'দ্য সেভেন মুনস অব মালি আলমিদা' উপন্যাসের জন্য এবছর বুকার পুরস্কার লাভ করেছেন শ্রীলঙ্কার লেখক শেহান করুনাতিলকা। অতিপ্রাকৃত কাহিনী নিয়ে লেখা এই বিদ্রুপাত্মক উপন্যাস তাকে সাহিত্য জগতের সবচেয়ে বড় একটি সম্মাননা এনে দিয়েছে। এ উপন্যাসে এক 'মৃত আলোকচিত্রীর পরকালের মিশনের' গল্প বলেছেন তিনি।
ব্রিটেনের কুইন অব কনসোর্ট ক্যামিলা লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে শেহান করুণাতিলকার হাতে এ পুরস্কার তুলে দেন। পুরস্কার পেয়ে নিজেকে সম্মানিত ও গর্বিত মনে করছেন বলে জানান লেখক।
৫০ হাজার পাউন্ডের মর্যাদাপূর্ণ এই পুরস্কার, ইংরেজিতে যুক্তরাজ্যে প্রকাশিত একটি কথাসাহিত্যের জন্য এককভাবে দেওয়া হয়। সংক্ষিপ্ত তালিকায় থাকা অন্য পাঁচ লেখকদের প্রত্যেককে দেওয়া হবে আড়াই হাজার পাউন্ড করে। এবারের অনুষ্ঠানের তারকা অতিথি ছিলেন জনপ্রিয় গায়িকা ডুয়া লিপা।
শেহান করুণাতিলকার উপন্যাসটি শ্রীলঙ্কায় ১৯৯০ সালের গৃহযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে লেখা। একদিন ঘুম থেকে উঠে এক আলোকচিত্রী এবং জুয়ারি মালি আলমিদা দেখেন যে তারা মৃত। তবে মৃত্যুর পরেও মালির কাজ শেষ হয়নি। তিনি তার ভালোবাসার মানুষকে দেশের সংঘর্ষের নির্মম-হৃদয়বিদারক ছবি দেখাতে চান।
করুণাতিলকা জানান, ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধের অবসানের পর যখন কতজন বেসামরিক নাগরিক মারা গেল, এর পেছনে কে বা কারা দায়ী ছিল তা নিয়ে তুমুল বিতর্ক চলছিল, তখনই তিনি এমন একটি 'ভৌতিক গল্প লেখার সিদ্ধান্ত নেন যেখানে মৃত ব্যক্তিরা তাদের চিন্তাধারা ব্যক্ত করতে পারবে'।
প্রধান বিচারক নিল ম্যাকগ্রেগর করুনাতিলকার বইটিতে নিহিত 'দক্ষতা, সাহস, স্ফূর্তি'র প্রশংসা করেন এবং বইটিকে 'আফটারলাইফ নয়্যার' বলে উল্লেখ করেন, যা পাঠককে মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের চড়াই-উৎরাই সম্পর্কে ধারণা দেয়। তবে তিনি জানান, সংক্ষিপ্ত তালিকায় থাকা সবগুলো বইয়ের মূল উপজীব্য ছিল একটি প্রশ্ন- 'একজন ব্যক্তির জীবনের অর্থ কী?'
এদিকে বুকার পুরস্কার গ্রহণ করার পর করুণাতিলকা বলেন, 'শ্রীলঙ্কা বুঝতে পেরেছে যে এই দুর্নীতি, জাতি প্রলোভন এবং স্বজপোষণের ধারণাগুলো কাজ করেনি এবং কখনোই কাজ করবে না।'
তিনি আরও বলেন, "আমি আশা করবো এই বইয়ের মুদ্রিত সংস্করণ আগামী দশ বছর পরেও দেখতে পাবো, সেভেন মুনস থাকবে শ্রীলঙ্কার বইয়ের দোকানগুলোতে 'ফ্যান্টাসি' বিভাগের বইগুলোর পাশে। সেই সাথে আশা করছি, এ বইটিকে রাজনৈতিক বই ভেবে ভুল করবেন না কেউ।"
তবে শেহান করুনাতিলকা জানিয়েছেন, চলতি বছরের আগস্টে লেখক সালমান রুশদির উপর হামলার পর তিনি নিজেই তার বইয়ের কয়েকটি ছোটগল্প 'সেন্সর', অর্থাৎ কাটছাঁট করেছেন।
তিনি বলেন, "যখন সালমান রুশদির ওপর হামলা হয়, সেসময় আমার কিছু ছোটগল্প প্রকাশিত হওয়ার অপেক্ষায় ছিল। তখন আমার দুয়েকটা গল্প চোখে পড়লো যা আমার চোখে কোনো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার মতো বলে মনে হয়নি। কিন্তু আমার স্ত্রী বললো, আমাদের দুটি সন্তান আছে, তুমি দয়া করে এগুলো প্রকাশ কোরো না। এই গল্পগুলো ভালো না, এগুলো বাদ দিয়ে দাও।"
করুনাতিলকার ভাষ্যে, "দক্ষিণ এশিয়ার লেখকেরা যখনই কিছু লিখতে যাই, আমাদের মাথার ভেতর এই চিন্তাটাই ঘুরতে থাকে, বিশেষ করে যখন রাজনীতি ও ধর্ম নিয়ে লিখতে যাই।"
সূত্র: বিবিসি