জাপানের আর্থিক সহায়তায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ চলছে। নির্মাণকাজও করছে জাপানি প্রতিষ্ঠান। আশা করা হচ্ছে, এ বছরের শেষ দিকে উদ্বোধন করা হবে এই টার্মিনাল। বর্তমানে বিমানবন্দর পরিচালিত হচ্ছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) তত্ত্বাবধানে তাদের নিজস্ব জলবল দিয়ে। অন্যদিকে বিমানবন্দরে বিমানের গ্রাউন্ড ও কার্গো হ্যান্ডলিং করছে রাষ্ট্রয়াত্ত সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। তবে বিমানবন্দর পরিচালনা ও গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কাজ করতে আগ্রহী জাপান। এ বিষয়ে ইতিবাচক বাংলাদেশ সরকার।
২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। জাপানের মিতসুবিশি ও ফুজিতা এবং কোরিয়ার স্যামসং এর এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম (এডিসি) এই টার্মিনালের নির্মাণ কাজ করছে। এ টার্মিনাল নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিলো ২১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এরমধ্যে পাঁচ হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকার এবং বাকি অর্থ দেবে জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই আলোচনায় আসে এই টার্মিনালের পরিচালনা, গ্রাউন্ড ও কার্গো হ্যান্ডলিং কীভাবে, কোন প্রতিষ্ঠান করবে তা নিয়ে। বিমানকে দায়িত্ব না দিয়ে আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিমান মন্ত্রণালয়। তৃতীয় টার্মিনালের পরিচালনা ও হ্যান্ডলিংয়ের রূপরেখা প্রস্তুত করতে পরামর্শক নিয়োগ দেয় বেবিচক। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ভিত্তিতে তৃতীয় টার্মিনালের পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে ‘অপারেশন অ্যান্ড মেনটেইন্যান্স অব থার্ড টার্মিনাল অ্যাট হযরত শাহজালাল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট’ শীর্ষক প্রকল্পে নীতিগত অনুমোদনও দিয়েছে সরকারের অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
বেবিচক সূত্র জানায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের পরিচালনা এবং গ্রাউন্ড ও কার্গো হ্যান্ডলিং করতে দেশি-বিদেশি বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে বিমানবন্দর পরিচালনা ও গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কাজ করতে আগ্রহী জাপান এবং এ বিষয়ে ইতিবাচক বাংলাদেশ সরকার। জাপানের পক্ষ থেকে টার্মিনালের রক্ষণাবেক্ষণ, পরিচালনা করতে ইতোমধ্যে প্রস্তাব এসেছে সরকারের কাছে। একইসঙ্গে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং করার আগ্রহও জানিয়েছে জাপান। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সূত্র জানায়, জাপানের সহযোগিতায় পিপিপির ভিত্তিতে থার্ড টার্মিনালের অপারেশনাল ও হ্যান্ডলিংয়ের কাজ পরিচালনার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে কোন পদ্ধতিতে কাজ হবে, পরিচালন ব্যয় কীভাবে খরচ হবে, আয়ের অর্থ কীভাবে বেবিচক পাবে এ বিষয়ে সমীক্ষা করছে বেবিচক।
বেবিচক সূত্র জানায়, এ বছর অক্টোবরে তৃতীয় টার্মিনালের উদ্বোধন হবে। আংশিকভাবে বিমানবন্দর ব্যবহার উপযোগী হলেও পুরোপুরি চালু হতে আরও এক বছর সময় লাগবে। কোনও প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব না দেওয়া পর্যন্ত টার্মিনাল উদ্বোধন হলেও বর্তমানের মতোই বেবিচকের নিজস্ব পদ্ধতিতে পরিচালনা করা হবে।
বর্তমানে দেশের সব বিমানবন্দর পরিচালিত হচ্ছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) তত্ত্ববধানে নিজস্ব জলবলের মাধ্যমে। অন্যদিকে দেশের সব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড ও কার্গো হ্যান্ডলিং করছে রাষ্ট্রয়াত্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। তবে এ কাজে প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল, পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি না থাকা এবং অব্যবস্থাপনার কারণে বছরের পর বছর ধরে ভুগছে বিমানবন্দর।অভিযোগ রয়েছে, বিদেশি এয়ারলাইনগুলোর কাছ থেকে চার্জ নিলেও সময় মতো কাঙ্ক্ষিত গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দিচ্ছে না বিমান। ফলে এয়ারলাইনগুলো একদিকে সময়মতো ফ্লাইট ছাড়তে পারছে না, অন্যদিকে ভোগান্তির মুখে পড়ছেন যাত্রীরা। এমনকি বিমানবন্দরে ঘটছে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংজনিত দুর্ঘটনা। দুর্বল হ্যান্ডলিংয়ের কারণে সরকারের উচ্চ পর্যায় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছে। মন্ত্রণালয় থেকে চাপ আসলে সাময়িক পরিস্থিতির উন্নতি ঘটলেও ফের অব্যবস্থাপনাই থেকে যাচ্ছে বছরের পর বছর ধরে।
বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান বলেন, ‘তৃতীয় টার্মিনালে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে নির্মাণ করা হয়েছে। এই টার্মিনালের সেবার মানও আন্তর্জাতিক মানেই রাখা হবে। অনেকেই এই টার্মিনাল পরিচালনা ও গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। জাপানের পক্ষ থেকেও প্রস্তাব এসেছে।’
মফিদুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে কনসালট্যান্ট নিয়োগ করা হয়েছে। যাদেরই কাজ দেওয়া হোক না কেন, টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন কী হবে সেটি নির্ধারণ করতে কনসালট্যান্ট কাজ করছে। কিন্তু কীভাবে তারা রেভিনিউ শেয়ার করবে সেটিও আমাদের পদ্ধতি নির্ধারণ দরকার। বিদেশি প্রতিষ্ঠান কাজ করলে আমাদের জনবল কম লাগবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, পুরো বিমানবন্দর পরিচালনা করতে যদি পাঁচ হাজার লোক লাগে, তখন আমাদের দুই হাজার জনবলে হয়ে যাবে।’