২২ ডিসেম্বর ২০২৪, রবিবার, ০৩:১৩:২৬ অপরাহ্ন


বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ১ লাখ শিক্ষক পদ শূন্য, তথ্য যাচাই-বাছাইয়ে তিন মাস পার
অনলাইন ডেস্ক :
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-১২-২০২২
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ১ লাখ শিক্ষক পদ শূন্য, তথ্য যাচাই-বাছাইয়ে তিন মাস পার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ১ লাখ শিক্ষক পদ শূন্য, তথ্য যাচাই-বাছাইয়ে তিন মাস পার


দেশের বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় এক লাখ শিক্ষকের পদ শূন্য আছে। চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এসব পদে নিয়োগ দেওয়ার কথা। সে লক্ষ্যে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শূন্যপদের চাহিদা নেওয়া হয়েছে।

কিন্তু এরপর ওই তথ্য যাচাইয়ে ৩ মাস পার করে ফেলেছে জাতীয় শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। কবে নাগাদ এই বিজ্ঞপ্তি দেওয়া যাবে তাও কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। ফলে শিক্ষকের অভাবে একদিকে ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়া বিঘ্নিত হচ্ছে। অন্যদিকে বয়স চলে যাচ্ছে অনেক প্রার্থীর।

এদিকে গণবিজ্ঞপ্তি দিতে দেরি হওয়ায় কয়েক মাস ধরে আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন নিয়োগপ্রত্যাশীরা। চাকরিপ্রত্যাশীদের একটি অংশ শাহবাগ ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন, অবস্থানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের সামনে দিনের পর দিন অনশন করতেও দেখা গেছে।

এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি আলাপকালে সংস্থাটির সচিব মো. ওবায়দুর রহমান বলেছিলেন, ‘এবার এমপিওভুক্ত আর এমপিওবিহীন প্রতিষ্ঠানে আলাদা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ করা হবে। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। আর নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শূন্যপদ পূরণে ডিসেম্বরের দিকে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরিকল্পনা আছে।’

পরে গত সপ্তাহে তিনি সাংবাদিকদের জানান, গণবিজ্ঞপ্তির ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাইয়ের চেয়েও বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে মামলা। এ অবস্থায় করণীয় নির্ধারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আদালতের দ্বারস্থও হতে হবে। সবকিছু ঠিকঠাকভাবে সম্পন্ন হলে ডিসেম্বরেই নিয়োগের গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সারা দেশে এমপিও এবং নন-এমপিও মিলিয়ে প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ অবসরে যাচ্ছে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত অবসর বোর্ডের হিসাবে গড়ে এই সংখ্যা সাড়ে ৮শ। সর্বশেষ ধাপে শিক্ষক নিয়োগের জন্য গত ২৬ জুন থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শূন্যপদের চাহিদা নেওয়া হয়।

এরপর এনটিআরসিএ ওই শূন্যপদের তথ্য যাচাই করে দেওয়ার জন্য তালিকা সরকারের তিনটি অধিদপ্তরে পাঠায়। এর মধ্যে স্কুল-কলেজের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি), মাদ্রাসার জন্য মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর আর কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে তাদের অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানের তথ্য যাচাই করে দিতে বলা হয়।

মাউশির উপপরিচালক এনামুল হক হাওলাদার শুক্রবার জানান, প্রায় এক মাস আগেই তারা তালিকা যাচাই শেষে এনআরসিএতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এনটিআরসিএ যে তালিকা দিয়ে তার সঙ্গে সামান্য গরমিলই পাওয়া গেছে। এটা কলেজ পর্যায়ে সর্বোচ্চ শূন্য দশমিক ৫ ভাগ হতে পারে।

জানা গেছে, মাদ্রাসা এবং কারিগরি অধিদপ্তর থেকেও যাচাই তালিকা এনটিআরসিএ পেয়েছে। এই তিন সংস্থা থেকে যাচাইয়ের পর প্রায় ৫ হাজার পদ কমেছে। কিন্তু আরও প্রায় ৪ হাজার শূন্যপদ আবার যুক্ত হয়েছে তালিকায়। সেই হিসাবে কেবল এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানই এনটিআরসিএর কাছে ৫৯ হাজার পদের চাহিদা দিয়েছে।

যদিও বাস্তবে এই সংখ্যা প্রায় ৭৩ হাজার বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। কেননা শহরাঞ্চলের বড় প্রতিষ্ঠানগুলো শূন্যপদ পূরণে এনটিআরসিএ’র দিকে তাকিয়ে না থেকে নিজেরাই নিয়োগ করে ফেলে।

অন্যদিকে নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানে শূন্য আছে প্রায় ২৭ হাজার পদ। শূন্য এক লাখ পদের মধ্যে ৮০ শতাংশই মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানের। বাকিটা কলেজ পর্যায়ে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, শূন্যপদ দিন দিন ভয়ানক আকার ধারণ করার পেছনে মোটা দাগে দুটি কারণ আছে। প্রায় ৭ বছর আগে এনটিআরসিএর মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র তিনটি নিয়োগ দিয়েছে সংস্থাটি।

অন্যদিকে এই তিন পরীক্ষায় আবার চাকরিরতরাই বেশি নিয়োগ পেয়েছে। তিন নিয়োগে সংস্থাটি ৮০ হাজারের কিছু বেশি নিয়োগ দিলেও অর্ধেকের বেশি পদে আগে থেকে কর্মরতরা নিয়োগ পেয়েছে। ফলে একদিকে শূন্যপদ সংখ্যা কমছে না, অন্যদিকে বেকারও কমছে না।

দৃষ্টান্তস্বরূপ সর্বশেষ তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রথম ধাপে যে ৩৪ হাজার নিয়োগ পান তাদের মধ্যে ইনডেক্সধারী বা আগে থেকে চাকরি করা প্রার্থীই ২১৮৭৩ জন বা দুই-তৃতীয়াংশ। বাকি ১৪৬৬৭ জন নতুন সুপারিশপ্রাপ্ত। এই হিসাবে একদিকে শূন্যপদ পূরণ হলেও অন্যদিকে প্রকারান্তরে তার বড় একটা অংশ খালি থেকে যায়।

এর আগে এনটিআরসিএর সচিব বলেন, এবারে যাচাই-বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার মূল কারণ হচ্ছে প্রার্থীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়া। আগের তিনটি বিজ্ঞপ্তির অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, তারা যেসব পদের চাহিদা দেয়, নানান কারণে সেগুলোর ত্রুটি ধরা পড়ে। ফলে নিয়োগপ্রাপ্তরা বিপাকে পড়ে যায়।

জানা গেছে, এনটিআরসিএর তালিকা ধরে অধিদপ্তরগুলো শূন্যপদের ক্ষেত্রে কয়েকটি দিক যাচাই করেছে। এগুলোর মধ্যে আছে জনবল কাঠামো অনুযায়ী শূন্য ঘোষিত পদে শিক্ষকের প্রাপ্যতা আছে কিনা। নারী শিক্ষক নিয়োগের কোটার সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিনা, পদটি সৃষ্ট না এমপিওভুক্ত, প্রতিষ্ঠানের বোর্ড স্বীকৃতি বা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনের অবস্থা ইত্যাদি। কেননা এসব দিক দেখে নিয়োগ দিলে প্রার্থীর আর এমপিও পেতে অসুবিধা হয় না।

এদিকে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে কিছু নতুন নিয়ম সংযোজন করতে চাচ্ছে এনটিআরসিএ। একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ ৪০টি আবেদন করতে পারবেন। আগে যত খুশি তত আবেদন করতে পারতেন। কেউ চাইলে একটি প্রতিষ্ঠানেও আবেদন করতে পারবেন। তবে এ ক্ষেত্রে তার মেধা অনুযায়ী অন্য প্রতিষ্ঠানের জন্যও বিবেচনা করা হবে। আর নিয়োগ দেওয়া হবে প্রাপ্ত নম্বর ও মেধাতালিকার ভিত্তিতে। কেবল সর্বোচ্চ ৩৫ বছর বয়সিরাই নিয়োগের জন্য বিবেচিত হবেন। এনসিটিআরসিএর সচিব এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় এনটিআরসিএ। তখন থেকে এখন পর্যন্ত ১৬টি পরীক্ষা নিয়েছে সংস্থাটি। এতে সাড়ে ৬ লাখের বেশি প্রার্থী নিবন্ধন সনদ পেয়েছেন। সরকার কয়েক বছর আগে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগে সর্বোচ্চ ৩৫ বছর বয়স নির্ধারণ করে দেয়। এই হিসাবে বর্তমানে বৈধ প্রার্থী আছেন ২ লাখ ৪৮ হাজার ৭৪৮ জন।

এদের মধ্যে অবশ্য অনেকে ইতোমধ্যে চাকরি পেয়ে গেছেন। ফলে এ ধরনের প্রার্থীর সংখ্যা সব মিলে ১ লাখ ৪০ হাজারের মতো বলে সূত্র জানিয়েছে। তাই এনটিআরসিএ অনুমতি পেলে সব শূন্যপদেই নিয়োগ দিতে পারে। সূত্র : যুগান্তর