রাজধানীতে লাইন ব্যবহারকারীরা অনেক সময় গ্যাসের অপচয় করেন। কেউ কেউ দীর্ঘ সময় চুলা জ্বালিয়ে পানি গরমসহ অপ্রয়োজনীয় কাজও সারেন। প্রাকৃতিক গ্যাসের এই ‘সিস্টেম লস’ কমাতে চায় সরকার। আর এই উদ্দেশ্য থেকেই ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার আবাসিক খাতে গ্রাহক পর্যায়ে বিতরণের জন্য আরও ৪ লাখ ২০ হাজার প্রি-পেইড গ্যাস মিটার কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার আবাসিক খাতে গ্রাহক পর্যায়ে ‘সিস্টেম লস’ কমানোর উদ্দেশ্যে কেনা হচ্ছে প্রি-পেইড গ্যাস মিটার। ২০২৪ সালের মধ্যে এসব গ্যাস মিটার রাজধানীসহ ঢাকা জেলার ৪১টি থানা এলাকায় আবাসিক খাতের গ্রাহকদের মাঝে বিতরণ করা হবে। এর মাধ্যমে সার্বিকভাবে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবস্থাপনা ও তদারকি সংক্রান্ত ব্যয় কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
সম্প্রতি সরকারের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেকে ‘প্রি-পেইড গ্যাস মিটার স্থাপন (৩য় সংশোধিত)’ প্রকল্পও অনুমোদন পেয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, প্রি-পেইড মিটারিং সিস্টেমে গ্যাস অপচয় রোধ, দক্ষ, সাশ্রয়ী, নিরাপদ ও টেকসই গ্যাস ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং গ্যাসের সিস্টেম লস কমিয়ে ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে। এসব কারণেই জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এ প্রকল্পটি গ্রহণ করে ২০১৫ সালে। পরবর্তী সময়ে এ প্রকল্পটিতে এ পর্যন্ত তিনবার সংশোধনী প্রস্তাব আনা হয়। প্রকল্পটির সর্বশেষ সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রকল্পটির কাজের পরিধির পরিবর্তন, ১ হাজারটি পিওএস সাপোর্ট সার্ভিস অন্তর্ভুক্ত করা, প্রকল্পের বিভিন্ন অংশের ব্যয় বাড়ানো এবং সর্বশেষ প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় বাড়ানোর জন্যই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সংশোধনী প্রস্তাব আনা হয়েছে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের উদ্যোগে নেওয়া প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ তৈল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)-এর আওতাধীন তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (টিজিটিডিসিএল)। শুরুতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছিল (১ম সংশোধিত) ৪৯৮ কোটি ৯৪ লাখ ৩২ হাজার টাকা। প্রকল্পের ২য় সংশোধিত প্রস্তাবে ৭৫৩ কোটি ৮৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকা এবং সর্বশেষ তৃতীয় সংশোধিত প্রস্তাবে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ৯২৮ কোটি ২৩ লাখ ৩১ হাজার।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয়ের মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া হবে ৯৭ কোটি ৪৭ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। প্রকল্প ঋণ বাবদ জাইকার কাছ থেকে পাওয়া যাবে ৮০৭ কোটি ২৯ হাজার টাকা। এ ছাড়া সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন থাকবে ২৩ কোটি ৭৫ লাখ ৫৯ হাজার টাকা।
জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার আবাসিক খাতে গ্রাহক পর্যায়ে সিস্টেম লস কমানো, প্রাকৃতিক গ্যাসের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতকরণ এবং ব্যবস্থাপনা ও তদারকি সংক্রান্ত ব্যয় কমিয়ে আনার উদ্দেশ্যেই ঢাকা জেলার ৪১টি থানা বা এলাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে নেওয়া প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তৃতীয় সংশোধিত প্রস্তাবটি একনেকের অনুমোদন পাওয়ায় আগামী ২০২৪ সালের জুন নাগাদ প্রকল্পটি শতভাগ বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে পরিকল্পনা বিভাগ।
প্রকল্পের আওতায় মোট ৪ লাখ ২০ হাজার আবাসিক গ্রাহককে প্রিপেমেন্ট সিস্টেমের আওতায় আনার লক্ষ্যে টার্ন-কি পদ্ধতিতে প্রি-পেইড গ্যাস মিটার কেনা হবে এবং সেগুলো স্থাপন করা হবে। ওয়েব সিস্টেম (হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার) স্থাপন করা হবে এবং গ্রাহক আঙিনায় মিটার স্থাপন ও কমিশনিংসহ অন্যান্য কাজ করা হবে।
কমিশন সূত্র জানিয়েছে, ‘প্রি-পেইড গ্যাস মিটার স্থাপন (৩য় সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পটি সরকারের চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)-তে মোট ৬৮ কোটি ৯১ লাখ টাকার মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল জিওবি থেকে ৪ কোটি ২০ লাখ, প্রকল্প সাহায্য বাবদ ৬৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ও সংস্থার স্ব-অর্থায়ন ধরা হয়েছে ৮৪ লাখ টাকা বরাদ্দসহ অন্তর্ভুক্ত আছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানিয়েছে, সরকারের ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় গ্যাস খাতের মূল লক্ষ্য হচ্ছে দেশের চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ক্রমহ্রাসমান গ্যাস সম্পদ রক্ষার্থে, জ্বালানি কর্মদক্ষতা এবং সংরক্ষণ উন্নয়নের মাধ্যমে গ্যাসের চাহিদাভিত্তিক ব্যবস্থাপনা। এক্ষেত্রে আলোচ্য প্রকল্পটির মাধ্যমে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ৪ লাখ ২০ হাজার প্রি-পেইড গ্যাস মিটার স্থাপন করা হলে গ্যাস ব্যবহারকারী গৃহস্থালি ভোক্তা কর্তৃক বর্তমান নির্দিষ্ট দামের পরিবর্তে গ্যাসের প্রকৃত ব্যবহারের সাথে সমন্বিত দামে গ্যাস ক্রয় করার মাধ্যমে গ্যাসের সিস্টেমলস হ্রাস করা, ব্যয় সাশ্রয়ী করা এবং গ্যাসের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এমন প্রেক্ষাপটে এ প্রকল্পটি ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। একই সঙ্গে প্রকল্পটি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অভীষ্ট-৭ ‘সকলের জন্য সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য, টেকসই ও আধুনিক জ্বালানি সহজলভ্য করা’-এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
প্রকল্পটি একনেকে উপস্থাপনের পক্ষে পরিকল্পনা কমিশনের মতামতে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রি-পেইড মিটারিং সিস্টেমে গ্যাস অপচয় রোধ, দক্ষ, সাশ্রয়ী, নিরাপদ ও টেকসই গ্যাস ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে এবং গ্যাসের সিস্টেমলস কমিয়ে ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে। এমন অবস্থায় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের আওতায় বাংলাদেশ তৈল, গ্যাস ও প্রাকৃতিক সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) অঙ্গ প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (টিজিটিডিসিএল) কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘প্রি-পেইড গ্যাস মিটার স্থাপন’ (৩য় সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য একনেক-এর অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হলো।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, প্রাকৃতিক গ্যাসের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার আবাসিক খাতে গ্রাহক পর্যায়ে সিস্টেম লস কমানোর উদ্দেশ্যে প্রি পেইড গ্যাস মিটার কেনা হচ্ছে। প্রি-পেইড মিটারিং সিস্টেমে গ্যাস অপচয় রোধ, দক্ষ, সাশ্রয়ী, নিরাপদ ও টেকসই গ্যাস ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।