২৮ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০২:৩৪:০৫ অপরাহ্ন


নারীকে প্রকাশ্যে গালিগালাজ করা সেই এসআই প্রত্যাহার
অনলাইন ডেস্ক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-১০-২০২২
নারীকে প্রকাশ্যে গালিগালাজ করা সেই এসআই প্রত্যাহার এসআই রতন


নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জ থানায় সেবাপ্রত্যাশী এক নারীর (৫৭) সঙ্গে প্রকাশ্যে অশোভন আচরণ করায় রবিবার (১৬ অক্টোবর) রাতে কোম্পানিগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. রতন মিয়াকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাকে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়। ভুক্তভোগী সেতারা বেগম কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার চরকাঁকড়া ইউনিয়নের আকবর হাজী বাড়ির মৃত আবুবক্কর ছিদ্দিকের স্ত্রী।

 শনিবার (১৫ অক্টোবর) সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে কোম্পানিগঞ্জ থানার প্রধান ফটকের সামনে মুঠোফোনের কথোপকথনে এ ঘটনা ঘটে। ওই পুলিশ কর্মকর্তা ওই নারীকে গালিগালাজ করেন। 

অভিযোগ রয়েছে, পরদিন সকালে ভুক্তভোগীর বাড়ি গিয়ে এ ঘটনা নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে বারণ করেন ও হুমকি-ধামকি দেন এসআই রতন। এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে এলে তাকে প্রত্যাহার করা হয়।

 ঘটনাটি সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ভুক্তভোগী নারী অভিযোগ করে বলেন, সাত মাস আগে তার ছেলে নুরনবীকে (২৭) মিথ্যা  তথ্য দিয়ে সৌদি নিয়ে চার লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন উপজেলার সিরাজপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মেহের আলী কামলা বাড়ির সৌদি প্রবাসী সাইফুল ইসলাম।  

 তিনি বলেন, কথা ছিল, সাইফুল সৌদি নিয়ে আমার ছেলেকে আবাসিক হোটেলে চাকরি দেবে। বেতন হবে এক হাজার ৮০০ রিয়াল। কিন্তু তাকে তিন মাস চাকরি না দিয়ে একটি ঘরে আটকে রাখে। সাত মাসেও সে আমার ছেলেকে কোনো চাকরি দিতে পারেনি। একপর্যায়ে আকামা করার জন্য পুনরায় এক হাজার রিয়াল নেয়। এখানেও প্রতারণা করে খুরুজ লাগানো আকামা দেয়। ফলে কেউ তাকে কাজ দেয়নি।

  তিনি আরো জানান, প্রতারণার অভিযোগ তুলে ১৫-২০ দিন আগে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। তাতে বিবাদী করা হয় সৌদি প্রবাসী সাইফুল ইসলামের মা-বাবা ও স্ত্রীকে। কোম্পানিগঞ্জ থানার ওসি এ অভিযোগের তদন্ত করার দায়িত্ব দেন এসআই রতনকে। সমস্যার সমাধান করতে রতন ভুক্তভোগীর পরিবারের কাছে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেন। পরবর্তীতে তাকে দুই হাজার টাকা দেওয়া হয়। বাকি টাকা পরে দেওয়ার কথা ছিল।  

 ভুক্তভোগী নারী বলেন, শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) প্রথম বৈঠকে থানায় বিবাদী পক্ষের কেউ আসেননি। দ্বিতীয় বৈঠকে বসার জন্য এসআই রতন বিবাদীদের বাড়িতে গিয়ে বৈঠকের বিষয়ে অবহিত করে আসেন। এরপর শনিবার (১৫ অক্টোবর) সন্ধ্যার দিকে এসআই রতন বাদীকে ফোন করে জানান, থানায় কোনো বৈঠক হবে না। বৈঠক হবে বসুরহাট বাজারের হক হোটেলে। অভিযোগকারী নারী রেস্তোরাঁয় বৈঠকে বসতে অস্বীকৃতি জানালে এসআই রতন ওই নারীকে মুঠোফোনে গালিগালাজ করেন। মুঠোফোনে ওই নারী থানায় বৈঠকের বিষয়ে এসআইকে জানালে এসআই তাকে থানার গেটে আসতে বলেন। তিনি সেখানে গেলে পুনরায় তিনি প্রকাশ্যে ওই নারীকে গালমন্দ করেন।  

 ভুক্তভোগী নারী বলেন, একজন মাকে তার ছেলের সামনে এভাবে কোনো পুলিশ কর্মকর্তা গালিগালাজ করতে পারেন, এটা সভ্য সমাজে কল্পনা করা যায় না। আমি আতঙ্কে দু'দিন কিছু খাইনি। এ ঘটনায় তিনি বাংলাদেশ পুলিশ প্রধানের কাছে এসআই রতনের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেন।   

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানিগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. রতন মিয়া বলেন, ওই নারী থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ করেননি। মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি বিষয়টি সমাধান করতে চেয়েছিলেন। তবে হোটেলে বৈঠকে না যাওয়া তিনি একটু উত্তেজিত হয়ে রাগের মাথায় ওই ব্যবহার করেছিলেন বলে দাবি করেন। তবে ওই নারীর বাড়িতে গিয়ে তাকে শাসানো এবং টাকা নেওয়ার অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।

 কোম্পানিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাদেকুর রহমান উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রতন মিয়ার পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত (ক্লোজড) করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।  

তিনি বলেন, ভুক্তভোগী নারী কোনো লিখিত অভিযোগ দেননি। তবু সম্পর্কের কারণে বিষয়টি সমাধানে এসআই রতন তৎপর ছিল। গালিগালাজের যে ভিডিওটি ফেসবুকে ছড়িয়েছে তা দুঃখজনক। গতকাল রাতেই তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।