২৪ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ১০:০৯:০৭ পূর্বাহ্ন


৫ শর্ত পূরণ হলেই দোয়া কবুল হয়
ধর্ম ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-০২-২০২৩
৫ শর্ত পূরণ হলেই দোয়া কবুল হয় ফাইল ফটো


দোয়া ইবাদতের মূল। দোয়াই ইবাদত। দোয়াকে মুমিনের হাতিয়ার বলা হয়। মহান আল্লাহ বান্দার দোয়ার মাধ্যমে অসম্ভবকেও সম্ভব করে দেন। দোয়ার মাধ্যমে মানুষের ভাগ্যও পরিবর্তন হয়ে যায়। দোয়া মানে হচ্ছে মহান আল্লাহর কাছে চাওয়া। দোয়া কবুলের জন্য ৫টি শর্ত পূরণ করা আবশ্যক। দোয়া কবুলের ৫ শর্ত কী?

মহান আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন- ادۡعُوۡنِیۡۤ اَسۡتَجِبۡ لَکُمۡ অর্থাৎ ‌‌তোমরা আমার কাছে চাও (দোয়া করো)। আমি তোমাদের চাওয়া (দোয়া) কবুল করবো।' (সুরা মুমিন : আয়াত ৬০)

আল্লাহ তাআলা বান্দার দোয়ায় তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। হাদিসে পাকে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা দেন-

لاَ يَرُدُّ الْقَضَاءَ إِلاَّ الدُّعَاءُ وَلاَ يَزِيدُ فِي الْعُمُرِ إِلاَّ الْبِرُّ ‏

‘দোয়া ছাড়া আর কোনো কিছুই আল্লাহর সিদ্ধান্তকে বদলাতে পারে না আর এবং সৎকাজ ছাড়া অন্য কোনো কিছুই হায়াত বাড়াতে পারে না।’ (তিরমিজি ২১৩৯)

কোরআনের আয়াত এবং নবিজির হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে, দোয়া বড় একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কিন্তু তা আল্লাহ তাআলার কাছে কবুল হওয়ার জন্য বেশ কিছু শর্ত রয়েছে। তাহলো-

১. হতাশ না হওয়া ও তাড়াহুড়া না করা: হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন-

يُسْتَجَابُ لأَحَدِكُمْ مَا لَمْ يَعْجَلْ يَقُولُ دَعَوْتُ فَلَمْ يُسْتَجَبْ لِي

‘তোমাদের প্রত্যেক ব্যক্তির দোয়া কবুল হয়ে থাকে। যদি সে তাড়াহুড়া না করে আর বলে যে, আমি দোয়া করলাম, কিন্তু আমার দোয়া তো কবুল হলো না।’ (বুখারি ৬৩৪০; মুসলিম ২৭৩৫)

২. হারাম থেকে বেঁচে থাকা: হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত দীর্ঘ এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উল্লেখ করেন-

قَالَ وَذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيلُ السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ يَمُدُّ يَدَهُ إِلَى السَّمَاءِ يَا رَبِّ يَا رَبِّ وَمَطْعَمُهُ حَرَامٌ وَمَشْرَبُهُ حَرَامٌ وَمَلْبَسُهُ حَرَامٌ وَغُذِيَ بِالْحَرَامِ فَأَنَّى يُسْتَجَابُ لِذَلِكَ

‘দীর্ঘ সফরের ক্লান্তিতে যার মাথার চুল বিক্ষিপ্ত, অবিন্যস্ত ও পুরো শরীর ধুলোমলিন। সে আকাশের দিকে হাত প্রশস্ত করে বলে, হে আমার প্রভু! হে আমার প্রতিপালক! অথচ তার খাদ্য ও পানীয় হারাম, তার পোশাক হারাম, তার জীবন-জীবিকাও হারাম। এমতাবস্থায় তার দু’আ কিভাবে কবুল হতে পারে?’ (তিরমিজি ২৯৮৯)

৩. আল্লাহর দেওয়া দায়িত্ব পালন করা: হজরত হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন-

وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَتَأْمُرُنَّ بِالْمَعْرُوفِ وَلَتَنْهَوُنَّ عَنِ الْمُنْكَرِ أَوْ لَيُوشِكَنَّ اللَّهُ أَنْ يَبْعَثَ عَلَيْكُمْ عِقَابًا مِنْهُ ثُمَّ تَدْعُونَهُ فَلاَ يُسْتَجَابُ لَكُمْ

সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! নিশ্চয়ই তোমরা সৎ কাজের জন্য আদেশ করবে এবং অন্যায় কাজের প্রতিরোধ করবে। তা না হলে আল্লাহ তাআলা অচিরেই তোমাদের ওপর তাঁর শাস্তি অবতীর্ণ করবেন। তোমরা তখন তাঁর কাছে দোয়া করলেও তিনি তোমাদের সেই দোয়া কবুল করবেন না।’ (তিরমিজি ২১৬৯)

৪. আত্মীয়তার সম্পর্ক ঠিক রাখা: হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা দেন-

‏”‏ مَا مِنْ رَجُلٍ يَدْعُو اللَّهَ بِدُعَاءٍ إِلاَّ اسْتُجِيبَ لَهُ فَإِمَّا أَنْ يُعَجَّلَ لَهُ فِي الدُّنْيَا وَإِمَّا أَنْ يُدَّخَرَ لَهُ فِي الآخِرَةِ وَإِمَّا أَنْ يُكَفَّرَ عَنْهُ مِنْ ذُنُوبِهِ بِقَدْرِ مَا دَعَا مَا لَمْ يَدْعُ بِإِثْمٍ أَوْ قَطِيعَةِ رَحِمٍ أَوْ يَسْتَعْجِلُ ‏”‏ ‏.‏ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَكَيْفَ يَسْتَعْجِلُ قَالَ ‏”‏ يَقُولُ دَعَوْتُ رَبِّي فَمَا اسْتَجَابَ لِي ‏”‏ ‏‏

, যে কোন ব্যক্তি আল্লাহর নিকট কোন দোয়া করলে তার দোয়া কবুল হয়। হয়তোবা সে দুনিয়াতেই তার ফল পেয়ে যায়। অথবা তা তার আখিরাতের পাথেয় হিসেবে জমা রাখা হয়। অথবা তার দোয়ার সম-পরিমাণ তার গুনাহ মাফ করা হয়, যতক্ষণ না সে পাপ কাজের অথবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার দোয়া করে অথবা দোয়া কবুলের জন্য তাড়াতাড়ি করে। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! তাড়াতাড়ি করে কিভাবে? তিনি এরশাদ করলেন, সে বলে, আমি আল্লাহর নিকটে দু’আ করেছিলাম। কিন্তু আমার দু’আ তিনি কবুল করেননি।’ (তিরমিজি ৩৬০৪)

৫. পূর্ণ মনোযোগের সঙ্গে দোয়া করা: হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

ادْعُوا اللَّهَ وَأَنْتُمْ مُوقِنُونَ بِالإِجَابَةِ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ لاَ يَسْتَجِيبُ دُعَاءً مِنْ قَلْبٍ غَافِلٍ لاَهٍ‏

তোমরা আল্লাহর কাছে কবুল হওয়ার পূর্ণ আস্থা নিয়ে দোয়া করো। জেনে রেখো, আল্লাহ অমনোযোগী ও অসাড় মনের দোয়া কবুল করেন না।’ (তিরমিজি ৩৪৭৯)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে এ শর্তগুলো পালন করে তার কাছে দোয়া করার তাওফিক দান করুন। আমিন।