দক্ষিণ কোরিয়ার মেয়েদের সম্পর্ক, বিয়ে, সন্তানের জন্ম দেওয়ার ইচ্ছা নেই। একা ও আত্মনির্ভর স্বাধীনভাবে বাঁচতেই চাইছেন তাঁরা। এদিকে জনসংখ্যাও কমছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। সন্তান নিতে উৎসাহ বাড়াতে তাই কোটি কোটি টাকা খরচ করছে সরকার। সন্তান জন্ম দিলে শিশুর দেখাশোনা, পড়াশোনার জন্য প্রতি মাসে সেই পরিবারকে মোটা অঙ্কের টাকা দেওয়ার ঘোষণাও করা হয়েছে।
অনেকদিন ধরে ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ইরানের মতো দেশ জনসংখ্যা বাড়াতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। সন্তান নিতে উৎসাহিত করার জন্য সরকারপক্ষের তরফে নানারকম পরিকল্পনাও করা হচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার ঘোষণা করেছে, সন্তানের জন্ম দিলে শিশু ১ বছর বয়স অবধি প্রতি মাসে প্রায় ৫৪০ ডলার করে দেওয়া হবে (ভারতীয় টাকায় ৪৪ হাজার টাকার বেশি)। কোরিয়ান প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইউল বলেছেন, ২০২৪ সালের মধ্যে এই টাকা আরও বাড়িয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে।
কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হল, টাকা দিলেও সন্তান নিতে চাইছেন না দক্ষিণ কোরিয়ার মেয়েরা। তিন সন্তানের মা কিম ইয়ে-ইয়ুন বলছেন, সন্তানের পড়াশোনা ও দেখভালের খরচ অনেক। বেসরকারি স্কুল বা কলেজে পড়াতে হলে যে পরিমাণ খরচ লাগে তা সরকার দেয় না। ফলে খরচ সামলানো সম্ভব হয় না। তাছাড়া সন্তানের মা হলে, চাকরির ক্ষেত্রেও অনেক বাধার মুখোমুখি হতে হয় মেয়েদের।
কিম জি-ইয়ে বলছেন, তিনি কখনওই সন্তান নিতে রাজি ছিলেন না। কারণ, একটি সন্তানকে বড় করে তুলতে অনেক সমস্যা পোহাতে হয় এই দেশে। পড়াশোনার খরচ তো আছেই, সন্তান হলে মাতৃত্বকালীন বা পিতৃত্বকালীন ছুটি দিতেও চায় না অনেক কোম্পানি। তাই সন্তান মানুষ করা এখানে ঝক্কির কাজ।
ইয়ান-ওয়া একজন ওয়েব কমিক আর্টিস্ট। তাঁর বক্তব্য, এখানে মেয়েরা স্বাধীন থাকতেই পছন্দ করছেন। কারণ গর্ভবতী হলে চাকরির ক্ষেত্রে তেমন সুযোগসুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক কোম্পানি দাবি করে, মা হলে সন্তানের দিকেই বেশি মনোযোগ থাকবে, কাজকর্মে ফাঁকি দেবে মেয়েরা। এমনও হয়েছে যে মা হওয়ার খবর শুনেই সেই মেয়ের জন্য প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে অফিসে যাতে সে চাকরি ছেড়ে দেয়। তাই সবদিক ভেবেই সন্তান নিতে চাইছেন না এই দেশের মেয়েরা।
চাকরি অবস্থায় কোন নারী গর্ভবতী হলে সে যাতে বৈষম্যের শিকার না হয়, সেজন্য দক্ষিণ কোরিয়ায় আইন রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটছে না। দক্ষিণ কোরিয়ার মেয়েদের বক্তব্য, সরকার যতদিন সবদিক থেকে সুবিধা না দেবে ততদিন এখানকার মেয়েরা একা ও স্বাধীনভাবে বাঁচতেই বেশি পছন্দ করবে।