বিশ্বে পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ বসফরাস প্রণালি। এর প্রশস্ত তীরজুড়ে পাহাড়ের ধাপে ধাপে শতাব্দী প্রাচীন গাছের সারি, রংবেরঙের ঘরবাড়ি। এই প্রণালি তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরের প্রাণ। শহরটি আছে দুই মহাদেশের সংযোগস্থলে।
৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ বসফরাস প্রণালি কৃষ্ণসাগর থেকে দক্ষিণে
অগ্রসর হয়ে মিশেছে মারমারা সাগরে। এই এলাকায় আছে দুই মহাদেশের বিস্তৃত জনপদ। ইস্তাম্বুল শহরের বুক চিরে বয়ে গেছে এই প্রণালি। শহরের একটি অংশ এশিয়া ও অপর অংশ ইউরোপে। আর এশিয়া থেকে ইউরোপে প্রবেশ সহজ করতে তৈরি করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন টানেল বা সুড়ঙ্গ। নাম 'ইউরেশিয়া টানেল'। এটি ইউরোপের কুমকাপি এবং এশীয় অংশের কাদিউলির কোমলিয়ুলকে যুক্ত করেছে। টানেল প্রকল্পে রয়েছে একটি ঝুলন্ত সেতুও।
টানেল
নির্মিত হওয়ার আগে ফেরি, ক্রুজ জাহাজ কিংবা স্পিডবোটে বসফরাস প্রণালি পার হতো লোকজন। এখন ইউরেশিয়া টানেল দিয়ে মাত্র ১৫ মিনিটে এশিয়া থেকে
ইউরোপে প্রবেশ করতে পারেন পর্যটকরা। ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর টানেলটি খুলে দেওয়ার পর পর্যটকদের মাঝে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে। টানেল উদ্বোধন করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান।
টানেলটি
চার বছর ধরে তৈরি করা হয়। এই প্রকল্প তুরস্কের মেগা প্রকল্প ছিল। টানেলটিতে ব্যবহার করা হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং নির্মাণ দক্ষতার জন্য প্রকৌশলীদের পুরস্কৃতও করা হয়।
টানেল
চালু হওয়ার পর বৈরী আবহাওয়ায় নৌযান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটলেও পর্যটকদের ভোগান্তি এখন নেই। টানেলের টোল থেকে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ২৫ বছরে জমা হবে ১৮০ মিলিয়ন তুর্কি লিরা।
তুরস্কের সুলতান মোহাম্মদ ফাতিহ প্রথম ১৪৫৩ সালে ইস্তাম্বুল জয় করেন। এটা করতে তিনি অভিনব কৌশল অবলম্বন করেছিলেন। পাহাড়, দুর্গ আর শিকলে সুরক্ষিত ইস্তাম্বুল শহরের প্রবেশপথ গোল্ডেন হর্নে জাহাজ প্রবেশ করানো যাচ্ছিল না। সেনা ও সামরিক সরঞ্জাম প্রবেশ করাতে ছোট জাহাজে চাকা লাগিয়ে পাহাড়ের ওপর দিয়ে টেনে নেওয়া হয়। আর এখন তাঁর নাতি এরদোয়ান সমুদ্রতলে টানেল নির্মাণের মাধ্যমে এশিয়া-ইউরোপের সংযোগ ঘটালেন।
ইউরেশিয়া টানেল বিশ্বের গভীর টানেলগুলোর একটি। সমুদ্রপৃষ্ঠের ১০৬.৫ মিটার গভীরে এটি তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে ইস্তাম্বুল শহরের যানজট অনেকটাই কমে গেছে। প্রতিদিন প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার যানবাহন এই টানেলের মধ্য দিয়ে চলাচল করে। টানেলটির পরিবেশগত গুরুত্ব রয়েছে। এজন্য সারাবিশ্বের পর্যটক এই টানেলে ছুটে আসেন।