বছরের প্রথম দিনেই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল দিল্লির ২০ বছর বয়সি তরুণী অঞ্জলির। বছর শেষে পার্টি করে ফেরার সময় সুলতানপুরী এলাকায় ৫ জন মদ্যপ গাড়ি বেপরোয়া গতিতে ধাক্কা মেরেছিল অঞ্জলির স্কুটিতে। তারপর তাঁকে হেঁচড়ে টেনে নিয়ে গিয়েছিল প্রায় ২০ কিলোমিটার রাস্তা। সেই ঘটনায় এবার প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্যে উঠে এলো আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। প্রত্যক্ষদর্শী দীপক দহিয়া জানিয়েছে, তরুণীর দেহ গাড়িতে আটকে থাকা অবস্থাতেই একই রাস্তায় ইউ-টার্ন নিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে গাড়ি নিয়ে ঘুরছিল অভিযুক্তরা।
কান্ঝাওয়ালা রোডে একটি কনফেকশনারীর দোকান রয়েছে দীপকবাবুর। এদিনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা পুরোটাই দেখেছেন তিনি। তিনিই খবর দিয়েছিলেন পুলিশকে। দীপকবাবু জানিয়েছে, রবিবার ভোর সোয়া ৩টায় দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। ‘প্রায় ১০০ মিটার দূর থেকে আমি একটা গাড়ির ভয়ঙ্কর আওয়াজ পাই। প্রথমে ভেবেছিলাম টায়ার ফেটে গেছে বোধহয়। তারপর দেখলাম, একটা দেহ হেঁচড়ে টেনে ছুটছে গাড়িটা। সঙ্গে সঙ্গে আমি পুলিশকে খবর দেই।
দশ মিনিট পর তিনি দেখেন, ইউ-টার্ন নিয়ে ফের একইদিকে এগিয়ে আসছে গাড়িটি, তখনও ঝুলছে তরুণীর মৃতদেহ। অভিযুক্তরা একই রাস্তায় বারবার ইউ-টার্ন নিয়ে প্রায় ৪-৫ কিলোমিটার ঘুরপাক খায়।
‘আমি ওদের বহুবার থামানোর চেষ্টা করি, কিন্তু ওরা গাড়ি থামায়নি। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে আনুমানিক ২০ কিলোমিটার রাস্তা তারা মেয়েটির দেহ গাড়িতে লেগে থাকা অবস্থাতেই টেনে হিঁচড়ে নিয়ে এগিয়ে যায়,’ জানিয়েছেন তিনি।
অবস্থা দেখে বাইকে চেপে গাড়িটির পিছু ধাওয়া করেন দীপক বাবু। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর জ্যোতি গ্রামের কাছে কান্ঝাওয়ালা রোডে গাড়ি থেকে পড়ে যায় দেহটি। তারপরেই গাড়ি ছুুটিয়ে চম্পট দেয় অভিযুক্তরা। ‘এটা শুধুই দুর্ঘটনা হতে পারে না,’ জোর দিয়ে দাবি করেছেন দীপক দহিয়া।
বিষয়টি নিয়ে টুইট করে দুঃখপ্রকাশ করেছেন দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর ভিকে সাক্সেনা। ‘লজ্জায় আমার মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে। অভিযুক্তদের নারকীয় কাণ্ড দেখে আমি স্তম্ভিত। ঘটনায় সমস্ত অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’ টুইট-বার্তায় জানিয়েছেন তিনি।(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
দিল্লির ডেপুটি কমিশনার অফ পুলিশ হরেন্দ্র কুমার সিং জানিয়েছেন, সুলতানপুরী এলাকায় ঘাতক গাড়িটি তরুণীর স্কুটিতে ধাক্কা মারার পর স্কুটি থেকে পড়ে যান তিনি। এরপরেই গাড়িতে আটকে ঝুলতে থাকে তাঁর দেহ, সেই অবস্থাতেই তীব্র গতিতে প্রায় দেড় ঘণ্টা গাড়ি ছোটায় অভিযুক্তরা।
তিনি আরও জানিয়েছেন, জেরায় গাড়ির ৫ সওয়ারি জানিয়েছে, গাড়ির জানালা বন্ধ থাকা এবং ভিতর জোরে গান চালায় তারা বুঝতে পারেনি গাড়ির নীচে আটকে রয়েছে তরুণীর দেহ।
পুলিশ জানিয়েছে, গাড়িটি অঞ্জলি কে এমন ভাবেই ছেঁচড়ে নিয়ে গিয়েছিল, যে, তাঁর পোশাকের পিছনের দিক সম্পূর্ণভাবে ছিঁড়ে গিয়েছিল।
প্রসঙ্গত, রবিবার ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ পুলিশ কনট্রোল রুমে একটি ফোন আসে। জনৈক ব্যক্তি জানান, একটি গাড়িকে দেখা গেছে, তার চাকার তলায় মানুষ আটকে রয়েছেন! ছেঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে গাড়িটি! তখনই গাড়িটিকে ধরতে বেরিয়ে পড়ে পুলিশ। এর পরে চারটে দশ নাগাদ আবার একটি ফোন আসে কনট্রোল রুমে, জানানো হয়, এক তরুণীর রক্তাক্ত দেহ পড়ে আছে রাস্তায়।
এর পরেই দ্রুত ওই গাড়ির গতিপথ বুঝে রাস্তার মোড়ে মোড়ে পিকেট বসিয়ে গাড়িটিকে ধরে ফেলে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় চালক-সহ পাঁচ জনকেই। জানা যায়, বছর শেষের রাতে পার্টি করে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাচ্ছিল তারা। স্কুটিটিকে ধাক্কা মারার পরেও সেটি থামেনি। তরুণীর শরীর গাড়ির তলায় আটকে যায়, সেই অবস্থাতেই গাড়ি ছোটায় তারা!