২৯ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ১০:৩৮:৩৭ পূর্বাহ্ন


৮টি কালা পোয়া মাছে বদলে গেল জেলে পরিবারের ভাগ্য
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-১১-২০২২
৮টি কালা পোয়া মাছে বদলে গেল জেলে পরিবারের ভাগ্য ৮টি কালা পোয়া মাছে বদলে গেল জেলে পরিবারের ভাগ্য


কক্সবাজারের মহেশখালী দ্বীপের এক জেলে পারিবারে থাকা ছোট নৌকা নিয়ে বেরিয়ে বাড়ির পাশের সমুদ্র থেকে ধরে এনেছে প্রায় ৩০ লাখ টাকা মূল্যের ৮টি কালা পোয়া মাছ। এ নিয়ে ওই জেলে পরিবারে আনন্দের বন্যা বইছে।

মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি ইউনিয়নের জেলেপাড়া এলাকার মোহাম্মদ শহিদুল হক বহদ্দারের এফ বি মা-বাবার দোয়া নামের মাত্র ২৪ অশ্বশক্তির মাছ ধরার একটি ছোট নৌকা আছে। ওই নৌকাটি নিয়ে প্রতিদিনের মতো সোমবার (২৮ নভেম্বর) মাছ ধরতে বেরিয়ে পড়েছিলেন তার ছোট ভাই এ কে খান। সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন আরও দু-তিনজন স্থানীয় জেলেকে।

সোমবার সকালে কয়েকটি ছোট জাল ও নৌকা নিয়ে বের হয়ে পাশের সমুদ্রের কুয়ারদ্বার নামক পয়েন্টে সব কটি জাল ফেলেন তারা। জাল ফেলার কয়েক ঘণ্টা পর দুপুরের দিকে একে একে জাল তোলা হচ্ছিল। কিন্তু দু-একটি জাল তোলার পর জেলেরা হতাশ হয়ে পড়েন। কোনো জালেই মাছ পড়েনি তাদের। এ অবস্থায় শেষ দুপুরের দিকে তুলতে যাচ্ছিলেন সবশেষ জালটি। টেনে টেনে নৌকায় জাল তোলার মুহূর্তেই জেলেদের চোখ কপালে ওঠার মতো ঘটনা ঘটে। জাল টানার সঙ্গে সঙ্গে একে একে উঠে আসে আস্ত বড়সব মূল্যবান পোয়া মাছ। বাজারে যার অর্থমূল্য অনেক বেশি।

একে একে আটটি বিশালাকৃতির পোয়া মাছ নৌকায় তুলে দিনের নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বাড়ি ফেরেন তারা। ছোট ওই নৌকাটি চালাচ্ছিলেন স্থানীয় আব্দুল মজিদ মাঝি। সবার চোখে-মুখে হাসির ঝিলিক। ঘাটে নৌকা বেঁধে জেলেপাড়ায় এসে পৌঁছতেই বড় মাছ ধরে আনার খবরটি চাউর হয়ে যায়।

স্থানীয় পাইকাররাও হুমড়ি খেয়ে পড়েন এসব মাছ কিনতে। এরই মধ্যে চট্টগ্রামের মাছের আড়তের বড় ব্যবসায়ীদের কাছেও খবর চলে যায়। তারাও মোবাইল ফোনে কথা বলেন মাছ কেনার জন্য।

মাছের মালিক শহিদুল হক বহদ্দারের পক্ষ থেকে আটটি মাছের দাম হাঁকা হয়েছে ৩০ লাখ টাকা। স্থানীয় পাইকাররা কয়েকজন মিলে এই মাছ কিনতে চেয়েছেন ২৫ লাখ টাকায়। তবে শেষ পর্যন্ত স্থানীয়ভাবে এই মাছ বেচাকেনা হয়নি। চট্টগ্রামের পাইকাররা আরও বেশি মূল্যে মাছগুলো কিনতে রাজি হওয়ায় এসব মাছ বরফ দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। চট্টগ্রামে বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া হবে এসব মাছ।

মহেশখালীর মাতারবাড়ি ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জেলেপাড়া এলাকার মোহাম্মদ শহিদুল হক বহাদ্দারের ছোট ভাই এ কে খান  ও স্থানীয় বাসিন্দারা এসব তথ্য জানিয়েছেন।

এ কে খান জানান, তাদের জালে মূল্যবান মাছ ধরা পড়ার পর পরিবারের সবার মাঝে আনন্দের বন্যা বইছে। এর আগে কখনো তাদের নৌকায় এমন মাছ ধরা পড়েনি। শেষ বিকেলে তারা মাছভর্তি নৌকা নিয়ে উপকূলে ফেরেন।

প্রাণিবিজ্ঞানের ভাষায়, এসব মাছ সামুদ্রিক জো-ফিশ প্রজাতির। এটির বৈজ্ঞানিক নাম ‘প্রোটোনিবিয়া ডায়াক্যান্থাস’। এসব মাছের বায়ুথলি সাধারণত তিনটি কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। প্রথমত, সার্জিক্যাল কাজে ব্যবহার হয় সুতা হিসেবে। দ্বিতীয়ত, ভিটামিন-ই ক্যাপসুল তৈরি হয়, সবশেষ বিদেশে এসব মাছের বায়ুথলি দিয়ে অনেক দামি সুপ বানানো হয়।

মূলত বিদেশে উচ্চমূল্যে এই মাছ ও এর বায়ুথলি রফতানি হয় বলেই এর এত দাম। হংকংসহ দুনিয়ার বহু দেশেই এ মাছের বায়ুথলি আকারভেদে গ্রেড হিসেবে বিক্রি হয়। বঙ্গোপসাগরই এ মাছের অধিক মাত্রায় বিচরণ রয়েছে বলে জানা যায়।

কক্সবাজারসহ মহেশখালীর জেলেদের জালে প্রায়ই এ মাছ ধরা পড়ে। এর আগে গত বছর ২৫টি কালো পোয়া ধরা পড়েছিল মাতারবাড়ির সৈয়দ বহদ্দারের জালে।