মানুষের চাহিদার কারণে দেশে প্রতিনিয়তই বাড়ছে হোটেল-রেস্তোরাঁর ব্যবসা। গত বছর (২০২১) এই খাত দেশের অর্থনীতিতে যুক্ত করেছে ৩৮ হাজার ৭০৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এক দশক আগে ২০০৯-১০ অর্থবছরে এই খাত থেকে অর্থনীতিতে যুক্ত হয়েছিল মাত্র ১১ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা। সেই অর্থে ১০ বছরে যুক্ত তিন গুণেরও বেশি অর্থ।
এই সময়ে নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে ১১ লাখের বেশি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) করা ‘হোটেল ও রেস্টুরেন্ট জরিপ ২০২১’-এ উঠে এসেছে এসব তথ্য। জরিপকৃত হোটেল-রেস্তোরাঁর বার্ষিক গড় কর্মসংস্থান ব্যয় (বেতন-ভাতা-মজুরি) সাত লাখ ২০ হাজার ৪০০ টাকা। আর এসব প্রতিষ্ঠানে গড়ে একজন কর্মীর পেছনে ব্যয় এক লাখ ৫১ হাজার ৭১০ টাকা।
চলতি বছরের ২৭ মার্চ থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত দৈবচয়নের ভিত্তিতে ছয় হাজার ৪০৪টি হোটেল-রেস্টুরেন্টের ওপর জরিপটি পরিচালনা করে বিবিএস। বিবিএসের ১৫১ জন গণনাকারী ও ৮০ জন সুপারভাইজার মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন। ২০১৩ সালের অর্থনৈতিক শুমারি এবং ২০১৯ সালের বিজনেস ডিরেক্টরি থেকে তথ্য নিয়ে জরিপটি করা হয়েছে।
বিবিএস কর্মকর্তারা বলছেন, জরিপটি করার মূল উদ্দেশ্য ছিল, এক দশকে সারা দেশে হোটেল-রেস্টুরেন্টের সংখ্যা কত বেড়েছে এবং জিডিপিতে এই খাত থেকে কী পরিমাণ মূল্য সংযোজন হচ্ছে তা জানা। এই খাতে কত মানুষ কর্মরত আছেন, সেই তথ্যও বের করা হয়েছে এই জরিপ থেকে। এই জরিপের ফলে এই খাতের গতি-প্রকৃতি জানার পাশাপাশি ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করা যাবে।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন হোটেল-রেস্টুরেন্টের সংখ্যা চার লাখ ৩৬ হাজার ২৭৪টি। এক দশক আগে এই সংখ্যা ছিল দুই লাখ ৭৫ হাজার ৩২৪টি। এই খাতে এক দশকে কর্মসংস্থানও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। কাজ পেয়েছেন ২০ লাখ ৭১ হাজার ৭০৭ জন। যার মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ১৯ লাখ ৭০ হাজার ৯৭০ জন। নারী কর্মীর সংখ্যা এক লাখ ৭৩৭ জনের। এক দশক আগে হোটেল-রেস্টুরেন্ট খাতে কর্মসংস্থান ছিল ৯ লাখ ৩৭ হাজার ৮৪ জনের।
তবে কালের কণ্ঠ’র কাছে দেশে বর্তমানে হোটেল-রেস্তোরাঁ ব্যবসার মন্দা দশার কথা বলেছেন বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান। তিনি বলেন, ‘কভিড, মূল্যস্ফীতি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে আমাদের রেস্তোরাঁর ব্যবসা কমেছে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ। আগে মানুষ রেস্তোরাঁয় দিনে দুই বেলা খেলে এখন এক বেলা খায়। মোট কথা মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। আর ক্ষতির কারণে প্রায় ১০ শতাংশ রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতিদিন কোনো না কোনো রেস্তোরাঁ বন্ধ হচ্ছে। ’
তিনি আরো বলেন, ‘তবে এটি একটি সম্ভাবনাময় খাত। এই খাতে সব থেকে বড় সংকট হচ্ছে দক্ষ জনবলের অভাব। যদি এখনই আমরা দক্ষ জনবল গড়ে না তুলতে পারি, তাহলে এই খাত আমাদের হাতের নাগালের বাইরে চলে যাবে। ’
জরিপের তথ্য বলছে, হোটেল-রেস্টুরেন্টে যাঁরা নিয়োজিত আছেন, তাঁদের মজুরি বা বেতনের পেছনে ২০২১ সালে খরচ হয়েছে ১৯ হাজার ৪৮৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এ বছর হোটেল ও রেস্টুরেন্ট প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত ২০ লাখ ৭২ হাজার ব্যক্তির মধ্যে বেতনভোগী কর্মী ছিলেন ১২ লাখ ৮১ হাজার এবং অবশিষ্ট সাত লাখ ৯০ হাজার জন ছিলেন মালিকানা, অংশীদার হিসেবে নিযুক্ত। ২০০৯-১০ অর্থবছরে বেতনভোগী কর্মী হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন পাঁচ লাখ ৩৫ হাজার এবং মালিকানা, অংশীদার হিসেবে ছিলেন তিন লাখ ৬৯ হাজার।
জরিপে সরকারি, আধাসরকারি, বেসরকারি, যৌথ উদ্যোগ ও অন্যান্য—এই চার ধরনের মালিকানা অনুসরণ করা হয়েছে। ২০২১ সালে বেসরকারি মালিকানাধীন হোটেল ও রেস্টুরেন্ট প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল চার লাখ ৩৫ হাজার সর্বোচ্চ, অন্যদিকে সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ছিল মাত্র ৮৫২টি এবং অন্যান্য মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ছিল ১৫১টি। অন্যদিকে ২০০৯-১০ অর্থবছরে বেসরকারি মালিকানাধীন হোটেল ও রেস্টুরেন্ট প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল দুই লাখ ৭৪ হাজারটি এবং সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ছিল মাত্র ৬৩৯টি ও অন্যান্য মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ছিল ১৪৬টি।
মূলত বিবিএস সাতটি ভাগে আইনগত স্থিতির ভিত্তিতে হোটেল ও রেস্টুরেন্ট প্রতিষ্ঠানের বিন্যাস করেছে। একক ব্যক্তি মালিকানা, অংশীদারি মালিকানা, প্রাইভেট লিমিটেড কম্পানি, পাবলিক লিমিটেড কম্পানি সরকারি/ জাতীয়করণ, সমবায় সমিতি এবং অন্যান্য। আইনগত স্থিতির ভিত্তিতে ২০২১ সালে একক ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা চার লাখ ২৮ হাজার, যা সর্বোচ্চ।
তা ছাড়া অংশীদারি মালিকানা প্রতিষ্ঠান সাত হাজার ৪৯টি, প্রাইভেট লিমিটেড কম্পানি ৬৪০টি, সরকারি/ জাতীয়করণকৃত প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৮৫২টি এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ৩৮টি। অন্যদিকে ২০০৯- ১০ বছরে একক ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ছিল দুই লাখ ৬৯ হাজার, অংশীদারি মালিকানা প্রতিষ্ঠান পাঁচ হাজার ৯৬টি এবং প্রাইভেট লিমিটেড কম্পানি এক হাজার ১১৩টি।