হাসিনা চলে গেছেন কিন্তু তার প্রেতাত্মারা সব রয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, আমার সামনে এখন ৮ জনের নাম আছে, আমি নাম বলব না, এরা সবাই সচিব হিসেবে মন্ত্রণালয়ে অবস্থান করছে। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো এতো বিরোধিতার পরও মাত্র দুই-তিনদিন আগে সচিবালয়ে আরেকজন প্রাক্তন বাকশালী সচিবকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এখন বাকশালীদের প্রেতাত্মাকে বগলধাবা করে নিয়ে আপনারা কি সংস্কার করবেন, জাতির কাছে প্রশ্ন জাগে? আমার কাছেও প্রশ্ন জাগে? আমরা কি আওয়ামী লীগকে আবার ফিরিয়ে আনার রাস্তা করে দিচ্ছি?
গতকাল রোববার ) নয়াপল্টনে আনন্দ কমিউনিটি সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির নেতাদের মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা আব্বাস বলেন, আজকে আওয়ামী লীগের দোসরদেরকে মন্ত্রণালয়ে রেখে, এই যে সচিবালয়ে কয়েকদিন আগে আগুন লেগেছে, এর আগে চট্টগ্রাম সি-পোটে আগুন লেগেছিলো, আনসার বিদ্রোহ হলো, আরও কত কিছু হবে। এত কিছু হওয়ার সুযোগ কেনো আমরা দিচ্ছি এবং দেবো কেনো? আমাদের মনে রাখতে হবে, এই যেন আগুন (সচিবালয়), এই যে বিদ্রোহ (আনসার বিদ্রোহ) ঘটনা ইত্যাদি এসব বিষয়গুলো এমনিএমনি ঘটছে না, খামখা ঘটছে না। কেউ না কেউ উস্কানি দিচ্ছে এবং তারা সচিবালয়েই বসে আছেন, সবাইকে কিন্তু আমরা চিনি।
তিনি বলেন, নতুন যদি কোনো সংবিধান লিখতে হয়, তাও তো লিখতে হবে আগের অমুক সালের সংবিধান বাতিল করে এই সংবিধান জারি করা হলো। সুতরাং এই সংবিধানকে সংশোধন করা যাবে। আমি আগে একবার বলেছিলাম, একজন খুব আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে গেছে, যিনি আমার এক ছোট ভাই, আমার খুব প্রিয়, বাইরে থেকে দেশকে পরিচালনা করার চেষ্টা করছেন, ছাত্রদের পরিচালনা করার চেষ্টা করছেন। উনি খুব ক্ষিপ্ত হয়ে গিয়েছিলেন, আমি বলেছিলাম যে, সংবিধান একটা রাফ খাতা নয় যে, ছুঁড়ে ফেলে দিলাম। আমি বলব, আমাদের সন্তানদের কাছে যারা এই ঘোষণা দিয়েছে (সংবিধানের কবর দেয়া হবে), বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের কাছে অনুরোধ জানাব, কথাগুলো বুঝার চেষ্টা করবেন, ভুল বুঝবেন না, সেটা হলো এই, এধরনের কথাগুলো ফ্যাসিবাদের মুখ দিয়ে আসে, কবর দিয়ে দেবো, মেরে ফেলবো, কেটে ফেলবো, ছিঁড়ে ফেলবো- এই সমস্ত কথা ভালো কথা নয়। জাতি তাকিয়ে আছে আপনাদের দিকে, আমরাও তাকিয়ে আছি তোমাদের দিকে, তোমাদের মুখ থেকে এই ধরনের কথা আমরা আশা করি না।
বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, কিছু লোক বাইরে থেকে সরকার গঠন করে ফেলেছে, তারা আবার বলেও আমাদের সঙ্গে এদেশের কথাবার্তা হয় এবং তাদের কথাবার্তার যে ধাঁচ, আজকে আমাদের ছাত্রদের কথাবার্তার যে ধাঁচ, একরকম। আমার প্রশ্ন যে, একাত্তর সালে জাতি কি করলো? আমরা কি অন্যায় করেছিলাম? আমি জানি একটা পক্ষ বলবে যে, হ্যাঁ ওইদিন পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন করে অন্যায় করেছেন, বলতে পারেন। কিন্তু আমরা কি যুদ্ধ করে অন্যায় করেছিলাম, দেশকে স্বাধীন করে কি অন্যায় করেছিলাম?
২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে ব্র্যান্ডিং না করার জন্য আহ্বান জানিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, অহংকার আল্লাহতালা পছন্দ করেন না। যিনি আজকে বক্তব্য দিয়েছেন আমি তাকে অনুরোধ জানাব, টেলিভিশনে ক্যামেরায় দেখেন কি বলেছেন। অহংকার আল্লাহতালা পছন্দ করে না। হাসিনা (শেখ হাসিনা) অহংকার করেছিলেন পতন হয়ে গেছে। হাসিনার পতন আমাদের কষ্টের অর্জন, এটাকে এরকম বালখিল্য কথা বলে জাতিকে বিভক্ত করবেন না, এটা আমার সর্বশেষ অনুরোধ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, সবাই বলছে আমরা নির্বাচন চাইছি। নির্বাচন দিলেই বিএনপি ক্ষমতায় চলে আসবে, দেশবাসী রাজনৈতিক দল এটা ভাবে। কিন্তু আমরা (বিএনপি) এটা ভাবি না। আমরা ভাবি নির্বাচন দেশের মানুষের অধিকার। এই অধিকারের জন্য বিএনপি ১৭ বছর আন্দোলন করেছে। নিজের জীবনে অর্ধেক সময় জেলখানায় কিংবা পলাতক জীবন কাটিয়েছে, আমি কিংবা আমরা বয়সী যারা আছেন।
বিএনপির বিগত ১৭ বছরের আন্দোলন কি একেবারেই কাজে লাগেনি, সেই প্রশ্ন রাখেন মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, যদি ধরে নেন নির্বাচন দিলেই বিএনপি ক্ষমতায় যাবে, তাহলে এটা কেন ভাবেন না, বিএনপি অত্যন্ত জনপ্রিয় দল। নির্বাচনে যাওয়ার মতো জনপ্রিয়তা আছে। তাহলে আপনাদের ভয় কেন, জনপ্রিয় একটা দল ক্ষমতায় গেলে অসুবিধা কি? কিংবা আমরা তো বলছি না, বিএনপি ক্ষমতায় যাবে। যারা ভাবেব তাদের উদ্দেশ্য বলছি- বিএনপি কখনও ক্ষমতায় যাওয়ার কথা বলেনি। বিএনপি শুধু নির্বাচন চায়, ভোটাধিকার চায়।
দক্ষিণের আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনুর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, নির্বাহী কমিটি সদস্য কাজী আবুল বাশার, মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক, সদস্য সচিব মোস্তফা জামান, চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত ফটোগ্রাফার নুরুদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ সভাপতি বাছির জামাল, সাংবাদিক কামরুজ্জামান রাজিব, মহসিন হোসেন, নাজিয়া আফরিন,আহমেদ সালেহীন, রেজা করীম, বাবুল তালুকদার, মো. মহসিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।