে চাষাবাদও শুরু হচ্ছে। ফলে সেখানকার মানুষের অনেকাংশে বেকারত্ব দূর হবে। পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতেও ভূমিকা রাখবে।

অন্যদিকে মেঘনার অব্যাহত ভাঙনে দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় ভূমি যেমন বিলীন হচ্ছে, তেমনি এর বিপরীতে চারপাশে অন্তত ১০ গুণ ভূমি জেগে উঠেছে। হাতিয়ার পশ্চিমে নতুন করে জেগে উঠেছে ঢালচর, চর মোহাম্মদ আলী, চর ইউনুস, চর আউয়াল, মৌলভীর চর, তমরুদ্দির চর, জাগলার চর, ইসলামচর, নঙ্গলিয়ার চর, সাহেব আলীর চর, দক্ষিণে কালামচর। এ ছাড়া হাতিয়া নদীতে সাতটি নদীর মধ্যে কলাতলী, তেলিয়ার চর, বদনার চর, ঢালচর ও মৌলভীর চরে বনায়ন ও চাষাবাদ চলছে। আগামী এক দশকে এসব চরের আয়তন হবে প্রায় ৫০০ বর্গকিলোমিটার। এ ছাড়া বরিশাল, খুলনাসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সাগরের বুক চিরে জেগে উঠছে নতুন চর। এসব চরের ভূমির পরিমাণও প্রায় ৩৩ হাজার বর্গকিলোমিটার হতে পারে।

এ প্রসঙ্গে ভূমি সচিব মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সারা দেশে জমির সীমানা নির্ধারণে স্থায়ী ডিজিটাল পিলার বসানোর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। নদীভাঙনে ভূমির সিকস্তি ও পয়স্তি হলেও সীমানা সুনির্দিষ্ট থাকবে। জরিপ ও মৌজা ম্যাপ চূড়ান্ত না হলে চরের বন্দোবস্ত দেওয়া যাবে না। 

সিইজিআইএসের রিমোট সেন্সিং ডিভাইস বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, ১৯৭৩ সাল থেকে নোয়াখালী উপকূলে নতুন চর জেগে ওঠা নিয়ে কাজ করছে সরকার। স্যাটেলাইট ইমেইজ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রতিবছর প্রায় ২০ বর্গকিলোমিটার নতুন ভূখণ্ড যুক্ত হচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা ও পদ্মা নদী দিয়ে পলি নেমে আসার পরিমাণ কমেছে। একই সঙ্গে নতুন জেগে ওঠা চর বিভিন্ন কারণে হারিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া নদীভাঙনও বৃদ্ধি পেয়েছে।