ভারতের শিল্পোদ্যোক্তা ও সাবেক শীর্ষ ধনী গৌতম আদানির বিরুদ্ধে শেয়ারবাজারে জাল-জালিয়াতি ও কারসাজির যে অভিযোগ উঠেছে, তার তদন্তে একটি সাংবিধানিক কমিটি গঠনে সায় দিয়েছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।
তবে সর্বোচ্চ আদালত শর্ত দিয়েছেন, কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো প্রকার পরামর্শ গ্রহণ করা চলবে না।
বার্তাসংস্থা এএনআইয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গৌতম আদানির বিরুদ্ধে শেয়ারবাজারে যে জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে—তার তদন্তে একটি কমিটি গঠনের আর্জি জানিয়ে কয়েকদিন আগে পিটিশন জমা দিয়েছিলেন ভারতের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বিশাল তিওয়ারি।
আবেদনে সুপ্রিম কোর্টের কোনো একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠনের আর্জি জানিয়েছিলেন তিনি।
শুক্রবার সেই আবেদনের ওপর শুনানি হয়। শুনানিতে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষের আইনজীবী তুষার মেহতা এ সময় কমিটি গঠনে কেন্দ্রীয় সরকারের পরামর্শ গ্রহণের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, সার্বিক সত্যের উদ্ঘাটন ও অভ্যন্তরীণ পুঁজিবাজারে অনাকাঙ্ক্ষিত বিপর্যয় এড়াতে কেন্দ্রীয় সরকারের পরামর্শে তদন্ত কমিটি গঠন করা বাঞ্ছনীয়।
কিন্তু তার এই যুক্তি নাকচ করে দেন বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ। আদালত বলেন, ‘যদি (কমিটি গঠনে) কেন্দ্রের পরামর্শ নেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে সেই কমিটির নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। সেক্ষেত্রে সেই তদন্ত সবার কাছে গ্রহণযোগ্য না ও হতে পারে।’
‘আদালত মনে করে, সাম্প্রতিক এই চাঞ্চল্যকর বিষয়টির তদন্তে কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের পরামর্শ কিংবা সুপারিশ গ্রহণ না করাই শ্রেয় হবে।’
সম্প্রতি ভারতের শীর্ষস্থানীয় শিল্পোদ্যোক্তা গৌতম আদানির সম্পর্কে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে মার্কিন বিনিয়োগ গবেষণা সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ ফার্ম। গত ২৪ জানুয়ারি প্রকাশ করা সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, এক দশককালেরও বেশি সময় ধরে শেয়ার কারসাজি এবং আর্থিক লেনদেনে প্রতারণা চালিয়ে আসছে আদানি গ্রুপ। কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দর বহু গুণ বাড়িয়ে এ গ্রুপ বিশাল সম্পদ গড়েছে। গত কয়েক বছরে আদানি গ্রুপের কোম্পানির শেয়ার ৫০০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে।
প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর থেকেই আদানি গ্রুপের সব কোম্পানির শেয়ারের দাম পড়তে শুরু করে; এখনও অব্যাহত আছে সেই পতন। দরপতনের জেরে ইতোমধ্যে ১০ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি অর্থ খুইয়েছেন গৌতম আদানি।
হিন্ডেনবার্গের যাবতীয় অভিযোগ অবশ্য দ্ব্যর্থহীনভাবে অস্বীকার করেছে আদানি গ্রুপ। গ্রুপের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদন ‘মিথ্যা’, ‘ভিত্তিহীন’, ও ‘শত্রুতাপূর্ণ’। আরও বলা হয়েছে, ভারতের শেয়ারবাজার সম্পর্কে ‘কোনো ধারণা নেই’ হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের। এমনকি এই প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ ভারত, তার স্বাধীনতা ও সংহতিকে ‘আক্রমণ’ করেছে বলেও অভিযোগ করেছে ভারতের রাজনৈতিক দল বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ট আদানি গ্রুপ।
ইতোমধ্যে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে। জনস্বার্থে মামলাটি দায়ের করেছেন সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী এমএল শর্মা।
কিন্তু তারপরও শেয়ারের দরপতন বন্ধ হয়নি আদানি গ্রুপের।