ইফতার পার্টি না করে সেই টাকা গরিব মানুষের দান করে দিতে সবার প্রতি সম্প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের সাড়া দিয়ে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় কৃচ্ছ্রতা সাধনের অংশ হিসেবে ইফতার পার্টির আয়োজন থেকে সরে এসেছে প্রধান রাজনৈতিক দলসহ বেশকিছু সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।
আর দেশের বাজার ব্যবস্থাকে স্থিতিশীল রাখতে এমন সিদ্ধান্ত কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। এর ফলে সবার মধ্যে সঞ্চয়ের প্রবণতা বাড়বে বলেও তাদের ধারণা।
ঘটা করে ইফতার পার্টির আয়োজন দেশের ইতিহাসে খুব বেশি দিনের পুরনো নয়। তবে বিগত কয়েক বছর ধরে চলে আসছে এ আয়োজন। এমন ইফতার পার্টির আয়োজক মূলত বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠন, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। যেখানে খাবারের চেয়ে অপচয়টাই হয় বেশি।
ইফতার পার্টির উদ্দেশ্য পাশে রেখে এবার একটু দৃষ্টি দেয়া যাক এমন মহা আয়োজনের খরচের খাতায়। সরকারি একটি সংস্থা ২০২২ সালের ইফতার পার্টির জন্য দাওয়াত কার্ড বিতরণ করে ২ হাজার ৯০০ জনকে। সংস্থার সদস্য ছাড়াও আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে ছিলেন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, আমলা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ গণমাধ্যম কর্মীরা।
তাদের ছাড়াও আরও অন্তত ৩০০ মানুষ বেশি ধরে ইফতারের আয়োজন হয়। ওই আয়োজনে খাবারের জন্য জন প্রতি খরচ হয় ৪৫০ টাকা। সে হিসেবে শুধুমাত্র খাবার বাবদ খরচ দাড়ায় প্রায় ১৫ লাখ টাকা। এর বাইরেও ছিল খরচের নানা খাত।
সম্প্রতি, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের এমন সময়ে ইফতার অনুষ্ঠান না করে সেই টাকা গরিব মানুষদের দান করে দিতে সামর্থবানদের প্রতি সম্প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন মানবিক আবেদনে সাড়া দিয়ে ইফতার পার্টির প্রস্তুতি নিয়েও এরই মধ্যে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে বাংলাদেশ পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও দলটির অন্যান্য সহযোগী সংগঠনগুলো।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সহকারী কমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স) মো. ফারুক হোসেন বলেন, আমাদের প্রান্তিক পর্যায়ের লোকগুলো যে আর্থিক সংকটের মধ্যে আছে, ইফতারের সাশ্রয়ের টাকা যদি আমরা তাদের দিতে পারি তাহলে তারা ইদ ভালোভাবে উদ্যাপন করতে পারবে।
সরকার প্রধানের এমন আহ্বানকে সময়োপযোগী উল্লেখ করে এর মাধ্যমে শ্রেণি বৈষম্য কমিয়ে সমাজে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠিত হবে বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনরা। অপরদিকে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, ইতিবাচক এ সিদ্ধান্তের প্রভাব সরাসরি দেশের বাজার ব্যবস্থায় পড়বে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, এভাবে আনুষ্ঠানিকভাবে ইফতার না করার মেসেজটি সারা দেশে যাবে। এটি শুধু ইফতারের বিষয়ে নয়, সবক্ষেত্রেই আমাদের সাশ্রয়ী হতে হবে।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মো. আবু ইউসুফ বলেন, সবাই যে ইফতার পার্টির আয়োজন করছে তখন এ বিশেষ পণ্যগুলোর কিন্তু চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে। তাই এটিকে একটি উদাহরণ ধরে অন্যান্য যেসব জায়গায় কৃচ্ছ্রতা সাধনের সুযোগ রয়েছে সেসব ক্ষেত্রে প্রয়োগ করলে দেশের সার্বিক কল্যাণ হবে বলেও মনে করেন এ অর্থনীতিবিদ।
শুধু ইফতার পার্টি নয়, সাম্প্রতিক বিদ্যুত অপচয় রোধের মতো চাইলেই অনেক ক্ষেত্রেই সাশ্রয় করে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংটককালে দেশের পাশে দাঁড়াতে পারেন যে কেউ। ইফতার পার্টি বন্ধের পাশাপাশি সংযমের মাস রমজানে খাবার অপচয় থেকেও সরে আসার আহ্বান জানান বিশিষ্টজনরা।