২৬ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ০৯:৪০:৪০ অপরাহ্ন


জটিলতা কাটলেই চলবে ঢাকা-নিউ ইয়র্ক বিমান: প্রধানমন্ত্রী
ইমা এলিস, নিউ ইয়র্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-০৯-২০২২
জটিলতা কাটলেই চলবে ঢাকা-নিউ ইয়র্ক বিমান: প্রধানমন্ত্রী জটিলতা কাটলেই চলবে ঢাকা-নিউ ইয়র্ক বিমান: প্রধানমন্ত্রী


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন ঢাকা-নিউ ইয়র্ক বিমান চলাচলের প্রক্রিয়া এখন চলছে। তবা কবে নাগাদ ঢাকা-নিউ ইয়র্ক বিমান পুনরায় কবে চালু করা সম্ভব হাবে তা এখনও সঠিকভাবে বলা যাচ্ছেন না। বিমান চলাচলের দীর্ঘ মেয়াদী প্রক্রিয়া এখন চলছে। নিউ ইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দর সেসকল শর্ত দিয়েছে আমরা এখনো পূরণ করতে পারিনি। জাতিসংঘের ৭৭তম অধিবেশনে যোগদান শেষে শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকালে নিউইয়র্কস্থ জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন নিউ ইয়র্ক ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় প্রবাসীরা চাইলেই কানাডা হয়ে বিমানে বাংলাদেশ যেতে পারেন। তিনি এ ব্যাপারে উদাহরণ দিয়ে বলেন আপনারা তো নিউ ইয়র্কে এসেই বিমানে ওঠেন, তাহলে কানাডা থেকে উঠলে ক্ষতি কি? কানাডা তো বেশি দূরে নয় মাত্র এক ঘন্টার যাত্রা। তাই তিনি বিমানপ্রেমীদের কানাডা হয়ে বাংলাদেশ ভ্রমণের পরামর্শ দেন।    

অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যারা নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চেয়েছিলেন তারা কারা? আওয়ামী লীগ সব সময় দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছে। আওয়ামী লীগ সর্বদা জনগণের ভোটেই ক্ষমতায় আসে।‘আওয়ামী লীগ কখনো কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেনি বরং আওয়ামী লীগ সব সময় জনগণের ভোটেই ক্ষমতায় আসে।’

শেখ হাসিনা স্পষ্টভাবে নিশ্চিত করেছেন যে, জনগণ নির্বাচনে অবাধে তাদের ভোট দেবে এবং তিনি বিএনপিকে আশ্বস্ত করেছেন যে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।

‘আমি মনে করি, তারা (বিএনপি) সত্যিই চিন্তিত যে একটি স্বচ্ছ নির্বাচন হবে। কারণ, তারা ভোট কারচুপি এবং ভোটার তালিকায় ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার রাখার সুযোগ পাচ্ছে না। অন্যথায় উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই,’ উল্লেখ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, যারা জনগণের ভোট পেয়ে ক্ষমতায় আসেননি, নির্বাচন নিয়ে জনগণের প্রশ্নে এত গুরুত্ব দেওয়ার কী আছে তিনি জানেন না। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে জনগণ নির্বিঘ্নে ভোট দেবে, ২০০৯, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন এমন পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি, এটা তাদের দলের সিদ্ধান্ত।

তিনি আরও বলেন, ‘তারা জানে যে, সঠিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের ক্ষমতায় আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। তারা হত্যা, অভ্যুত্থান ও ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় আসতে অভ্যস্ত। এটাই বাস্তবতা।’

প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছে। ‘যদি কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণের যোগ্যতা হারায় তাহলে কার কি করার আছে’ যোগ করেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সরকার দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়াকে সঠিক পথে এনেছে, যা সামরিক শাসন ও বিএনপি-জামায়াতের আমলে লাইনচ্যুত হয়েছিল বলে দাবি করেন শেখ হাসিনা।

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইভিএম একটি আধুনিক পদ্ধতি এবং বিশ্বের অনেক দেশেই এটি ব্যবহৃত হয়।

তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি যেখানে ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছে, সেখানে দ্রুত নির্বাচনের ফলাফল পাওয়া যায় এবং মানুষ স্বাধীনভাবে তাদের ভোট দিতে পারে।’

শেখ হাসিনা অবশ্য বলেছেন, এই ইভিএমের বিরুদ্ধে কিছু লোক আছে এটা ঠিক। আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হওয়ার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।

দেশে প্রবাসীদের বিনিয়োগ সংক্রান্ত অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রবাসীরা যাতে দেশে বিনিয়োগ করতে পারেন, সেজন্য বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, সরকার দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের জন্য ১শ’টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রবাসীদের মধ্যে যাদের এনআইডি নেই তারা পাসপোর্ট দিয়ে ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবেন। সেই ব্যবস্থা ইতোমধ্যে করা হয়েছে।

‘আপনি এই ইউএনজিএ থেকে কী নিয়ে দেশে ফিরছেন'-এমন এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘বন্ধুত্ব, আমি বাংলাদেশের জন্য বন্ধুত্ব নিয়ে দেশে ফিরছি এবং বাংলাদেশ যে উন্নয়নের বিস্ময় সে কথাটাই সবাই বলার চেষ্টা করেছে।’

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আমরা শান্তি চাই, আমি যুদ্ধ চাই না, সংঘর্ষ চাই না। আমি মনে করি, সবচেয়ে বড় কথা আমি এই বার্তাটি সবার কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি এবং সবাই বাংলাদেশ এবং আমাদের ভূমিকার প্রশংসা করেছে।

তিনি নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ দূতাবাসের ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমাদের দূতাবাসের ভবন তো আছেই। দূতাবাসের নিজস্ব ভবন কেনা ও তৈরির কাজ অত্যন্ত ব্যবহুল। তাই এ বিষয়টি ভেবে দেখা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের ৭৭তম অধিবেশনে যোগদানের অভিজ্ঞতা প্রসেঙ্গে বলেন, এবারের জাতিসংঘের অধিবেশনে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ সব সভায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সক্রিয় অংশগ্রহণ বহুপক্ষীয় ফোরামে বাংলাদেশের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্নিষ্ট বিষয়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রকে বিস্তৃত করবে বলে তিনি আশাবাদী। শনিবার নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের হাই-লেভেল উইক চলাকালে তিনি মোট ৮টি উচ্চপর্যায়ের সভা ও সাইড ইভেন্টে অংশ নেন। এ ছাড়া রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ১২টি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।

জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের কারণে সৃষ্ট খাদ্য ও জ্বালানি সংকট এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তির জন্য অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে অধিক পারস্পরিক সংহতি প্রদর্শন করা প্রয়োজন। এসব সংকটের কারণে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সংকট ও বিরোধ নিষ্পত্তি করার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাই। সংকট মোকাবিলায় জাতিসংঘকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করি।’

রোহিঙ্গা ইস্যুতে শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমারে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও চলমান সংঘাত বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনকে দুরূহ করে তুলেছে। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করতে জাতিসংঘকে কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমন্ত্রণে একটি রিসেপশনে অংশগ্রহণ করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টকে তিনি বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, গত ২০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ৭৭তম অধিবেশনের সভাপতি সাবা করোসির আমন্ত্রণে বিশ্বের নারী নেতাদের অংশগ্রহণে আয়োজিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে তিনি বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে নারীদের অবদানের কথা তুলে ধরেছেন। এ ছাড়া লিঙ্গসমতা ও নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে অবহিত করেন তিনি।

২১ সেপ্টেম্বর তিনি গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে একটি উচ্চপর্যায়ের সভায় অংশগ্রহণ করেন। এ সভায় জাতিসংঘ মহাসচিব, জার্মানির চ্যান্সেলর, সেনেগালের রাষ্ট্রপতি, বারবাডোসের প্রধানমন্ত্রী এবং ইন্দোনেশিয়া ও ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অংশগ্রহণ করেন।

একই দিন তিনি রোহিঙ্গা সমস্যা বিষয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের সাইড-ইভেন্টে অংশগ্রহণ করেন। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সৌদি আরব, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, গাম্বিয়া এবং বাংলাদেশ যৌথভাবে এই সভা আয়োজন করে। এ সভায় অন্যান্যের মধ্যে সৌদি আরব, তুরস্ক, গাম্বিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং যুক্তরাজ্যের উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী বক্তব্য দেন। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে তিনি ৫টি প্রস্তাব তুলে ধরেন।

একই দিন ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের একটি উচ্চপর্যায়ের গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। এ বৈঠকে তিনি তথ্যপ্রযুক্তি, নবায়নযোগ্য শক্তি, জাহাজ নির্মাণ, অটোমোবাইলস, ফার্মাসিউটিক্যালস, চিকিৎসা শিল্প, সামুদ্রিক শিল্প, ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, বেশ কয়েকটি হাই-টেকপার্কসহ বিদ্যমান অন্যান্য শিল্পে বিনিয়োগের জন্য মার্কিন ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকে আমন্ত্রণ জানান।

প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, শিক্ষা উপমন্ত্রীরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সভা এবং দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশগ্রহণ করেছেন।

সকালে নিউইয়র্কস্থ জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে সংবাদ সম্মেলন শেষে প্রধানমন্রী একযোগে নিউ ইয়র্কে পৃথকস্থানে দূ'টি এবং ওয়াশিংটন ডিসিসহ বেশ কয়েকটি ভার্চুয়াল নাগরিক সংবর্ধনায় যোগ দেন। আস্টোরিয়া ওয়ার্ল্ড ম্যানরের মিলনায়তনে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগ আয়োজিত মূল নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবাসীদের উদ্দ্যেশ্যে ভাষন দেন। তিনি প্রবাসী নেতাকর্মিদের উদ্দেশ্যে বলেন আপনারা নিজ নিজ এলাকার মার্কিন রাজনীতিবিদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রকৃত ধারনা দেন। আমরা যেভাবে দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করছি সে বিষয়গুলো তাদেরকে অবহিত করুন। আস্টোরিয়া ওয়ার্ল্ড ম্যানর মিলনায়তনের নাগরিক সংবর্ধনায় নেতৃত্ব দেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ। সেখানে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে আসা কয়েক শত নেতাকর্মি অংশ নেন। এছাড়াও কুইন্স প্যালেসের মিলনায়তনেও অনুরুপ একটি ভার্চুয়াল নাগরিক সংবর্ধনার আয়োজন করেন আওয়ামীলীগের নতুন কমিটির দাবিদার ও বিদ্রোহী বলে পরিচিত একটি গ্রুপ।