ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ঢামেক) মরদেহ নিয়ে চলছে রমরমা ব্যবসা। মৃত্যু সনদে পুলিশ কেস যেন আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। একদিকে স্বজন হারানোর যন্ত্রণা, অন্যদিকে মরদেহ বুঝে পেতে পদে পদে পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে।
স্বাভাবিক মৃত্যুতেও মরদেহ নিয়ে হাসপাতাল ছাড়তে অপেক্ষা করতে হয় ৪ থেকে ১২ ঘণ্টা। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ফাঁদ পেতেছে একাধিক চক্র। বিষয়টি স্বীকার করে মেডিকেল কর্তৃপক্ষ বলছে, পরে যেন আইনি জটিলতায় পড়তে না হয়, সে জন্যই এই পদক্ষেপ।
গ্রাম থেকে ঢাকায় আসা ওমর ফারুক নামে এক যুবকের বড় ভাই আবু তাহেরের মরদেহ পেতে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, মর্গ, থানা ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত তিনি। স্বাভাবিক মৃত্যু হলেও ডেথ সার্টিফিকেটে পুলিশ কেস উল্লেখ করায় ভোগান্তি শুরু হয় তার। আগের চিকিৎসাপত্রসহ পরীক্ষা-নিরীক্ষার সব কাগজ দেখালেও কোনো কাজ হয়নি।
ওমর ফারুক বুঝে উঠতে পারছিলেন না কী করবেন। শেষ পর্যন্ত পড়েন দালালচক্রের হাতে। ১৬ হাজার টাকায় হয় দফারফা। চার ঘণ্টা পর রাত ৮টায় ভাইয়ের মরদেহ বুঝে পান তিনি।
ওমর ফারুক বলেন, একটা লোক মারা গেছে, কীভাবে সহযোগিতা করবে তা নয়, এখানে শুধু ভোগান্তি।
রাজধানীর মধ্য বাড্ডার মৃত মাকসুদার স্বজনদের গল্পটাও একই রকম। এমনিতেই স্বজন হারানোর বেদনা অন্যদিকে মরদেহ বুঝে পেতে পুলিশ কেস হয়রানি। নিয়মের গ্যাঁড়াকলে পড়ে ভবিষ্যতে আইনি ঝামেলার ভয়ে গণমাধ্যমের সামনে কথা বলতেও যেন বিরক্ত।
যদিও একটু নজর দিলে হাসপাতালে এ রকম শত শত অভিযোগ মেলে।
আক্ষেপ প্রকাশ করে শহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের রোগী মারা গেছে, তারা টাকা ছাড়া কিছু বুঝে না। টাকা দিলে এখানে সব সমস্যার সমাধান হয়।
পুলিশ কেস উল্লেখ করা মরদেহ নিয়ে এমন অমানবিক ব্যবসায় মেতেছেন একাধিক চক্র। এর সঙ্গে জড়িত বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের চালক, হেলপার ও বহিরাগত কিছু দালাল। ওতপেতে থাকে হাসপাতালের আনাচে-কানাচে।
বিষয়টি স্বীকার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, আইন মেনে ও পরবর্তী ঝামেলা এড়াতেই নিতে হচ্ছে এমন পদক্ষেপ।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বলেন, চিকিৎসক ব্রোটেন ডেড ডিক্লেয়ার দেওয়াতেই তার কাজ এখানে শেষ। তারপরে এটিই আইনি প্রক্রিয়ায় চলে গেছে। এই আইনটা করা হয়েছে ভালোর জন্য। ভবিষ্যতে যাতে অন্য কোনো জটিলতা তৈরি না হয়। সূত্র: সময় টিভি