যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে জমকালো পরিবেশে অনুষ্ঠিত হলো পঞ্চম হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্মেলন। স্থানীয় সময় রবিবার (১১ ডিসেম্বর) নিউ ইয়র্ক সিটির জ্যামাইকায় ১৩১ পাবলিক স্কুলে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনের আয়োজন করেন প্রবাসের বিনোদন সংস্থা শোটাইম মিউজিক। এবারের সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রবাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ও কবি বেলাল বেগ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কবি বেলাল বেগ বলেন, মানুষকে আকর্ষণ করার অসম্ভব এক ক্ষমতা নিয়ে জন্মেছিলেন লেখক হুমায়ূন আহমেদ, যিনি ছিলেন একজন জাদুকর। তার লেখায়, তার ব্যক্তিত্বে, সর্বোপরি তার কাজে তিনি অনন্তকাল বেঁচে থাকবেন।
বক্তারা বলেন, লেখক হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন বিংশ শতাব্দীর জনপ্রিয় বাঙালি কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম।তিনি ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার, চিত্রনাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। তিনি বলে গণ্য করা হয়। বাংলা কথাসাহিত্যে তিনি সংলাপপ্রধান নতুন শৈলীর জনক। অন্য দিকে তিনি আধুনিক বাংলা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর পথিকৃৎ। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসাবেও তিনি সমাদৃত। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা তিন শতাধিক। তার বেশ কিছু গ্রন্থ পৃথিবীর নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে, বেশ কিছু গ্রন্থ স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভুক্ত। মিসির আলি এবং হিমু তার সৃষ্ট অন্যতম দুটি জনপ্রিয় চরিত্র।
বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের সভাপতি মিশুক সেলিমকে আহ্বায়ক ও ছড়াকার মনজুর কাদেরকে সদস্য সচিব করে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির তত্ত্বাবধায়নে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত উক্ত সম্মেলনে প্রচন্ড বৈরী আবহাওয়াকে উপেক্ষা করে হিমুময় হয়ে উঠেছিল ১৩১ পাবলিক স্কুল প্রাঙ্গন। লেখক, সাংবাদিক, সম্পাদক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, প্রকাশক, পাঠক, পৃষ্ঠপোষক ও বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থীর সমাবেশে এ সম্মেলন ছিল মুখরিত। হুমায়ূন ভক্তসকলের উপস্থিতি ছিল সন্তোষজনক।
উত্তর আমেরিকায় বাংলা সংস্কৃতি লালন ও বিকাশে দীর্ঘদিন যাবত কর্মরত ‘শোটাইম মিউজিক’ এর উদ্যোগে প্রবাসে বসবাসরত কবি ও লেখকদের প্রকাশিত বই সমূহ প্রদর্শন করা হয়েছে উক্ত অনুষ্ঠানে। বই বিনিময়, প্রদর্শন ও বিক্রয় অনুষ্ঠান হুমায়ূন ভক্তসকল উপভোগ করেছেন। অনুষ্ঠানে ছিল চিত্রাঙ্কন, গানে গানে হুমায়ুন, মুক্ত আলোচনা: লেখকের ভাবনায় হুমায়ুন, হুমায়ুন সাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বদেশ প্রেম আবৃত্তি, আমার আছে জল,হুমায়ুন স্মৃতিচারণ এবং গল্পে গল্পে হুমায়ুন।
এ আয়োজনে নৃত্যের মূর্চ্ছণায় দর্শকদের মন ভরিয়ে দিযেছে নৃত্যাঞ্জলি শিল্পী গোষ্ঠি।সঙ্গীত পরিবেশন করেন জনপ্রিয় শিল্পী এস আই টুটুল এবং সেলিম চৌধুরী, সেলিম ইব্রাহীমসহ অনেকে। সমবেত সংগীত পরিচালনায় ছিলেন-চন্দন চৌধুরী। এতে অংশ নেন হুমায়ুন ভক্ত সকলে।
চিত্রাঙ্কন পরিচালনায় ফারজিন রাকীবা ও আবু সাঈদ রতন, সহযোগিতায় ছিলেন ড. হাফসা সিদ্দীকা, আলমা ফেরদৌসী লিয়া, খালেদ সরফুদ্দীন, সুমন শামসুদ্দীন ও
শিবলী সাদিক। মুক্ত আলোচনা: লেখকের ভাবনায় হুমায়ুন
পরিচালনায় ছিলেন রওশন হাসান ও শারমিন রেজা ইভা। অংশগ্রহণে প্রবাসে বসবাসরত কবি ও লেখকবৃন্দ, হুমায়ুন সাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বদেশ প্রেম
পরিচালনায়-মোশাররফ হোসাইন অংশগ্রহনে: বেলাল বেগ, অধ্যাপিকা হোসনে আরা, তমিজউদ্দীন লোদী,ফকির ইলিয়াস, ফাহিম রেজা নূর ও ড. মহসিন আলী।
'আমার আছে জল' পরিচালনায় ছিলেন জি এইচ আরজু ও সাবিনা নিরু কবি তমিজউদ্দিন লোদী, শামস আল মমিন, সোনিয়া কাদের, আনোয়ার সেলিম, লায়লা ফারজানা
কবিতা আবৃত্তি করেন আনোয়ারুল লাভলু, নজরুল কবির, নাশ নাসরিন, আহসান হাবিব, পিংকি চৌধুরী ও নীলুফার যারীন ও সিনহা মনসুর
হুমায়ুন আহমেদের রচনা নিয়ে স্মৃতিচারণ: পরিচালনায় ছিলেন-ছন্দা সুলতান, অংশগ্রহনে: আবু রায়হান, রওশন হাসান, এ বি এম সালেহ উদ্দিন।
নৃত্যাঞ্জলি পরিচালনায় ছিলেন চন্দ্রা ব্যানার্জী ও তার দল। 'গল্পে গল্পে হুমায়ুন' পরিচালনায় মনজুর কাদের ও শিশুরা
হুমায়ুন স্মৃতিচারণ: পরিচালনায়-এ বি এম সালেহ উদ্দিন, অংশগ্রহনে: বেলাল বেগ, শারমিন রেজা ইভা, শামীম শাহেদ। আগামী ২০১৩ সালের জুনের ৩-৪ তারিখ দু'দিনব্যাপী আরো বর্ধিত কলেবরে হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষনা করেন আয়োজকবৃন্দ।
উল্লেখ্য, এবারের হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিলো কথা সাহিত্যিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, উদ্বোধক ছড়াকার ও লেখক লুৎফর রহমান রিটন, বিশেষ অতিথি লেখক ও প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম এবং আয়োজনের প্রধান সমন্বয়কারী মেহের আফরোজ শাওন। আয়োজকদের পক্ষ থেকে আগেই বলা হয়েছে নানা কারনে এবারের পূর্বঘোষিত অতিথিরা কেউই উপস্থিত থাকতে পারছেন না।