তৃণমূল ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করায় রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক সব কার্যক্রম গতি পেয়েছে।
মহানগর বিএনপির আগের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ এবং পাঁচ বছরেও পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠনে সমর্থ না হওয়ায় নতুন কমিটি গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনিবার্য হয়ে পড়ে। গত ৯ ডিসেম্বর দলের হাইকমান্ড মহানগর বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয়। এ আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর দলের তৃণমূল ও ত্যাগীসহ সর্বস্তরের নেতাকর্মী উজ্জীবিত হয়েছেন। এতে দলকে গতিশীল ও শক্তিশালী করতে গৃহীত বিভিন্ন কমসূূচিতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ বাড়ছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসনের নির্দেশে দলের মহাসচিব ২০১৬ সালের ২৭ ডিসেম্বর রাজশাহী মহানগর বিএনপির ২১ সদস্যবিশিষ্ট (আংশিক) কমিটি অনুমোদন দিয়েছিলেন। তৎকালীন সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে সভাপতি ও শফিকুল হক মিলনকে সাধারণ সম্পাদক করে এই কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। এতে আরো উল্লেখ করা হয়, কমিটি অনুমোদন করা হলো।
তবে শর্ত থাকে যে, ৩০ দিনের মধ্যে ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে অনুমোদন নিতে হবে। কিন্তু পাঁচ বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে সমর্থ হয়নি এই কমিটি। এতে যে ২১ জন স্থান পেয়েছিলেন তাদের পরিচিতি সভাও করতে পারেনি কমিটি।
তৎকালীন সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল সভাপতি হিসেবে অবিরাম চেষ্টা চালিয়েও দলের কিছু নেতার নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে তিনি পারেননি বলে নেতাদের অনেকে মনে করেন। শেষ পর্যন্ত এই কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় নতুন কমিটি গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এরপর গত ৯ ডিসেম্বর রাজশাহী মহানগর বিএনপির ৯ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়। দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে। এতে অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশাকে আহ্বায়ক ও মামুনুর রশিদকে সদস্যসচিব করা হয়।
এ ছাড়া কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক হয়েছেন সাতজন। তারা হলেন- নজরুল হুদা, দেলোয়ার হোসেন, মো: ওয়ালিউল হক রানা, আসলাম সরকার, শাফিকুল ইসলাম শাফিক, বজলুর রহমান মন্টু ও জয়নাল আবেদিন শিবলী। এদের মধ্যে অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা আগের কমিটির সহসভাপতি ও মামুনুর রশিদ একই কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন।
জানতে চাইলে মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মামুনুর রশিদ বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে মহানগর বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে দলের তৃণমূলসহ সর্বস্তরের নেতাকর্মীর মতামত প্রতিফলিত হয়েছে। তাই তারা এই কমিটি পেয়ে উজ্জীবিত হয়েছেন। তিনি বলেন, দলকে গতিশীল ও শক্তিশালী করতে গৃহীত বিভিন্ন কমসূূচিতে তৃণমূল ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ বাড়ছে। দলের চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তিসহ জাতীয় ইস্যুতে আগামীতে কঠোর আন্দোলনের জন্য নেতাকর্মীদের প্রস্তুত করতে এবং মহানগরীর বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনে বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেছে বর্তমান কমিটি।
বিএনপি নেতা মামুন বলেন, সব বিভেদ ভুলে সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ করে দলকে শক্তিশালী করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, এরই মধ্যে ৫১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি (প্রস্তাবিত) কেন্দ্রে জমা দেয়া হয়েছে। দ্রুত এই কমিটি অনুমোদন পাবে বলে আশা করছি।
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা বলেন, বর্তমান কমিটির নেতৃত্বে মহানগর বিএনপির কার্যক্রম বেড়েছে। তিনি বলেন, দলীয় কার্যক্রম পরিচালনায় একজন উপদেষ্টা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। দীর্ঘদিন ধরেই দলের ভেতরে কিছুটা সমস্যা রয়েছে, তবে বর্তমান নতুন কমিটির নেতৃত্বে দ্রুত তা কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক, রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে মহানগর বিএনপির নতুন কমিটি দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তবে বিভাগীয় শহর রাজশাহীর সামগ্রীক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এই কমিটির কোয়ালিটি নিয়ে অনেকের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাঁচ বছরেও মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি সত্য; তবে সব কর্মসূচি আমরা পালন করেছি। তা ছাড়া করোনা পরিস্থিতি, সরকার ও প্রশাসনের নানা হয়রানি, হামলা-মামলাসহ বিভিন্ন কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা যায়নি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে বুলবুল বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে ৪০ থেকে ৪৫টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর প্রায় পাঁচ হাজার নেতাকর্মীকে। প্রশাসনের দেয়া মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা মোকাবেলা করেই দলকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছি।
মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন বলেন, বিএনপি বড় দল হিসেবে এতে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। পদ পাননি এমন কিছু নেতা এবং কোনো কোনো নেতার দীর্ঘদিনের একচ্ছত্র বলয় ভেঙে যাওয়ায় তারা কিছুটা ক্ষুব্ধ হবেই। তবে আমরা দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীর সাথে সমন্বয় করেই সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। দ্রুতই সব দ্বন্দ্ব ভুলে আমরা দলকে আরো শক্তিশালী করতে সক্ষম হবো বলে আশা করছি।