১০ মে ২০২৪, শুক্রবার, ০৯:৫৪:০৪ অপরাহ্ন


রাজশাহী অঞ্চলে পুরোদমে আমন কাটা মাড়াই শুরু
মঈন উদ্দিন
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-১১-২০২২
রাজশাহী অঞ্চলে পুরোদমে আমন কাটা মাড়াই শুরু রাজশাহী অঞ্চলে পুরোদমে আমন কাটা মাড়াই শুরু


শস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত রাজশাহী অঞ্চলে পুরোদমে আমন ধান কাটা মাড়াই শুরু হয়েছে। কৃষকের ঘরে ঘরে চলছে হেমন্তের নবান্ন উৎসবের আমেজ। কৃষকেরা আমন ধান মাঠ থেকে কেটে বাড়ীর উঠানে নিয়ে আসছে। কৃষকদের কষ্ঠার্জীত সোনালী ফসলের ছোয়ায় ভরে উঠেছে বাড়ির আঙ্গিনা। এখন বাংলা মাস কার্তিক, অগ্রহায়নের সঙ্গে গা ঘেঁষাঘেঁষি। শিশিরের মতো নিরবে অবির্ভাব ষড়ঋতুর দেশে নবান্নের সুবার্তা নিয়ে আসে কার্তিক। ফসলের মাঠে সোনালী হাসির আভা, ছড়িয়ে পড়ে কার্তিকের শুরুতেই, থাকে মোলায়েম কুয়াশার ছাতিম আর শিউলির মৃদু মন্দ সৌরভ হিমেল ছোঁয়া। সকাল সন্ধ্যার হেমন্তের মিহি কুয়াশা।

চলতি মওসুমে প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও সার ঘাটতিসহ নানা প্রতিকূলতা কাটিয়ে রাজশাহীতে আমনের বাম্পার ফলনের প্রত্যাশা করছে সংশ্লিষ্টরা। রাজশাহীতে আমনের ভরা মৌসুমে এ বছর সারের ঘাটতির মুখে পড়েছিলো কৃষক। বিশেষ করে এমওপি এবং টিএসপি সারের ঘাটতি দেখা দিয়েছিলো। রাজশাহীতে গত জুলাই মাসে চাহিদার তুলনায় প্রায় ১৩৬ মেট্রিক টন এমওপি সারের ঘাটতি ছিল। আগস্টেও প্রায় ৮০০ মেট্রিক টনের মতো ঘাটতি ছিলো। আর এই ঘাটতির মধ্যে অসাধু সার ব্যবসায়ীদের কারসাজিও ছিলো। তবে সবকিছু উপেক্ষা করে কৌশলি হয়েই আবাদের যত্ন নিয়েছিলেন কৃষকরা। এতে আবাদকৃত জমির আশানুরুপ ফলনের কথাই বলছেন চাষীরা।

কৃষকরা বলছেন, এবছর আমন আবাদের শুরুতেই কৃষকরা ধাক্কা খেয়েছে। পানি ও সারের ঘাটতি ছিল, যেটার সুযোগ নিয়েছিলো অসাধু সিন্ডিকেট। এতে প্রান্তিক পর্যায়ে অনেক কৃষক সরকার নির্ধারিত দামে সার পাননি। বেশি দামে সার কিনতে হয়েছে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। তবে কৃষক যেটুকু জমিতে আবাদ করেছে সেটার পূর্ণ যত্ন নিয়েছে। রাসায়নিক সারের বদলে ছাই ও গোবর সার ব্যবহার করেছে। একারণে ফলনহানির বিষয়টি এখন পর্যন্ত হয়নি।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবছর রাজশাহীতে আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৮০ হাজার ৫০ হেক্টর। এখন পর্যন্ত আমনের আবাদ হয়েছে ৮০ হাজার ৮৩২ হেক্টর। যেখানে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লক্ষ ৭৯ হাজার ৩৭৫ মেট্রিক টন। আমন মৌসুমে যে আবাদ হয়েছে তার মধ্যে ১১২০ হেক্টর জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। যা মোট আবাদের ১ দশমিক ৩৯ শতাংশ। কর্তনকৃত ধানের ফলন হয়েছে ৩ হাজার ৫৩৭ মেট্রিক টন।

রাজশাহী তানোর উপজেলার জাতীয় পদকপ্রাপ্ত কৃষক নূর মোহাম্মদ জানান, ভরা মৌসুমে এবার রাসায়নিক সারের ঘাটতি ছিলো। ডিলারদের কাছে চাহিদা অনুযায়ী সার না পেয়ে হাট-বাজারের দোকান থেকে চড়া দামে সার কিনতে বাধ্য হয়েছেন তারা। কোনো সারই সরকার নির্ধারিত দামে তারা পাননি। এতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। তবে প্রথম দিকে ফলন হানির যে শঙ্কা ছিলো; সেটা নাই। এখন পর্যন্ত ভালো ফলন আছে।

তিনি জানান, তিনি এরইমধ্যে কিছু আমন ধান কেটেছেন। কিছু আধাপাকা এবং কিছু কর্তনযোগ্য অবস্থায় রয়েছে। ফলন নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট।

পবা উপজেলার কৃষক রমাজন আলী জানান, ধানের ফলন অনেক ভালো আছে। তবে যে খরচ হয়েছে তাতে লাভের আশা করা যায় না। কোনোমতে খরচটা হয়তো তুলতে পারবেন।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন জানান, কৃষি বিভাগ কৃষকদের পাশে সবসময় ছিলো। এরই ধারাবাহিকতায় এবারও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। ফলনও অনেক ভালো। বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়া ফলন হানির তেমন কোনো শঙ্কা নেই। তিনি আরও বলেন, সার নিয়ে কিছু কথা শোনা গিয়েছিলো। তবে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা প্রতিনিয়তই বিষয়টি মনিটরিং করেছেন।