২৫ নভেম্বর ২০২৪, সোমবার, ০৫:৪৩:৩৮ অপরাহ্ন


স্পেনের গ্রামপ্রেমী এক শিক্ষকের কথা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৭-২০২২
স্পেনের গ্রামপ্রেমী এক শিক্ষকের কথা স্পেনের গ্রামপ্রেমী এক শিক্ষকের কথা


প্রায় সব দেশেই রুটিরুজির তাগিদে মানুষ শহরে ভিড় করছেন ৷ গ্রামের পৈতৃক ভিটে অবহেলিত থেকে যাচ্ছে৷ স্পেনের এক শিক্ষক নিজের লুপ্তপ্রায় গ্রামকে আবার চাঙ্গা করে তুলতে আন্তরিক উদ্যোগ নিচ্ছেন৷প্রায় সব দেশেই রুটিরুজির তাগিদে মানুষ শহরে ভিড় করছেন৷ গ্রামের পৈতৃক ভিটে অবহেলিত থেকে যাচ্ছে৷ স্পেনের এক শিক্ষক নিজের লুপ্তপ্রায় গ্রামকে আবার চাঙ্গা করে তুলতে আন্তরিক উদ্যোগ নিচ্ছেন৷

স্পেনের উত্তরে বিলবাও শহরের প্রায় একশ কিলোমিটার দূরে ছবির মতো সুন্দর এক গ্রাম পুয়েন্তেদেই৷ সেখানেই ইভান আলোনসোর বাসা৷ ২৮ বছর বয়সি এই শিক্ষক কর্মসূত্রে আর সেখানে না থাকলেও নিয়মিত ফিরে আসেন৷ গ্রামের প্রতি টান সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘আমার কাছে পুয়েন্তেদেই অনেক কিছু৷ আসলে সবটাই৷ আমার বাবা-মা এই গ্রামে জন্মেছেন, আমিও জন্মেছি৷

প্রত্যেক সপ্তাহান্তে এখানে আসি৷ প্রাণের টান খুবই বেশি এবং এমনটাই থাকবে৷''স্পেনের সবচেয়ে সুন্দর গ্রামগুলির তালিকায় পুয়েন্তেদেইয়ের নাম সবে অন্তর্গত হয়েছে৷ কিন্তু দ্বাদশ শতাব্দীর এই গ্রামের ভবিষ্যৎ নিয়ে ইভান আলোনসোর মনে দুশ্চিন্তা রয়েছে৷ সৌন্দর্য ও বিশেষ ঐতিহাসিক দ্রষ্টব্য সত্ত্বেও গ্রামটি ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে চলেছে৷ জনসংখ্যা ৫০-এরও কম হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷

ইভান আলোনসো জানান, ‘‘গত ৩০ বছরে গ্রামে বিশাল পরিবর্তন হয়েছে৷ আগে গ্রীষ্মে গ্রাম ভরে যেত৷ প্রতি সপ্তাহান্তে অনেক বন্ধু নিয়ে আমরা এখানে আসতাম৷ এখন অনেক কম লোক আসে৷ তবে পর্যটকদের কল্যাণে গ্রামে আবার জনসমাগম হচ্ছে৷''অনুরাগীর সংখ্যা আরও বাড়লে গ্রামের উপকার হবে৷ বহু বছর ধরে সেখানে কোনো স্কুল নেই৷ কোনো কমবয়সি পরিবারও সেখানে থাকে না৷ ইভান স্থানীয় গির্জার ঘণ্টা বাদক আন্তোনিয়ো সাইস-এর সঙ্গে দেখা করছেন৷ ৮১ বছর বয়সি এই মানুষটি আজীবন পুয়েন্তেদেই গ্রামেই বাস করেছেন 

স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আগের সঙ্গে আজকের এই গ্রামের কোনো মিল নেই৷ আগে এখানে চাষবাস, পশুপালন হতো৷ কিন্তু গত শতাব্দীর ষাট ও সত্তরের দশকে পরিস্থিতি বদলে গেলো৷ তখন চাষবাসের গুরুত্ব কমে গেল৷ এমন অবহেলার ফলে মানুষ শিল্পক্ষেত্রে কাজের সন্ধান করতে লাগলো৷ অবশ্যই বিলবাও শহরে অনেক বেশি শিল্প রয়েছে৷''পুয়েন্তেদেই গ্রামটিকে আবার তরুণ প্রজন্মের জন্য আকর্ষণীয় করে তুলতে ইভান আলোনসো অন্যদের সঙ্গে মিলে গ্রীষ্মে ‘লা কুকানিয়া' নামের এক উৎসব আয়োজন করেন ৷

তিনি বলেন, ‘‘অংশগ্রহণকারীরা গ্রাম ও বাইরে থেকে আসেন৷ এই খেলায় পাঁচ-ছয় মিটার উঁচু থাম থেকে একটি পতাকা ধরার চেষ্টা করতে হয়৷ সমস্যা হলো, সেই থামে তেল মাখানো থাকে৷ ফলে না পিছলে পতাকা ধরতে হলে খুব সাবধান থাকতে হয়৷''ইভান আলোনসো নিজের গ্রাম সম্পর্কে এখনো আশা ছাড়েন নি৷ নতুন স্বীকৃতিও গ্রামের বিকাশে বাড়তি সুযোগ বয়ে আনবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ তিনি মনে করেন, ‘‘বর্তমানে ৫০ জন মানুষ থাকলেও পুয়েন্তেদেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে না বলে আমার আশা৷ তাদের মধ্যে আমিও কিন্তু আছি৷ সারা বছর এখানে না থাকলেও গ্রামে আমার নাম নথিভুক্ত রয়েছে৷ আমার ধারণা, গ্রাম মোটেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে না কারণ শুধু সৌন্দর্য্য নয়, পুয়েন্তেদেইয়ে অনেক মানুষের শিকড় রয়েছে৷ তাঁরাও গ্রামের মৃত্যু চান না৷''লুপ্তপ্রায় এই সুন্দর গ্রামটি শুধু পর্যটকদের জন্যই আকর্ষণীয় হয়ে থাকতে চায় না ৷ ডিয়ানা পিনিয়েরোস/এসবি