২৯ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ১২:৩৬:৫৫ পূর্বাহ্ন


পুলিশ কনস্টেবলকে প্রকাশ্যে গণধোলাই
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-১১-২০২২
পুলিশ কনস্টেবলকে প্রকাশ্যে গণধোলাই পুলিশ কনস্টেবলকে প্রকাশ্যে গণধোলাই


ফরিদপুরের ভাঙ্গায় চাঁদা দাবির অভিযোগে এক পুলিশ সদস্যকে গণধোলাই দিয়েছেন স্থানীয়রা। পরে তাকে স্থানীয়রা থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন। ঘটনার পর থেকেই বিভিন্ন মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে, চলছে নানান সমালোচনার ঝড়।

সোমবার (১৪ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভাঙ্গা হাইওয়ে ইন্টারসেকশনের ফ্লাইওভারে এই ঘটনা ঘটে।

তবে পুলিশের ভাষ্য, ওই পুলিশ কনস্টেবলের নাম শিমুল। তিনি রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্সের (আরআরএফ) সদস্য। স্থানীয় দুই তরুণ-তরুণীকে প্রকাশ্যে অশালীন অবস্থায় দেখে তাদের ধমক দেওয়ার ফলে তিনি স্থানীয়দের গণধোলাইয়ের শিকার হন।

প্রত্যক্ষদর্শী, অটো-গাড়ির কেরানী সুরুজ জানান, ঘটনাস্থলের পাশে তিনি কাজ করছিলেন। তখন দূর থেকে চিৎকার শুনে গিয়ে দেখেন ফ্লাইওভারের ওপরে ২০/২৫ জন লোক মারপিট করছেন। সেখানে পৌঁছে শিমুলকে চিনতে পারেন এবং পরিচয়পত্র চাওয়া হলে কনস্টেবল পরিচয় দেন শিমুল। সেখান থেকে তাকে ভাঙ্গা ট্রাফিক পুলিশ বক্সে নেওয়া হয় এবং থানা পুলিশের এএসআই পরিতোষকে খবর দিয়ে তাকে ভাঙ্গা থানায় সোপর্দ করেন।

স্থানীয় অমিত নামের এক ব্যক্তি দাবি করেন, ‘আমি মাছের আড়তে কাজ করি। সকালে গোলচত্বরে ঘোরাফেরা করছিলাম, আমার বাড়িঘর কোথায় জানতে চায় শিমুল। আমি পরিচয় দিলে, সে আমার কাছে এক হাজার টাকা টাকা চায়। আমি টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় সে আমারে ধইরা শুধু-শুধু অনেকগুলো চড় মারে। আমি তার পা ধইরা বলছি, আমারে থানায় নিয়েন না। আমার চিৎকার শুনে একপর্যায়ে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসে এবং শিমুলকে মারধর করেন।’

ভ্যানচালক আলামিন দাবি করেন, তিনি সকালে তার ভ্যান নিয়ে মুনসুরাবাদ এলাকা থেকে ভাঙ্গায় ফিরছিলেন। পথিমধ্যে পুলিশ পরিচয় দিয়ে মহাসড়কে চলাচলরত কয়েকটি অটো গাড়ি থেকে টাকা আদায় করছেন শিমুল।

আরেক মাছ ব্যবসায়ী হৃদয় দাবি করেন, গত সাত মাস আগে পুলিশের পোশাক পরিহিত অবস্থায় শিমুল ও তার আরেক সহযোগী নওয়াপাড়া স্ট্যান্ড থেকে তার একটি মোটরসাইকেল ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। এতে অপরাধের বিষয়ে জানতে চাইলে শিমুল বলেন, ‘তোর গাড়ির কাগজপত্র নাই, তুই থানায় আয় তারপর তোর গাড়ি দেবো’। এরপর থানায় গিয়ে শিমুলকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। ওই ঘটনায় ভাঙ্গা থানায় একটি জিডি করেন এই মাছ ব্যবসায়ী।

অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য শিমুল দাবি করেন, তিনি নরসিংদী জেলার পলাশ থানার বাসিন্দা। তার শ্বশুরবাড়ি ভাঙ্গার হামিরদী গ্রামে। তিনি ভাঙ্গা থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়ে গাড়ির অপেক্ষায় ভাঙ্গা ইন্টারসেকশনে অপেক্ষা করছিলেন- এসময় স্থানীয় কিছু লোকের সঙ্গে তার ভুল বোঝাবুঝি হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, পুলিশ পরিচয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভাঙ্গায় ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। ভাঙ্গা গোলচত্বর দক্ষিণ বঙ্গের অন্যতম প্রবেশদ্বার। প্রায়ই ভাঙ্গার ইন্টারসেকশনসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক এলাকায় ছিনতাইসহ ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। এ ঘটনাগুলোর বিষয়ে পুলিশ উদাসীন।

ভাঙ্গা থানার এসআই মারুফ জানান, শিমুল আরআরএফের একজন পুলিশ সদস্য। তবে তিনি সাময়িক বরখাস্ত রয়েছেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভাঙ্গা সার্কেল) হেলাল উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, শিমুল তার শ্বশুরবাড়ি থেকে ঢাকার উদ্দেশে ভাঙ্গা ইন্টারসেকশনে গাড়ির অপেক্ষায় ছিলেন। তখন স্থানীয় অমিত মালো ও তার বান্ধবীকে মহাসড়কের পাশে প্রকাশ্যে অশালীন অবস্থায় দেখতে পান। এর প্রতিবাদ করলে স্থানীয়দের রোষানলে পড়েন। খবর পেয়ে তাকে পুলিশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। এ বিষয়ে কোনও লিখিত অভিযোগ আসেনি। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।