২০২২ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় এক হাজার ৩৪ শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন এক হাজার ৩৭ শ্রমিক।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের শ্রম ও কর্মক্ষেত্র পরিস্থিতি বিষয়ে এ জরিপ করা হয়।
সোমবার (২ জানুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিলস জরিপের পরিসংখ্যান জানায়।
জরিপের তথ্যানুযায়ী, ২০২২ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ৯৯ শতাংশ, অর্থাৎ এক হাজার ২৭ জন পুরুষ। আহতদের মধ্যে ৯৩ শতাংশ, অর্থাৎ ৯৬৪ জন পুরুষ। ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় শ্রমিক নিহতের হার দুই শতাংশ কম।
এ ছাড়া গত বছর বিভিন্ন সেক্টরে ১৯৬টি শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে ১১৫টি শ্রমিক অসন্তোষ ঘটে তৈরি পোশাক খাতে।
জরিপের তথ্য বলছে, ২০২২ সালে খাত অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে পরিবহন খাতে। এ খাতে ৪৯৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১৮ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয় নির্মাণ খাতে। তৃতীয় সর্বোচ্চ ১১২ জনের মৃত্যু হয় কৃষি খাতে।
এ ছাড়া দিনমজুর ৪৬ জন, কনটেইনার ডিপোতে ৪৪, মৎস্য ও মৎস্য শ্রমিক ৪৩ জন, ইলেকট্রিক শ্রমিক ২২, নৌপরিবহন খাতে ১৫ জন, হোটেল রেস্টুরেন্ট শ্রমিক ১২ জন, ইটভাটা শ্রমিক ১০ জন, জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পে ৭ জন, ক্যামিকেল ফ্যাক্টরির শ্রমিক ৬ জন এবং অন্যান্য খাতে ১০০ জন শ্রমিক নিহত হন।
কর্মস্থলে আসা যাওয়ার পথে ৩৬ জন শ্রমিক নিহত ও ১২২ জন শ্রমিক আহত হন। নিহত শ্রমিকদের মধ্যে ১৩ জন (৩৬%) নারী শ্রমিক এবং আহত শ্রমিকদের মধ্যে ৫৩ জন (৪৩%) নারী শ্রমিক ছিলেন।
কর্মক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার ৩৩৮ শ্রমিকের মধ্যে ২৯৪ জন (৮৭%) পুরুষ এবং ৪৪ জন (১৩%) নারী শ্রমিক। এদের মধ্যে ১৩৫ জন নিহত, ১৫৫ জন আহত, ৩৪ জন নিখোঁজ, এক জনের ক্ষেত্রে আত্মহত্যার কথা উল্লেখ করেছে বিলস। অপহৃত ১৩ জনকে পরবর্তীতে উদ্ধার করে পুলিশ। অপহৃতদের মধ্যে ১০ জন মৎস্য শ্রমিক ও তিনজন ইটভাটা শ্রমিক ছিলেন।
সবচেয়ে বেশি ৯০ জন (২৭%) শ্রমিক নির্যাতনের শিকার হন পরিবহন সেক্টরে, যার মধ্যে ৬৪ জন নিহত, ২৬ জন আহত হন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬৬ জন (২০%) শ্রমিক নির্যাতনের শিকার হন মৎস্য খাতে, যার মধ্যে ৪ জন নিহত, ২২ জন আহত, ৩০ জন নিখোঁজ এবং ১০ জন শ্রমিককে উদ্ধার করে পুলিশ। তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩৩ জন (১০%) গৃহশ্রমিক নির্যাতনের শিকার হন, যার মধ্যে ১২ জন নিহত, ২০ জন আহত, একজনের ক্ষেত্রে আত্মহত্যার কথা উল্লেখ করা হয়।
বিবৃতিতে বিলস জানায়, গত বছর ৩৩ জন গণমাধ্যমকর্মী নির্যাতনের শিকার হন, যার মধ্যে একজন নিহত এবং ৩২ জন আহত হন।
২৯ জন নিরাপত্তাকর্মী নির্যাতনের শিকার হন, যার মধ্যে ১০ জন নিহত এবং ১৯জন আহত হন। কৃষি খাতে ২৫জন শ্রমিক নির্যাতনের শিকার হন, যার মধ্যে ১৮জন নিহত, ৬জন আহত এবং ১ জন নিখোঁজ হন। কর্মক্ষেত্রে নির্যাতনের ধরনগুলোর মধ্যে রয়েছে, শারীরিক নির্যাতন, ধর্ষণ, ছুরিকাঘাত, খুন, রহস্যজনক মৃত্যু, অপহরণ, মারধর ইত্যাদি।
এ ছাড়া কর্মক্ষেত্রের বাইরে নির্যাতনের শিকার হন ৩৩০ জন শ্রমিক। এরমধ্যে ২১৩ জন নিহত, ৭৪ জন আহত, ১ জন নিখোঁজ, ৪২ জনের ক্ষেত্রে আত্মহত্যার কথা উল্লেখ করা হয়। ৩৩০ জনের মধ্যে ২৫২ জন (৭৬%) পুরুষ এবং ৭৮ জন (২৪%) নারী শ্রমিক।
বিলসের তথ্যানুযায়ী, কর্মক্ষেত্রের বাইরে সবচেয়ে বেশি ৮৫ জন (২৬%) শ্রমিক নির্যাতনের শিকার হন তৈরিপোশাক শিল্প খাতে। যার মধ্যে ৪০ জন নিহত হন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫৮ জন (১৮%) শ্রমিক নির্যাতনের শিকার হন কৃষি খাতে, যার মধ্যে ৪৩ জন নিহত হন। তৃতীয় সর্বোচ্চ ৪৬ জন (১৪%) শ্রমিক নির্যাতনের শিকার হন পরিবহন সেক্টরে। যার মধ্যে ৩৪ জন নিহত, ৭ জন আহত, ৫ জন আত্মহত্যা করেন।
এ ছাড়া নির্মাণ খাতে ২১ জন শ্রমিক নির্যাতনের শিকার হন, যার মধ্যে ১৬ জন নিহত, ২ জন আহত এবং ৩ জন আত্মহত্যা করেন। ১৪ জন দিনমজুর নির্যাতনের শিকার হন, যারমধ্যে ৮ জন নিহত, ৩ জন আহত এবং ৩ জন আত্মহত্যা করেন। ২০২১ সালে ৩০০ জন শ্রমিক কর্মক্ষেত্রের বাহিরে নির্যাতনের শিকার হন।