২৫ নভেম্বর ২০২৪, সোমবার, ০৮:৪৪:০৭ পূর্বাহ্ন


২৭ বছর পরেও হল কাঁপাচ্ছে , দিলওয়ালে দুলহানিয়া
তামান্না হাবিব নিশু :
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-১০-২০২২
২৭ বছর পরেও হল কাঁপাচ্ছে , দিলওয়ালে দুলহানিয়া ২৭ বছর পরেও হল কাঁপাচ্ছে , দিলওয়ালে দুলহানিয়া


সত্তরের দশকের অ্যাংরি ইয়ং ম্যানের অ্যাকশন ফিল্মের ফর্মুলা ততদিনে পুরনো এবং একঘেয়ে হয়ে গেছে। আবার তখন যেই রোম্যান্টিক সিনেমাগুলো বলিউডে হচ্ছিল, সেগুলোও সবকটাই যেন ছিল একই ছাঁচে তৈরি। নতুন কিছুই আসছিল না। এমন সময় যশরাজ ফিল্মস নিয়ে এল একেবারে নতুন ঘরানার রোম্যান্টিক ছবি। জুটি নতুন না হলেও তাঁদের মধ্যে ছিল সতেজতা। ১৯৯৫ সালে ২০ অক্টোবর, আজকের দিনেই মুক্তি পেয়েছিল ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে। অভিনয়ে শাহরুখ খান কাজল অমরেশ পুরী প্রমুখ।

দেখতে দেখতে আজ সেই সিনেমা পার করে ফেলল দীর্ঘ ২৭ বছর। এটি এমন একটি ছবি, যা সেইসময় ক্রমশ ধুঁকতে থাকা বলিউডকে চাগিয়ে তুলেছিল। ভারতীয় সিনেমাকে পৌঁছে দিয়েছিল বিশ্বের আনাচ-কানাচে। হিন্দি সিনেমায় রোম্যান্সকে তুলে ধরেছিল একেবারে নতুন আঙ্গিকে। শাহরুখ-কাজলকে নিয়ে প্রথমবারেই ছবি পরিচালনায় নেমে আদিত্য চোপড়া পাল্টে দিয়েছিলেন ভারতীয় সিনেমার গতিপথ। তাই এই ছবিকে যদি বলিউডের নবপ্রজন্মের রোম্যান্সের পথিকৃৎ বলা হয়, খুব একটা ভুল হবে না।

শুধু তাই নয়, এই ছবির সঙ্গে আরও একটি রেকর্ড জুড়ে রয়েছে, যা হয়ত ভবিষ্যতে আর কোনও সিনেমার পক্ষেই ভাঙা সম্ভব নয়। ‘ডিডিএলজে’ ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে প্রেক্ষাগৃহে চলা একটি ছবি। ১৯৯৫ সালে মুক্তির সময় থেকে আজ অবধি, এই দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে মুম্বইয়ের আইকনিক সিনেমাহল ‘মারাঠা মন্দির’-এ চলছে ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া’। এখনও প্রতিদিন সকাল সাড়ে এগারোটায় শো-এ সেখানে চলে দেশের অন্যতম ব্লকবাস্টার এই ছবিটি। 

২০১৫ সালে ছবিমুক্তির ২০ বছরে থিয়েটার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল যে, সেই বছরেই শেষবারের মতো চালানো হবে ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া’। কিন্তু ঘোষণাই সার, এই শো বন্ধ করা যে একপ্রকার অসম্ভব, তা কিছুক্ষণের মধ্যেই পরিষ্কার হয়ে যায়। অগণিত সিনেমাপ্রেমী এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা শুরু করে ‘মারাঠা মন্দির’-এর সামনে জমায়েত করতে শুরু করেন। এমনকি ইন্টারনেটেও শুরু হয় প্রতিবাদ। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই নিজেদের সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেয় হল কর্তৃপক্ষ। প্রসঙ্গত বলে রাখা দরকার, করোনা পরিস্থিতির সময়টুকু ছাড়া এখনও অবধি একদিনও ‘মারাঠা মন্দির’-এ দিলওয়ালে দুলহানিয়া শো বন্ধ হয়নি। এবং এখনও শো চলাকালীন প্রেক্ষাগৃহ প্রায় হাউজফুল থাকে।

যদিও এখন অনেকেই এই ছবিটিকে ক্লিশে কিংবা রিগ্রেসিভ তকমা দিয়ে থাকেন। দিলওয়ালে দুলহানিয়া-তে পরিচালক বা কাহিনিকার যেহেতু মেয়েদের ইচ্ছা অপূর্ণ থাকার গল্প বলেছেন, অন্যদিকে ছবিতে সিমরনের মা’র স্বামীর কথা শুনে ত্যাগের গল্প ফুটে উঠেছে, আবার তেমনই এই সিনেমাতে মেয়েদের প্রায় বস্তু হিসাবে ট্রিট করা হয়েছে, তাই এমন অভিযোগ খুব একটা মিথ্যে নয়। কিন্তু সেই সমালোচকদের বোঝা প্রয়োজন, সিনেমাটা কোন সময়ে তৈরি হয়েছিল।

‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া’ মুক্তি পেয়েছিল ২৭ বছর আগে ১৯৯৫-এ। সুতরাং ছবির গল্প নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছিল কমপক্ষে আরও দু’বছর আগে। এবার সেইসময় দাঁড়িয়ে ভারতীয় দর্শকদের ধ্যানধারণা যেমনটা ছিল (আজও যে খুব একটা বদলেছে, তা নয়), তেমনভাবেই তৈরি হয়েছিল ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া’। আবার রাজ আর সিমরন যখন পালিয়ে না গিয়ে পরিবারের অনুমতি নিয়েই বিয়ে করতে চাইছে, এটা দেখে কিন্তু নতুন প্রজন্মের পাশাপাশি পুরনো প্রজন্ম অর্থাৎ বাড়ির গুরুজনরাও প্রচণ্ড খুশি হয়েছিলেন। ফলে ভারতীয় ছবির অনুরাগীরা, বিশেষ করে বলিউডপ্রেমীরা ভীষণভাবে ছবিটির সঙ্গে একাত্ম হতে পেরেছিলেন। আর এখানেই ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’র সার্থকতা। 

শুধু ভারতেই নয়, বিদেশে থাকা ভারতীয়দের মধ্যেও ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া’ ভীষণভাবে সমাদৃত হয়েছিল। আর এই সিনেমার পরই বিশ্বব্যাপী চাহিদা বেড়েছিল বলিউডের সিনেমার। এই ছবির পরেই শাহরুখের মাধ্যমে বলিউডকে নতুন করে চিনতে শুরু করে সিনেমাপ্রেমীরা। আর ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া’ দিয়ে নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করেন শাহরুখ নিজেও। কেরিয়ারের শুরু থেকে একের পর এক নেগেটিভ রোলে তিনি যে ক্রমশ টাইপকাস্ট হয়ে যাচ্ছিলেন, তা ভেঙে যায় এই ছবিতে এসেই। এখানেই প্রথমবার রোম্যান্টিক হিরো রূপে পর্দায় আসেন তিনি। আর পর্দার রোম্যান্সে তিনি যে বাকিদের অনায়াসে পিছনে ফেলে দিতে পারেন, তাও জলের মতো পরিষ্কার হয়ে যায়।