২৮ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৫:৩৭:২২ পূর্বাহ্ন


স্বস্তি দেবে বাজেট! ভোগ্যপণ্যের দাম কমানোর লক্ষ্য
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০৪-২০২৩
স্বস্তি দেবে বাজেট! ভোগ্যপণ্যের দাম কমানোর লক্ষ্য ফাইল ফটো


সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় সহনীয় করতে আগামী বাজেটে রেকর্ড পরিমাণ ভর্তুকি বরাদ্দ দিতে যাচ্ছে সরকার। এতে ভোগ্য ও নিত্যপণ্যের দাম কমানোর পদক্ষেপ থাকবে। বাড়ানো হবে কৃষি উৎপাদন। এছাড়া দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ করে কর্মসংস্থান বাড়ানোর মতো কর্মসূচি নেয়া হবে। এ লক্ষ্যে ভর্তুকি ও নগদ প্রণোদনা খাতে প্রায় ৩৫ শতাংশ ব্যয় বাড়িয়ে ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রাক্কলন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, এটি হবে জনবান্ধব বাজেটে। এর মাধ্যমে দেশের মানুষকে স্বস্তি দেওয়া হবে। এজন্য নতুন বাজেটের আকারও বাড়ানো হচ্ছে। প্রায় পৌনে ৮ লাখ কোটি টাকার রেকর্ড বাজেট প্রণয়নের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে অর্থবিভাগ। আগামী ১ জুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এর আগে আগামী ৫ এপ্রিল অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে বাজেট ব্যবস্থাপনা ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে বাজেটের রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ প্রদানের শর্তগুলোর চ্যালেঞ্জ সামনে রেখেই আগামী বাজেটে ভর্তুকি ও নগদ প্রণোদনা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এটি করা হবে দেশের মানুষ করে স্বস্তি দিতে। বৈশ্বিক সংকটের কারণে এক বছরের বেশি সময় ধরে অর্থনীতি চাপের মুখে রয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো দেশেও ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এছাড়া জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দেশে যাতে আর মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি বা জিনিসপত্রের দাম না বাড়ে সেদিক সতর্ক দৃষ্টি রাখছে সরকার। এ কারণে বৈশ্বিক সংকটের মুখে অর্থনীতি চাপে থাকলেও আগামী বাজেট হবে জনবান্ধব ও কর্মসংস্থানমুখী। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, চলতি বাজেটের চেয়ে প্রায় সাড়ে ১৩ শতাংশ বাড়িয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে প্রণয়ন করা হচ্ছে। এতে বাজেটের আকার হবে প্রায় ৭ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকার মতো। তবে চলতি অর্থবছরের তুলনায় বাড়তি ব্যয়ের অধিকাংশ যাবে ঋণের সুদ পরিশোধ ও ভর্তুকিতে। পক্ষান্তরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ বাড়ানোর প্রাক্কলন করা হয়েছে ৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ব্যয়ের আকার ছিল ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা।

জানা গেছে, বাজেট ব্যয়ের প্রাথমিক প্রাক্কলন আগামীকাল ২ এপ্রিল অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে বাজেট প্রাক্কলন পরীক্ষা-সংক্রান্ত কারিগরি কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হবে। এরপর ৫ এপ্রিল অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে বাজেট ব্যবস্থাপনা ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। ওই বৈঠকে চলতি অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের সম্ভাব্য আকারের খসড়া তৈরি করা হবে। আগামী ১ জুন জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপন করা হতে পারে। ইতোমধ্যে সংসদ সচিবালয়কে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে অর্থ বিভাগ। এছাড়া অর্থমন্ত্রী সম্প্রতি অর্থনীবিদ, ব্যবসায়ী ও প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সম্পাদকদের সঙ্গে বাজেট নিয়ে পৃথক বৈঠক করেছেন। ওইসব বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, আগামী বাজেট হবে জনবান্ধব, মানুষকে স্বস্তি দিতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। তবে সরকারের আয় বাড়ানোর বিষয়টিতেও গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

এদিকে অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং অন্যান্য কারণে মূল্যস্ফীতির প্রভাবে চলতি অর্থবছরে বিভিন্ন খাতে সরকারের দেওয়া ভর্তুকি বেড়েছে। আগামী অর্থবছরেও তা অব্যাহত রাখা হতে পারে। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয় ৮২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। অবশ্য সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ৯৯ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা করা হয়। এর মধ্যে শুধু কৃষি খাতে বাড়ানো হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। আগামী বাজেটে সবমিলিয়ে ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা এ খাতে বরাদ্দ রাখা হতে পারে। এদিকে আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্ত হিসেবে সার্বিকভাবে ভর্তুকি কমিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ রয়েছে সরকারের সামনে। শর্ত পরিপালনে ইতোমধ্যে বিদ্যুতের দাম কয়েক দফা বাড়িয়েছে সরকার। তবে বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে খাদ্য ও কৃষিতে সরকারকে ভর্তুকি বাড়াতে হচ্ছে। জ্বালানিতে ভর্তুকি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও সার্বিকভাবে ভর্তুকি বাড়াতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা।

এদিকে আইএমএফের শর্তানুযায়ী গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলেও নির্বাচনী বছরে দাম খুব বেশি বাড়ানোর সুযোগ নেই। আইএমএফের পক্ষ থেকে এ দুই খাতে ভর্তুকি কমানোর শর্ত দেওয়া হয়েছে। সেটি মাথায় রেখেই নির্বাচনী বছরে অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনা ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভর্তুকিতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও কয়লার দাম কমে যুদ্ধপূর্ব পর্যায়ে গেলেও, তা প্রাক-মহামারি পর্যায়ে পৌঁছাতে আরও সময় লাগবে। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, ভর্তুকি ও প্রণোদনা বাড়িয়ে হয়তো সরকার জনগণে স্বস্তি দিতে চাচ্ছে। যেভাবে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে তাতে জনবান্ধব বাজেট প্রণয়ন করা খুব জরুরি। তবে আইএমএফের ঋণের পরবর্তী কিস্তিগুলো নিশ্চিত করতে হলে তাদের শর্তগুলো মেনে চলার ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে।

জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে সরকারের পরিচালন বাজেটে ব্যয়ের সবচেয়ে বড় খাত হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে ঋণের সুদ পরিশোধ। সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের বিপরীতে টাকা অবমূল্যায়ন, লাইবর রেট অত্যধিক বেড়ে যাওয়া, ইউএস ট্রেজারির সুদহার বাড়ার পাশাপাশি দেশের বাজারে ট্রেজারি বন্ডের সুদহার বাড়ায় আগামী অর্থবছরে সরকারকে সুদ বাবদ ব্যয় প্রায় ২৭ শতাংশ বাড়িয়ে ১ লাখ ২ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করতে হতে পারে বলে মনে করছে অর্থ বিভাগ। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮০ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা। সুদ ও ভর্তুকিতে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ বেশি বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। চলতি বাজেটের তুলনায় এ খাতে বরাদ্দ মাত্র ৬ শতাংশ বাড়িয়ে আগামী বাজেটে ২ লাখ ৬০ হাজার ৮০০ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করছে অর্থ বিভাগ। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয় ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা।

এদিকে দেশী-বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে হলে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি, বিশেষ করে অবকাঠামো খাতে বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী উদ্যোক্তারা। তাদের মতে, এলডিসি গ্রাজুয়েশন করতে হলে কর্মসংস্থানমুখী বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। এজন্য অবকাঠামো উন্নয়ন প্রয়োজন। এখাতে সরকারি বিনিয়োগ বাড়লেই কেবল বেসরকারি খাত উৎসাহিত হবে। এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি মো. আমিন হেলালী জনকণ্ঠকে বলেন, আগামী বাজেট ব্যবসা ও জনবান্ধব করতে হবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।

সামাজিক নিরাপত্তায় জোর ॥ আগামী বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে জোর দেয়া হচ্ছে। অর্থনীতি দ্রুত পুনরুদ্ধার হবে- এমন আশায় আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা। এটি হচ্ছে টাকার অঙ্কে রেকর্ড-এ যাবতকালের সর্বোচ্চ ব্যয় বরাদ্দের বাজেট। দ্রব্যমূল্য কমাতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে কর ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি, দারিদ্র্য দূরীকরণে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানো এবং অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প গ্রহণ থেকে সরে আসার মতো পদক্ষেপ গ্রহণে গুরুত্ব দেয়া হবে। আগামী বাজেটে দারিদ্র্য কমিয়ে আনতে সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বাড়ানো হবে। বিশেষ করে নতুন করে বয়স্ক ও বিধবা ভাতা দিতে দেশের সব উপজেলায় দেওয়ার মতো কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।