১৮ মে ২০২৪, শনিবার, ০৪:০০:০৯ অপরাহ্ন


শাসক ও জনগণের সুসম্পর্কের অনন্য নজির
ধর্ম ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-০২-২০২৩
শাসক ও জনগণের সুসম্পর্কের অনন্য নজির ফাইল ফটো


রাসুল (সা.)-এর অন্যতম ওহি লেখক ছিলেন মুয়াবিয়া বিন আবু সুফিয়ান (রা.)। ইসলামী ইতিহাসে উমাইয়া খেলাফতের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তিনি পরিচিত। একজন শাসক সাহাবি হিসেবে জনসাধারণের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্কের চিত্র তুলে ধরেছেন আরব ইতিহাসবিদ আবুল হাসান আলী ইবনুল হুসাইন আল-মাসউদি (মৃত্যু ৩৪৬ হি.)। ‘মুরুজুজ জাহাব’ গ্রন্থ থেকে এর অনুবাদ তুলে ধরা হলো -

মুয়াবিয়া (রা.)-এর সঙ্গে সারাদিনে পাঁচবার কথা বলার সুযোগ পেতেন সাক্ষাতপ্রার্থীরা। ফজর নামাজের পর তিনি সাক্ষাতপ্রার্থীদের কথা শুনতেন। অতঃপর পবিত্র কোরআনের নির্দিষ্ট অংশ পড়ে ঘরে প্রবেশ করতেন এবং বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে চার রাকাত নামাজ পড়তেন। এরপর বৈঠকে গিয়ে বিশেষ উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলাপ করতেন। মধ্যাহ্ন পর্যন্ত তিনি মন্ত্রীদের সঙ্গে নানা বিষয়ে কথা বলতেন। এ সময় ছাগলের গোশতের তৈরি হালকা খাবার গ্রহণ করতেন। এরপর দীর্ঘ সময় সবার সঙ্গে কথা বলে বাড়ি যেতেন। কিছুক্ষণ পর বের হয়ে বলেন, হে অমুক, চেয়ার বের কোরো। অতঃপর তিনি মসজিদে যেতেন। দেয়ালে হেলান দিয়ে তিনি চেয়ারে বসতেন। আর সাক্ষাতপ্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলতেন। তখন দুর্বল, শিশু, নারী, অনাথ ও গ্রাম্য লোকরা তার কাছে নানা আবেদন নিয়ে আসতেন। তিনি দয়িত্বশীলদের উদ্দেশ্যে বলতেন, অমুকের সম্মাননার ব্যবস্থা কোরো, অমুকের বিষয়ে দেখো, তার সমস্যার সমাধান কোরো ইত্যাদি। 

আরও পড়ুন: রমজান মাস শুরু হওয়ার ৪০ দিন বাকি

যখন আর কেউ থাকত না তখন তিনি খাটের ওপর বসে বলতেন, তোমরা মানুষকে মর্যাদা অনুসারে অনুমোদন দেবে। আমাকে তাদের সালামের উত্তর দেওয়া সুযোগ দেবে। কেউ জিজ্ঞাসা করত, আমিরুল মুমিনিন, আপনার সকাল কেমন কেটেছে? তিনি আল্লাহর প্রশংসা করতেন। সবাই সোজা হয়ে বসলে তিনি বলতেন, হে লোকেরা, তোমরা সম্মানিত। কারণ এই বৈঠকে উপস্থিত হয়ে তোমাদের অধীনদের সম্মানিত করেছ। যাদের কথা আমাদের পর্যন্ত পৌঁছতে পারে না তোমরা তাদের প্রয়োজনকে আমাদের কাছে উপস্থাপন করবে। তখন কেউ একজন তাকে এক ব্যক্তির মৃত্যুর খবর জানানো হলে তিনি মৃতের সন্তানের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করতে বলেন। আরেকজন কারো নিখোঁজ হওয়ার খবর দিলে তিনি বলেন, তোমরা তাদের সঙ্গে দেখা করে উপহার দাও এবং তাদের সব প্রয়োজন পূরণের ব্যবস্থা কোরো। 

অতঃপর খাবার আনা হলে তার ব্যক্তিগত সহকারী এসে দাঁড়াত। তাকে তিনি দস্তরখানের পাশে বসতে বলতেন। আর নিজ হাত দিয়ে দুই বা তিন লোকমা খাবার খেয়ে নিতেন। এ সময় তাঁর সহকারী নিজ দপ্তরের বিভিন্ন কার্যাবলী পড়ে শুনতেন। তাকে সাহায্যপ্রার্থীদের বিষয়গুলো আগে পড়তে বলা হতো। খাবার গ্রহণকালে অনেক সময় সাহায্যপ্রার্থী আসত। অনেক সময় তাদের সংখ্যা ৪০ জনের বেশিও হতো। খাবার তুলে নেওয়ার পর সবাইকে ফিরে যেতে বলা হয়। তিনি ঘরে প্রবেশ করলে সাধারণত সেখানে কেউ সাক্ষাতের আগ্রহ দেখাত না। জোহরের আজান হলে তিনি বের হয়ে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তেন। এরপর বাসায় এসে চার রাকাত নামাজ পড়তেন। অতঃপর বিশেষ উপদেষ্টাদের সঙ্গে কথা বলতেন। শীতকালে তিনি নানা ধরনের শুকনো মিষ্টান্ন খাবার ও শুকনো ফল খেতেন। আর গ্রীষ্মকালে তিনি তাজা ফল খেতেন। এ সময় তার কাছে মন্ত্রীরা উপস্থিত হতেন। তিনি তাদের সঙ্গে বাকি দিবসের নানা বিষয়ে পরামর্শ করতেন। আসরের সময় হলে তিনি মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ে আবার বাড়ি ফিরতেন। সেখানে আর কেউ দেখা করতে আসত না। আসরের শেষ সময়ে তিনি ঘর থেকে বের হয়ে আসনে বসতেন। তখন অনেক সাহায্যপ্রার্থী তার সঙ্গে দেখা করত। এ সময় তিনি হালকা খাবার আহার করতেন। মাগরিবের আজান শুরু হলে সাহায্যের পর্ব বন্ধ করে দেওয়া হতো। অতঃপর তিনি মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তেন। এরপর আরো চার রাকাত নামাজ পড়তেন। প্রতি রাকাতে তিনি ৫০ আয়াত পাঠ করতেন। কখনো তা জোরে পড়তেন আবার কখনো আস্তে পড়তেন। এরপর এশা পর্যন্ত বাড়িতে অবস্থান করতেন। সেখানে কারো সঙ্গে দেখা করতেন না। 

এশার আজান হলে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তেন। অতঃপর তাঁর সভাষদ ও মন্ত্রীদের সঙ্গে দেখা করে রাতের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরামর্শ করতেন। তাদের মধ্যে রাতের এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত আরব-অনারব রাজা-বাদশাহদের আচার-ব্যবহার ও নীতি-নৈতিকতা নিয়ে আলোচনা চলত। এ সময় ঘর থেকে তাঁর স্ত্রী বিভিন্ন হালুয়াসহ বিভিন্ন ধরনের দুর্লভ সুস্বাদু খাবার পাঠাতেন। অতঃপর তিনি ঘরে গিয়ে এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত ঘুমাতেন। ঘুম থেকে উঠলে তার সামনে রাজা-বাদশাহদের জীবন-বৃত্তান্ত, যুদ্ধ-বিগ্রহ ও রাজনীতি নিয়ে লেখা বিভিন্ন দপ্তর পাঠ করা হতো। প্রতি রাতেই কিছু ছেলে এসব বিষয় পড়ে শোনাতেন। কিছুক্ষণ পর তিনি ঘর থেকে বের হয়ে মসজিদে যেতেন। সেখানে ফজর নামাজ পড়ে আবার দৈনন্দিন সূচী অনুসারে কাজে লেগে যেতেন।