শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ খাদ্য সংকটের কবলে আফ্রিকা মহাদেশের দুই কোটির বেশি মানুষ। এর মধ্যে অন্তত ৭০ লাখ শিশু ভুগছে অপুষ্টিজনিত বিভিন্ন রোগে।
আফ্রিকাকে কেন এখনও এই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে? বিশ্লেষকরা বলছেন, আবহাওয়ার ক্রমাগত পরিবর্তন আর চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে আসায় সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারছে না দেশগুলো। বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য।
সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসুর একটি শরণার্থী শিবিরে বসবাস করেন পাঁচ সন্তানের জননী নাদিফা আইস্যাক। তার তিন সন্তানই ভুগছে রক্তশূন্যতা, রিকেটসসহ নানা অপুষ্টিজনিত রোগে। প্রয়োজনীয় ওষুধ তো দূরের কথা, তিন বেলা খাবার জোটাতেই হিমশিম অবস্থা পরিবারটির।
সোমালিয়ার এক নাগরিক বলেন, ‘আমরা শুধু বিভিন্ন শিবিরে অস্থায়ী হয়ে বসবাস করি। ঘরে কোনো খাবার নেই যে ওদের খেতে দেব। ওষুধের কথা তো আমরা চিন্তাই করতে পারি না। খরার কারণে গবাদি পশুগুলোও মারা গেছে। চরম দুর্দিন পার করতে হচ্ছে আমাদের।’
শুধু আশ্রয় শিবিরেই নয়, হাসপাতালগুলোতেও অনাহার-অর্ধাহারে প্রতিনিয়ত বাড়ছে অপুষ্টিজনিত শিশু রোগীর সংখ্যা। একই চিত্র কেনিয়া, নাইজেরিয়া, ইথিওপিয়া, মালিসহ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের। এতে মহাদেশটির বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা গেল এক দশকে তিন গুণ বেড়ে সাড়ে তিন কোটিতে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা।
সম্প্রতি জাতিসংঘের আফ্রিকান অর্থনৈতিক কমিশন জানিয়েছে, গত ৩০ বছরের তুলনায় এ বছর ভয়াবহ খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে আফ্রিকা মহাদেশে। গবেষকরা বলছেন, আবহাওয়ার পরিবর্তন আফ্রিকায় খাদ্য সংকটের অন্যতম প্রধান কারণ। তীব্র খরার কারণে সাহারা বা মরু অঞ্চলে কৃষি পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। ব্যাহত হচ্ছে কৃষিপণ্য উৎপাদনও। এমনকি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে ১৫টিই আফ্রিকার। আফ্রিকার আবহাওয়ার পরিবর্তন ছাড়াও দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ নানা দ্বন্দ্ব ও সংঘাতে পিছিয়ে পড়ছে বিশাল একটি জনগোষ্ঠী।
এদিকে, প্রতিবছর ইউক্রেন থেকে ২৫ মিলিয়ন টন ও রাশিয়া থেকে প্রায় ৩০ মিলিয়ন টন গমসহ খাদ্যপণ্য রফতানি হয়ে থাকে আফ্রিকায়। তবে যুদ্ধের কারণে আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটায় আফ্রিকার দরিদ্র দেশগুলো খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
সোমালিয়ার এক বিশিষ্ট নাগরিক বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই অস্থির বিশ্ববাজার। আমদানি-রফতানি বন্ধ থাকায় দেশে দেশে দেখা দিয়েছে খাদ্যসংকট। বিশেষ করে রাশিয়ার খাদ্যশস্য রফতানির ওপর যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বিশ্বের নিষেধাজ্ঞার কারণে সেই সংকট আরও জটিল আকার ধারণ করে। ইউক্রেনসহ রাশিয়ার বিভিন্ন বন্দরে আটকে যায় মিলিয়ন টন খাদ্যশস্য। যার প্রভাব পড়েছে আফ্রিকার দেশগুলোতেও।
যুদ্ধের শুরুতেই খাদ্য সংকটের সতর্কতা জারি করলেও সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে পারেনি দেশগুলো। এ অবস্থায় পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য ধনী দেশগুলোকে ত্রাণ তহবিলে অর্থের পরিমাণ বাড়ানোর পাশাপাশি সহযোগিতায় এগিয়ে আসার আহ্বানও জানিয়েছে জাতিসংঘ।