জ্বালানি সংকটের সমাধানে কম খরচে প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্য থেকে তেল ও গ্যাস উৎপাদন পদ্ধতির উদ্ভাবন করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান। মাটি দিয়ে অনুঘটকের মাধ্যমে পাইরোলাইসিস পদ্ধতিতে জ্বালানি তেল ও গ্যাস উৎপন্ন করতে সফল হয়েছেন তিনি। পরিবেশ দূষণকারী বর্জ্য প্লাস্টিককে তরল জ্বালানিতে রূপান্তরের গবেষণা প্রকল্পের অংশ হিসেবে গবেষণায় তিনি এ উদ্ভাবন করেন।
‘ক্যাটালাইটিক পাইরোলাইসিস অব সিঙ্গেল ইউজ ওয়াস্ট পলিইথিলিন ফর দ্য প্রোডাকশন অব লিকুইড হাইড্রোকার্বন ইউজিং মডেফায়েড বেনটোনাইট ক্যাটালিস্ট’ শিরোনামের তার গবেষণাটি ‘ইউরোপিয়ান জার্নাল অব ইনঅরগানিক কেমিস্ট্রি, হোয়াইলি (ইইউআরজেআইসি)’ নামের আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এ গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল একক ব্যবহারের বর্জ্য পলিথিনকে জ্বালানিতে রূপান্তর করে পরিবেশের সুরক্ষা।
গবেষণা প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক ড. রহমান জানান, ক্যাটালিস্ট অনুঘটকের মাধ্যমে পাইরোলাইসিস পদ্ধতিতে প্লাস্টিক ও পলিথিন থেকে জ্বালানি তেল ও গ্যাস উৎপন্ন হয়। প্রথমে মাটি থেকে সিলিকা অ্যালুমিনা ভেঙে ক্যাটালিস্ট তৈরি করা হয়েছে। সেই ক্যাটালিস্ট দিয়ে প্লাস্টিককে ভেঙে ডিজেল, পেট্রোল, কেরোসিন জাতীয় জ্বালানি তেল তৈরি করেছি। এসব জ্বালানি তেল দিয়ে ছোট, মাঝারিসহ নৌকার ইঞ্জিনও চালনা করা সম্ভব। এ ছাড়া জেনারেটরের মাধ্যমে এসব জ্বালানি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনও সম্ভব।
তিনি বলেন, ‘আমাদের চারদিকে প্রচুর প্লাস্টিক বর্জ্য পড়ে আছে। এসব পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর, এমনকি মাটির পুষ্টিগুণ নষ্ট করছে। এসব প্লাস্টিক ও পলিথিন ধুয়ে পরিষ্কার করে জ্বালানি উৎপাদনের উপযোগী করা সম্ভব। মাটি ও প্লাস্টিকÑ দুটি উপাদানই সহজলভ্য। এতে করে খুব অল্প খরচেই সরকার চাইলে জ্বালানি সংকটের এই সময়ে খুব সহজেই তেল উৎপাদন করতে পারবে।’
এই গবেষক জানান, উৎপন্ন জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেতে পারে। সরকার এটি নিয়ে আরও বিস্তৃত গবেষণার জন্য ফান্ডের ব্যবস্থা করলে বৃহৎ আকারে উৎপাদনের জন্য একটি প্লাস্টিক রিসাইক্লিং প্ল্যান্ট স্থাপন করা সম্ভব। ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদী এবং অন্যান্য নদী, খাল থেকে প্লাস্টিক সংগ্রহ করে তা ডিজেল, পেট্রোল এবং কেরোসিনে রূপান্তরিত করা যাবে। সেই সঙ্গে পরিবেশের ওপর বর্জ্যরে প্রভাবও কমে যাবে।
আরেক গবেষক, একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. জয়ন্ত কুমার সাহা আমাদের সময়কে বলেন, আমরা গবেষণা ফাইন্ডিংসটিকে একটি শক্ত অবস্থানে নিয়ে আসতে পেরেছি। তবে এটাকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পর্যায়ে দাঁড় করাতে প্রয়োজন একটি পাইলট প্রজেক্ট। আরও উন্নত গবেষণা। বর্তমানে দেশে প্লাস্টিক বর্জ্যে পরিবেশ দূষণ যেমন বাড়ছে, তেমনি বৈশ্বিক জ্বালানি পরিস্থিতিও নাজুক। এ প্রকল্পের মাধমে দূষণ কাটিয়ে বর্জ্য প্লাস্টিককে জ্বালানিতে রূপান্তর করে এই সংকট মোকাবিলা সম্ভব।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে এই গবেষণা প্রকল্পে বিশ্ববিদ্যালয়টির রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. নাফীস আহমেদ, ড. জয়ন্ত কুমার সাহা এবং রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. সুব্রত চন্দ্র রায় সার্বিক সহযোগিতা করেছেন। গবেষণা সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন একই বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আরিফুল রহমান ও জুনায়েদ মাহমুদ শুভ।