জন্মহার উদ্বেগজনকভাবে কমে গেছে, তাই দম্পতির বাচ্চা হলেই বিপুল অর্থ দেবে জাপান সরকার। সন্তানের জন্ম দিলেই দম্পতিকে পাঁচ লাখ ইয়েন দেবে জাপান সরকার। এতদিন চার লাখ ২০ হাজার ইয়েন দেয়া হতো। এবার ৮০ হাজার ইয়েন বা ৫৯২ ডলার বাড়তি দেবে সরকার। এভাবেই সন্তানের জন্মদানে দম্পতিকে উৎসাহ দিতে চাইছে সরকার। কিন্তু এভাবে কি জন্মহার বাড়াতে পারবে জাপান?
সমালোচকেরা বলছেন, যে হারে জিনিসের দাম বেড়েছে এবং আয় একই জায়গায় থমকে আছে বা কমেছে, তাতে জাপানিরা বাচ্চার খরচের ধাক্কা সামলাতে চাইছে না। অনেকে বলছেন, কিছু অর্থ দিয়ে এই সমস্যার সমাধান হবে না। অতীতেও এই ধরনের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। এবারও হতে পারে। আগামী ১ এপ্রিল, ২০২৩ থেকে এই নতুন প্রস্তাব চালু হওয়ার কথা।
জাপানের জনসংখ্যা কমছে। ২০১৭ সালে জাপানের জনসংখ্যা ছিল ১২ কোটি ৮০ লাখ। ২০২১ এ তা কমে দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৫৭ লাখে। করোনার আগে একটি মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছিল, এই শতকের শেষে জাপানের জনসংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে পাঁচ কোটি ৩০ লাখে।
সাম্প্রতিক দশকগুলোতে জাপানে মানুষ একটু বেশি বয়সে বিয়ে করছে। তাদের কম বাচ্চা হচ্ছে। এর প্রধান কারণই হলো আর্থিক চিন্তা। করোনা, ইউক্রেন যুদ্ধ, মুদ্রাস্ফীতির ফলে সমস্যা বেড়েছে বই কমেনি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যে সংখ্যাতত্ত্ব প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, এই বছর প্রথম ছয় মাসে তিন লাখ ৮৪ হাজার ৯৪২টি শিশুর জন্ম হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় পাঁচ শতাংশ কম। মন্ত্রণালয় মনে করছে, গোটা বছরে শিশুর জন্মের সংখ্যা আট লাখের কম হবে। ১৮৯৯ সালের পর থেকে যা কখনো হয়নি।
বাচ্চাকে বড় করার জন্যযে অর্থ লাগে তা বিপুল বলে জাপানিরা মনে করছেন। টোকিওর গৃহবধূ আয়াকো জানিয়েছেন, সরকারের দেয়া অর্থ তিনি পেয়েছেন। তার একটি ছেলে আছে। কিন্তু সরকারের দেয়া টাকায় তিনি হাসপাতালের খরচ পুরোপুরি মেটাতে পারেননি। জাপানে সিজারিয়ান বাচ্চার জন্ম দিতে গেলে গড়ে চার লাখ ৭৩ হাজার ইয়েন লাগে বলে সংবাদপত্র মাইনিছি জানিয়েছে।
আয়াকো ডিডাব্লিউকে বলেছেন, 'আমরা আরেকটি বাচ্চা করার কথা ভাবছিলাম। কিন্তু আমি ও আমার স্বামী মিলে আলোচনা করে দেখলাম, আর্থিক দিক দিয়ে তা সম্ভব নয়। ৮০ হাজার ইয়েন বাড়তি দিলে সুবিধা হবে ঠিকই, কিন্তু তাতেও খরচ মিটবে না। তাই আমরা বাস্তবতাকে মেনে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। একটা বাচ্চাকে বড় করতে প্রচুর খরচ হয়।'
আয়াকো জানান, করোনার পর পরিবারের আয় কমেছে। খরচ বেড়েছে। খাবার ও গাড়ির তেলের দাম খুবই বেড়ে গেছে। ফলে তারা আর খরচ বাড়াতে চাইছেন না।
এই অবস্থায় জাপান সরকারের নতুন উদ্যোগ সফল হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।