বাংলাদেশের শব্দ দূষণ বিধিমালা ২০০৬ অনুযায়ী, সর্বোচ্চ শব্দের ঘনমাত্রার উপর নির্ভর করে বিভিন্ন এলাকা কে পাঁচটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে; নীরব এলাকা, আবাসিক এলাকা, মিশ্র এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা এবং শিল্প এলাকা। বরেন্দ্র পরিবেশ উন্নয়ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে, বারিন্দ এনভায়রনমেন্ট এর সহযোগিতায় পরিবেশ বান্ধব শহর রাজশাহীর পাঁচটি স্থান, তালাইমারী মোড়, রেইলগেট, বিসিক মঠ পুকুর, লক্ষিপুর মোড় ও সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট এলাকায় ২১ এপ্রিল ২০২২ তারিখে এবং পুনঃরায় জাতীয় নেতা শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান স্মৃতি চত্বরে গত ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ তারিখে শব্দের ঘনমাত্রা নির্ণয় করা হয়েছিল।
এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার (১ এপ্রিল) নগরীর লক্ষিপুর মোড় ও সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট এলাকায় সকালে কর্মব্যাস্ত সময়ে শব্দের ঘনমাত্রা নির্ণয় করা হয়। পরীক্ষায় নেতৃত্ব দেয় প্রকৌশলী মোঃ জাকির হোসেন খান (পি.এইচ.ডি.)। সহযোগিতায় ছিলেন, অলি আহমেদ (পি.এইচ.ডি. গবেষক), ওবায়দুল্লাহ, শামসুর রাহমান শরীফ, ইফাত আরা, কলি আহমেদ প্রমুখ। দ্রুত নগরায়নের জন্য রাজশাহী শহরে দিন দিন জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেড়েই চলেছে এবং বর্তমানে তা প্রায় ২% এর নিকটে! শব্দের ঘনমাত্রা নির্ণয়ের মূল উদ্দেশ্য ছিল নগরীর ব্যাস্ততম স্থানে বিগত বছরের সাথে এই বছরের শব্দের ঘন মাত্রার পার্থক্য তুলনা করা।
উল্লেখ্য যে, শুধুমাত্র সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে নগরীর ব্যাস্ততম সময়ে ওই স্থানের শব্দের ঘনমাত্রা তুলে ধরা হয়। এই পরীক্ষা তুলে ধরার অর্থই হলো নগরীর ব্যাস্ততম সময়ে শব্দের ঘনমাত্রা, শব্দ দূষণ রোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি। মাত্রারিক্ত শব্দের জন্য মানুষের শ্রবণ শক্তি হ্রাস পায়, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, ঘুম অনিয়মিত হয়, রক্ত চাপ বাড়িয়ে দেয়, হার্টের ক্ষতি করে, এমন কি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও হ্রাস পেতে পারে।
এস আর ও নং ২১২-আইন ২০০৬ অনুযায়ী হাসপাতালের চতুর্দিকে ১০০ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকা নীরব এলাকা হিসাবে ঘোষিত।
শব্দ নির্ণয়ের স্থান থেকে যেহুতু ১০০ মিটারের বৃত্তের মধ্যে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক অবস্থান করছে, তাই এই নীরব এলাকায় শব্দের মাত্রা দিনের বেলা আইন অনুযায়ী হবে সর্বোচ্চ ৫০ ডেসিবেল, কিন্তু ক্ষুদ্র সময়ের পরীক্ষায় পাওয়া যায় প্রায় ৮৯.৬ ডেসিবেল। যা নির্ধারিত শব্দের মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি। গত বছর এখানে দিনের বেলা পাওয়া গিয়েছিলো ৮৬ ডেসিবেল। এবারের এই স্থানের প্রাপ্ত মান গতবারের চেয়ে সামান্য বেশি। সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট এলাকা বাণিজ্যিক এলাকার মধ্যে পড়ে। বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে সর্বোচ্চ শব্দের ঘনমাত্রা থাকতে হবে ৭০ ডেসিবেল। বিগত বছর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট এলাকায় দিনে সর্বোচ্চ শব্দ পাওয়া গিয়েছিলো প্রায় ৮৪ ডেসিবেল। এইবার দিনে ক্ষুদ্র সময়ের পরীক্ষায় সর্বোচ্চ পাওয়া গেছে ৮৭.৭ ডেসিবেল। যা গতবারের চেয়ে সামান্য বেশি। গত বছর আমাদের শব্দের ঘনমাত্রা পরীক্ষার পর রাজশাহীর পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে শব্দ নিয়ন্ত্রণে বেশ কয়েকটি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছিল। ওই মোবাইল কোর্ট নিয়মিত পরিচালনা করলে হয়তো কিছুটা নিয়ন্ত্রণ হবে। একই সাথে শহরের ট্রাফিকদের আরো বেশি সচেতন হতে হবে। যত্র তত্র হর্ন না বাজানোর জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। নির্মাণ কাজে শব্দ নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যান্ত জরুরি। শিশুরা শব্দ দূষণে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। শব্দ দূষণের প্রভাব শুধু মানুষের উপর না, প্রতিটি পশু-পাখির উপর পরে।
অটো রিক্সা গুলোতে ম্যানুয়াল হর্ন বাধ্যতামূলক করা উচিত, যেন অন্য কোনো হর্ন ব্যবহার করতে না পারে। একই সাথে অটো রিক্সা আর রিক্সা গুলো নির্দিষ্ট লেন ব্যবহার করলে এবং বাস গুলো যত্রতত্র না দাঁড়ালে কিন্তু গাড়ি গুলোকে অহেতুক হর্ন দেয়া লাগে না। শহরের মধ্যে গতি সীমাও নির্দিষ্ট করলে এর পরোক্ষ প্রভাব শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ এর উপর পড়বে। গাছ শব্দের প্রতিবন্ধকতা হিসেবে যথেষ্ট কার্যকর। আমের শহর রাজশাহীতে আম-জাম জাতীয় ফলের গাছ, নিম জাতীয় ঔষধি গাছ লাগানো যেতে পারে; যেগুলো বড় হলে শব্দ ও বায়ু দূষণ রোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।