০২ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার, ০৬:১৯:০১ পূর্বাহ্ন


মেট্রো রেলে উচ্ছ্বসিত যাত্রীরা
অনলাইন ডেস্ক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-১২-২০২২
মেট্রো রেলে উচ্ছ্বসিত যাত্রীরা ফাইল ফটো


কুয়াশার কারণে সকালের সূর্যের আলো তখনো সেভাবে জানান দেয়নি। ঘড়ির কাঁটা সাড়ে ৭টা ছুঁই ছুঁই। এরই মধ্যে মেট্রো রেলে যাত্রীদের প্রথম যাত্রার অপেক্ষা যেন উত্তাপ ছড়াচ্ছিল। ঠিক সকাল ৮টা ৩৩ সেকেন্ডে হুইসেল বাজিয়ে সাধারণ যাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করে দেশের প্রথম মেট্রো রেল।

উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে যাত্রীদের মধ্যে। এদিকে আগারগাঁও স্টেশনে প্রবেশের অপেক্ষায় থাকা মানুষের সারি পাসপোর্ট অফিস পার হয়ে গেছে।

সেই অপেক্ষার সারিতে দেড় মাসের শিশু তানাস পারভীনকে কোলে দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন শাহনাজ পারভীন। তিনি থাকেন মিরপুর সাড়ে ১১ ইস্টার্ন হাউজিং এলাকায়। শাহনাজের সঙ্গে স্বামী ও ছোট বোন এসেছেন। ‘মেট্রো রেল চালু হলে প্রথম দিনই বাচ্চাকে নিয়ে ট্রেনে উঠব ঠিক করে রেখেছিলাম। সে অনুযায়ী আজ (গতকাল) খুব ভোরে বাসা থেকে রওনা দিয়ে আগারগাঁও চলে আসি। এটা ওর (সন্তানের) স্মৃতি হয়ে থাকবে। দিয়াবাড়ী গিয়ে আবার মেট্রোতেই ফিরব’, উচ্ছ্বাস নিয়ে কথাগুলো বললেন শাহনাজ।

গতকাল বৃহসপতিবার ছিল দেশের প্রথম মেট্রো রেলের আনুষ্ঠানিক যাত্রী পরিবহনের প্রথম দিন। এদিন মেট্রোতে দেখা গেছে যাত্রীদের আনন্দের উল্লাস আর উচ্ছ্বসিত উদযাপন।

মেট্রো রেলের একটি কোচে বসে আছেন মো. সোলাইমান। কারওয়ান বাজার থেকে এসেছেন তিনি। জানতে চাইলে সোলাইমান বলেন, ‘স্টেশনে এসে দেখি যে সবাই প্যান্ট পরা। আমি একাই লুঙ্গি পরা। এ জন্য চিন্তা করছিলাম আমারে কি উঠতে দিব, নাকি দিব না। তবে কোনো সমস্যা হয়নি। এটা মানুষকে বলতে পারব প্রথম দিন মেট্রো রেলে উঠেছি। ’

সরেজমিনে ট্রেনের ভেতরে দেখা যায়, ট্রেন ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীরা প্রায় সমস্বরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে। গতকাল আগারগাঁও থেকে যে ট্রেনটি ১১টা ২৩ মিনিট ৫০ সেকেন্ডে স্টেশন ছেড়ে যায়, সে ট্রেনটি উত্তরা উত্তর স্টেশনে পৌঁছায় ১১টা ৩৬ মিনিট ২০ সেকেন্ডে। এই ১১.৭৩ কিলোমিটার পথ মেট্রোতে যেতে সময় লাগে ঠিক সাড়ে ১৩ মিনিট। তবে একেক ট্রেন একেক সময় ভিন্ন ভিন্ন গতিতে চলায় সব ট্রেনে যাত্রার সময় সমান হয়নি। যেমন গতকালকের জন্য উত্তরা থেকে শেষ ট্রেনটি ছাড়ে দুপুর ১২টা ১০ মিনিট ২৫ সেকেন্ডে। সেই ট্রেন মাত্র ১০ মিনিট ২২ সেকেন্ডে ১২টা ২০ মিনিট ৫৭ সেকেন্ডে এসে আগারগাঁও পৌঁছায়।

প্রথম দিন মেট্রো রেলে উঠতে মোহাম্মদপুরের আদাবর থেকে এসেছেন শারীরিক প্রতিবন্ধী জাকির হোসেন। ভিক্ষা করেন তিনি। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমিও টিকিট কেটে ট্রেনে উঠতে পেরেছি, এটাই তো আমার বড় কিছু। দারুণ আনন্দ পেয়েছি। অনেকে ভিক্ষা দিতে চেয়েছে। বলেছি, আমি ঘুরতে আইছি, ভিক্ষা নিব না। ’

মেশিনে বিভ্রাট

প্রথম দিন হওয়ায় স্টেশনে যেমন মানুষের ভিড় ছিল, তেমনি কিছু সাময়িক সমস্যাও তৈরি হয়। স্টেশনে দুটি টিকিট কাউন্টারের সঙ্গে রয়েছে ছয়টি স্বয়ংক্রিয় টিকিট কাটার মেশিন। কিন্তু গতকাল স্বয়ংক্রিয় টিকিট কাটার মেশিন ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত ছিল তিনটি। মাঝে মধ্যেই এসব মেশিন বিকল হয়ে যেতে দেখা যায়। মেশিনে অনেকের টাকাও আটকে যায়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মেট্রো রেল পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক কালের কণ্ঠকে বলেন, পুরনো ও ময়লা টাকা মেশিনে আটকে যাচ্ছে। এটা ফটোকপি মেশিনের মতো, কাগজ আটকে গেলে সেই কাগজ বের করে আবার কাজ শুরু করতে হয়। আবার মেশিনে অনেকে ৫০০ ও এক হাজার টাকার নোট দিয়েছেন। এতেও সমস্যা হয়েছে। তবে সঙ্গে সঙ্গেই মেশিন সচল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে এম এ এন সিদ্দিক বলেন, “আজকের অবস্থা থেকে আমরা অনেক কিছু বুঝতে পারছি। যারা একসঙ্গে পাঁচটা টিকিট নেবেন, তাঁরা যেন ৫০০ টাকার নোট মেশিনে দিতে পারেন সে জন্য আলাদা বুথ নির্ধারণ করা যেতে পারে। বাকি বুথে ৫০০ টাকা ও এক হাজার টাকার নোট ‘দেওয়া নিষেধ’ এমনটা উল্লেখ করা হবে। ”

এম এ এন সিদ্দিক আরো বলেন, ‘যাত্রীদের অভ্যস্ততার একটা বিষয় রয়েছে। এমনকি আমাদের নিজেদেরও অভ্যস্ত হতে হবে। তাই প্রথম দিকে কম যাত্রী নিয়ে অল্প সময়ে ট্রেন চালানো হচ্ছে। আগামীকালও (আজ) সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ট্রেনে যাত্রী পরিবহন করা হবে। ’

ডিএমটিসিএল সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দিনেই মেট্রো রেলে তিন হাজার ৮৫৭ জন যাত্রী পরিবহন করা হয়েছে। এ থেকে মেট্রো রেলের আয় হয়েছে দুই লাখ ৭৪ হাজার ৮৭২ টাকা। মোট যাত্রীর মধ্যে তিন হাজার ৭৫৬ জন একক পাস ব্যবহার করেছেন। তাঁরা সবাই ৬০ টাকা করে ভাড়া দিয়েছেন। এতে আয় হয় দুই লাখ ২৫ হাজার ৩৬০ টাকা।

এ ছাড়া ৯৯ জন্য এমআরটি পাস ব্যবহার করেছেন। প্রতি এমআরটি পাসের বিপরীতে ৫০০ টাকা করে পেয়েছে মেট্রো কর্তৃপক্ষ। এতে আয় হয়েছে ৪৯ হাজার ৫০০ টাকা। এই কার্ড থেকে ৯৯ জন যাত্রীর ভাড়া কাটা হয়েছে। আর দুইজন যাত্রী র‌্যাপিড কার্ড ব্যবহার করেছেন। সেখান থেকে ১২০ টাকা ভাড়া পাওয়া গেছে। গতকাল সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত আগারগাঁও থেকে ২৫টি ও উত্তরা থেকে ২৫টি করে মোট ৫০টি ট্রিপ দেয় মেট্রো রেল।

এমআরটি পাস আজ থেকে

মেট্রো রেলে চলাচলের জন্য আজ শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেট্রো রেলের উত্তরা উত্তর ও আগারগাঁও স্টেশনের কাউন্টার থেকে ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) পাস সংগ্রহ করা যাবে। এমআরটি পাস সংগ্রহের জন্য যাত্রীদের কার্ডের মূল্য বাবদ ২০০ টাকা ও ব্যবহারযোগ্য ৩০০ টাকাসহ মোট ৫০০ টাকা কাউন্টারে পরিশোধ করতে হবে এবং পূরণ করা এমআরটি পাস নিবন্ধন ফরম জমা দিতে হবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, এমআরটি পাস নিবন্ধন ফরমটি ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।

এ ছাড়া সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ট্রেন চলাচলের সময়ও যাত্রীরা চাইলে এমআরটি পাস সংগ্রহ করতে পারবেন।