চিনে হু হু করে বাড়ছে মৃত্যু মিছিল। প্রতিদিন গড়ে নতুন সংক্রমণের সংখ্যা ১০ লক্ষ। এই পরিস্থিতিতে প্রায় ভেঙে পড়ার মুখে স্বাস্থ্য-কাঠামো। রোগীর চাপ সামাল দেওয়াই সম্ভব হচ্ছে না।
দিন কয়েক আগেই বেজিংয়ের একটি ছবি সামনে এসেছিল, দেখা গেছিল বেডের অভাবে মাটিতে শুয়ে মরণাপন্ন রোগীরা। সেখানেই সিপিআর দেওয়া হচ্ছে তাঁদের! এবার জানা গেল, মৃত্যুও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে, ফলে মর্গগুলিতেও উপচে পড়ছে ভিড়। শ্মশানেও লম্বা লাইন। এসবের মধ্যেই বাজারে চরম সংকট শুরু হয়েছে জ্বরের ওষুধ নিয়ে। প্রতিটা পরিবারেই একাধিক সদস্য আক্রান্ত জ্বরে।
এই পরিস্থিতিতে অবসর নেওয়া বহু চিকিৎসককে ফের কাজে যোগ দিতে বলা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় চিনের নিজস্ব সোশ্যাল নেটওয়ার্ক উইবো-তে একটি হ্যাশট্যাগ চিনে ভাইরাল হয়েছে, পারসিসটেন্ট_ডক্টর_অ্যান্ড_নার্স_ওয়ার্ক_হার্ড, যার বাংলা অর্থ, ‘চিকিৎসক ও নার্সদের একটানা হাড়ভাঙা খাটুনি’।
উইবোতে ভাইরাল হয়েছে একটি ভিডিও-ও। দেখা গেছে গুয়াংঝং প্রদেশের একটি হাসপাতালে চিকিৎসকের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে সন্তানের চিকিৎসার জন্য কাতর আর্জি জানাচ্ছেন বাবা। অসহায় এক চিকিৎসক তাঁকে বলছেন, ‘সবাই ৬-৮ ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। সবাই অপেক্ষা করছে, শিশু থেকে বৃদ্ধ। আপনিই একা নন।
চিনের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, হু। হু-প্রধান টেড্রস অ্যাদানম গিব্রিয়েসাস ইথিমধ্যেই দাবি করেছেন, চিনে করোনায় ঠিক কতজনের মৃত্যু হচ্ছে সে ব্যাপারে সঠিক খবর সামনে আসছে না। চিন আবারও আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা গোপন করছে। এদিকে মার্কিন গোয়েন্দারা খবর দিচ্ছে, চিনে হাজারে হাজারে প্রাণ যাচ্ছে প্রায় রোজই। এমনকি আগামী তিন মাসের মধ্যে চিনে অন্তত ২০ লাখ মানুষের করোনায় মৃত্যু হতে পারে বলে অনুমানও করা হচ্ছে।
হু প্রধান বলছেন, করোনা কতটা ছড়াচ্ছে, কতজন আক্রান্ত হচ্ছেন, সংক্রমণের কী কী উপসর্গ দেখা দিচ্ছে তা সঠিকভাবে জানাতে হবে চিনকে। তাহলেই এই অতি সংক্রামক করোনার প্রজাতিকে ঠেকাতে আগাম ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
বিশ্বজুড়ে ভাইরোলজিস্টদের দাবি, চিনে করোনার যে প্রজাতি ছড়িয়ে পড়েছে তা ওমিক্রনেরই এক উপপ্রজাতি, নাম বিএফ.৭ (BF.7)। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতিমধ্যেই করোনার এই নতুন প্রজাতিকে ‘উদ্বেগজনক’ ও ‘অতি সংক্রামক’ বলে ঘোষণা করেছে। ওমিক্রনের এই উপপ্রজাতি বা সাব-ভ্যারিয়্যান্টকে সহজে ভ্যাকসিন দিয়ে কাবু করা যাবে না। মানুষের শরীরে খুব দ্রুত ছড়াতে পারবে এই প্রজাতি এবং শরীরের শ্বেত রক্তকণিকার প্রতিরোধ শক্তিকেও ভেঙে দিতে পারবে অল্পদিনের মধ্যেই। কাজেই ভাইরাস প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি হলেও সহজে একে নিকেশ করা যাবে না।